শিল্পকর্মে ফর্মের নৃত্য

‘রেইন–৩’, শিল্পী: হামিদুজ্জামান খান
‘রেইন–৩’, শিল্পী: হামিদুজ্জামান খান

দ্বীপ গ্যালারির ছোট পরিসরে হামিদুজ্জামান খানের অর্ধশতাধিক শিল্পকর্মের মধ্যে চিত্র ছাড়াও একটি স্থাপনা শিল্প বা ইনস্টলেশন এবং কয়েকটি ভাস্কর্য রয়েছে। গ্যালারির পরিসর বিবেচনায় ছোট আকৃতির কাজ দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। তবে কাজের ভাব, আবেদন ও অস্তিত্বে রয়েছে বিশালত্ব—অসীমের ধারণা। ‘ফিলিং দ্য ভয়েড’ শিরোনামে একক এই প্রদর্শনীতে জলরং ও অ্যাক্রিলিক মাধ্যমের কয়েকটি সিরিজচিত্রে রয়েছে শিল্পীর দীর্ঘদিনের সাধনা ও গবেষণালব্ধ সৃজনশীল ভঙ্গি। এসব কাজে তাঁর অধ্যাত্মতত্ত্ব, আত্মজ্ঞান, আত্মদর্শন মূর্ত হয়েছে অনাকাঙ্ক্ষিত রূপ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে।

‘রেইন’ বা বৃষ্টি সিরিজচিত্রের কথাই ধরা যাক। বৃষ্টির কতই–না রং–রূপ—প্রকৃতিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, শুভ্রতার আলো ছড়ায়। হামিদুজ্জামানের চিত্রপট দেখলে মনে হয়, চালাঘর, মাঠ, জলাধার কিংবা মাটিতে চঞ্চল চরিত্রের বর্ষাধারা নূপুর পায়ে নৃত্য করছে। চিত্রজমিনে ছড়িয়ে পড়ছে জলধারার গতি, ছন্দ, রূপের সুভাস ও সুরতান। 

আবার ‘ফেইস’ বা মুখ সিরিজের কাজগুলোতে রেখা, রং ও ফর্মে আছে সরলীকরণ, সারল্যতার মধ্যেই যেন গভীর ধ্যানমগ্ন শিল্পী। কোনো কোনো মুখ শুধুই কালো রঙের আলোয় উজ্জ্বল, কোনো মুখ ক্যালিগ্রাফিক নকশাখচিত, অন্য পক্ষে কোনো মুখের আদল কালো রং মধ্যস্থ উজ্জ্বল আলোকিত রেখায় চিহ্নিত। কিছু কিছু কাজে রঙের লাবণ্য মাটির মতোই। অর্থাৎ রঙের নিজস্ব জ্যোতি বিলীন হয়ে চেনাজানা প্রকৃতির বাস্তব রং তৈরি হয়েছে রং মিশ্রণ কৌশলের বিশেষত্বে। আদিম, মায়াবী, জিজ্ঞাসু দৃষ্টির মুখগুলো ভাস্কর্যের ফর্মে বাঁধা। 

কৃৎকৌশলের দিক দিয়ে ‘সিকরিট গেইজ’ বা গোপন দৃষ্টি সিরিজচিত্র ‘ফেইস’ সিরিজের মতোই। এর ১ নম্বর চিত্রে ছড়িয়ে পড়া জলরং যে মুখের আদল তৈরি করেছে, তা অন্ধকার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদরূপের সঙ্গে তুলনীয়। ‘আনভেইলিং’ শিরোনামের ৮ ও ১০ নম্বর চিত্রে ল্যান্ডস্কেপ পরিপ্রেক্ষিত লক্ষণীয়। মহাজাগতিক বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অদেখা কোনো রূপ যেন শিল্পীর আত্মমগ্ন ধ্যানে অনিন্দ্য হয়ে উঠেছে। নৈসর্গিক এই রূপ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত শিল্পী রঙের পর রং দিয়েছেন প্রতিটি ক্যানভাসে। একই সঙ্গে আত্মমগ্ন প্রক্রিয়ায় ‘থার্ড আই’ সহযোগে জগতের বিভিন্ন ফর্মে সৌন্দর্যের সারসংক্ষেপও হামিদুজ্জামান উন্মোচন করেছেন নিজের শিল্পকর্মে। 

সমসাময়িক আধুনিক ধারার বয়োজ্যেষ্ঠ এই শিল্পী একের পর এক তাঁর শিল্পকর্মের সম্ভার প্রদর্শন করছেন জনসমক্ষে, বাংলাদেশের সমকালীন শিল্পচর্চায় অবশ্যই এটি বড় ঘটনা।

 ১১ তারিখে শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২৭ অক্টোবর।