পারলারে

আনোয়ারা সৈয়দ হক
আনোয়ারা সৈয়দ হক
৫ নভেম্বর কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হকের জন্মদিন। এ উপলক্ষে প্রকাশিত হলো তাঁর গল্প

এই পারলারটা অভিজাত একটি ফাইভস্টার হোটেলের। এখানে কাস্টমার কম। কারণ, যেকোনো সার্ভিসই আকাশচুম্বী দাম দিয়ে কিনতে হয়। তবে সার্ভিস যারা দেয়, তারা অত্যন্ত বিদগ্ধ, পারঙ্গম। 

স্বামীহারা রাশিদা একটা ঘোরের ভেতরে ছিলেন এত দিন। স্বামী মারা গেছেন মাত্র কয়েক সপ্তাহ। এখনো জামায়–কাপড়ে–বালিশে–বিছানায় তার শরীরের গন্ধ লেগে আছে। স্বামীর স্নেহের স্পর্শ এখনো তিনি অনুভব করেন এবং সেটা এমন জীবন্ত যে বিলাপে–ক্রন্দনে, হাহাকারে সারা রাত জেগে বসে থাকেন তিনি। স্বামীর ফটোগুলোর দিকে তাকিয়ে অনর্গল কথা বলেন। কত কথা। কত না–বলা কথা। স্বামীর অসুখের তোড়ের সময় যেসব কথা বলতে পারেননি বা বলতে মনে ছিল না, সেগুলো বলেন এখন। আর ফটোর স্বামী হাসিমুখে তাকিয়ে থাকেন রাশিদার দিকে।

বাইরে, মানুষের সামনে রাশিদা অতিশয় গম্ভীর। যা কান্নাকাটি করার ছিল, সবই যেন করা শেষ হয়েছে। কোনো কোনো আত্মীয় তাকে বলছেন, ‘রাশিদা, আর না। আরও বেশি বিলাপ করলে লোকে বিরক্ত হবে। লোকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। তুমি একাকী হয়ে যাবে। শোকের প্রবাহ মানুষের জীবনের জন্য নয়। কারণ এই প্রবাহ স্থবির। জীবন আনন্দের রাশিদা, জীবন বেগবান।’ 

আরেকজন সুহৃদ বললেন, ‘জীবন সামান্য একজন মানুষের শোকে থেমে থাকে না। দেখো, তোমার স্বামী মারা যাবার পরপরই হোলি আর্টিজান হলো, কত মানুষকে খুন করা হলো, কত ইয়ং ছেলেমেয়েকে মেরে ফেলল। তোমার অসুস্থ স্বামী তখন সিসিইউতে, অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন, এসব চোখে দেখে যাননি, সেটা ভালোই হয়েছে। কিন্তু আমরা যারা বেঁচে ছিলাম বা আছি, আমাদের সেসব দেখতে হয়েছে তাকিয়ে তাকিয়ে। এ ঘটনার পর সারা জাতি শোকে মূহ্যমান হয়েছিল কত দিন, সেখানে তোমার পরিণত বয়সের স্বামী পৃথিবী ছেড়েছেন—এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তা ছাড়া ভাই সাহেব কোনো কষ্ট অনুভব করেননি। ভোররাতে বুকে ব্যথা হলো, পরপরই অজ্ঞান হয়ে গেলেন, এরপরই সিসিইউতে। দেখো, সবকিছু কত পরিষ্কারভাবে হলো। এটা ছিল তার তিন নম্বর হার্ট অ্যাটাক। এইবার তো ভাই সাহেবের বাঁচার কথাই না!’ 

রাশিদা সবই বোঝেন। তার ছেলেমেয়েরাও এ রকম কথাই বলে। তারা বিদেশে থাকে—একজন আমেরিকায়, আরেকজন অস্ট্রেলিয়ায়। তবে বাবার মৃত্যুর আগে আগে দুজনই এসেছিল। ছেলে অবশ্য বাবার মৃত্যু দেখে যেতে পারেনি, তার ছুটি ছিল না। আর সিসিইউতে থাকা বাবা কবে মারা যাবেন, তারও ঠিক ছিল না। মেয়ে ছিল, কিন্তু তার স্বামী আসতে পারেনি। তবু সবকিছু খুব সুচারু ও পরিচ্ছন্নভাবে সারা হয়েছে। এখন তো প্রায় রোজ ছেলেমেয়েরা তার সঙ্গে কথা বলে। নাতি–নাতনিরাও কথা বলে। ওরা যতক্ষণ বা যতটুকু সময় কথা বলে, রাশিদা ঠিক থাকেন, তারপর ওরা স্কাইপে থেকে সরে গেলে বুকের ভেতরে খুব কষ্ট হয় রাশিদার। এ এমন এক কষ্ট, যা শুধু স্বামীহারা মহিলারাই বুঝতে পারবে। তার চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবন মনে হয় যেন অপূর্ণই থেকে গেল। কত কথা যে বলা হলো না স্বামীকে!

তবে আগেরবার যখন সোবহান সাহেবের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, তখন একদিন সোবহান সাহেব ভালো হয়ে ওঠার সময় রাশিদাকে কোলের কাছে টেনে নিয়ে বলেছিলেন, ‘দেখ বুলি, আমি আর তুমি এত বছর ধরে খুব সুখের একটা দাম্পত্যজীবন কাটিয়েছি। আমাদের ওপরে আল্লার রহম। তবে আমি যদি কখনো হঠাৎ চলে যাই, তুমি কিন্তু একেবারে ভেঙে পড়বে না। তুমি আনন্দের সঙ্গে আমার কথা স্মরণ করবে। নিজের শরীরের যত্ন নেবে। নিয়মিত পারলারে যাবে। ছেলেমেয়েদের কাছে ঘুরে ঘুরে বেড়াবে। তারপর সময় পেলে, যদি পাও, তাহলে তোমার আত্মজীবনীটা লিখবে। তুমি আমাকে আগে বলতে না যে ছেলেবেলায় তোমার লেখার শখ ছিল?’

বেঁচে থাকার সময় কত স্বাভাবিকভাবেই না সোবহান সাহেব এসব কথা রাশিদাকে বুঝিয়েছিলেন, কিন্তু এবার সত্যি সত্যি যখন চলে গেলেন, তখন রাশিদা দেখলেন, কোনো কথাই আশ্বাসের নয়। সঙ্গীহীন কোনো জীবনই অর্থপূর্ণ নয়। আকাশের নিঃসীম বুক চিরে চিলের মতো যে আর্তবিলাপ রাতদিন বুকের ভেতর একাকী বাজে, বুকের খোড়লে আঁকুপাকু করে ফেটে বেরিয়ে পড়বার জন্য, সেই নিঃসঙ্গতা তো কোনো কিছুতেই ভরাট হবার নয়; কোনো কথা, কোনো আশ্বাস, কোনো মন ভোলানো, কোনো নকশিকাঁথা পাড়, কোনো ঝুনঝুনি, কোনো রবীন্দ্রসংগীত—কোনো কিছু, কোনো কিছুই।

রাশিদা যেন আজ বের করে নেওয়া তালের শাঁসের খোলা, সামান্য বাতাসেই শূন্যতার গহ্বরে ক্রমাগত দোল খান। কাউকে বুঝতে দেন না যদিও, তবু তার মুখ নীরস, মলিন, শুষ্ক, শ্রীহীন। সেখানে লেগে আছে কারুণ্যের ছাপ।

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আজকাল বাসা ছেড়ে প্রায়ই বেরিয়ে পড়েন রাশিদা। একাকী রাস্তায় রাস্তায় হাঁটেন। তাদের ছোট্ট একটা টয়োটা গাড়ি ছিল, যেটি এখনো আছে, কিন্তু ড্রাইভার খুব মেজাজ–মর্জি নিয়ে চলে, কোনো দিন আসে, কোনো দিন আসে না, পুরোনো ড্রাইভার বলে রাশিদা কিছু বলেন না। সে–ও যে তার মনিব হারিয়ে শোক পেয়েছে, এটা বুঝতে পারেন রাশিদা। কারণ তার সব আবদারই এত বছর সোবহান পূরণ করেছেন।

কিন্তু ড্রাইভার আজ ডিউটিতে এসেছে। গাড়ি ধোয়া–মোছা করে সে দাঁড়িয়ে আছে নিচে। একবার কলবেল টিপে জানান দিয়েছে, সে রেডি।

ড্রাইভার নিয়ে রাশিদা বেরিয়েছেন আজ। চলে এসেছেন বেশ খানিকটা দূরে, যেখানে এই পাঁচ তারকা হোটেলটি। লিফট দিয়ে উঠে এসেছেন দশতলায়। রিপোর্ট করেছেন।

সেই মেয়েটি আজ ডিউটিতে আছে। মেয়ে না বলে মহিলা বলাই ভালো। বয়স চল্লিশের ওপরে। সাধারণত এই বয়সের মেয়েরা এভাবে পারলারে কাজ করে না। কিন্তু এই মহিলা করে। তাকে রাশিদার পছন্দ। বেশি কথা বলে না। কথা বেশি বলা মহিলা তার পছন্দ নয়। কারণ, তিনি নিজে বেশি কথা বলেন। সাধারণত এখানে কর্মচারীরা খুব একটা স্টেডি নয়, প্রায়ই নতুন মুখের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ পারলারে আরেকটা মেয়ে আছে—মনিকা। তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু চল্লিশোর্ধ্ব এই মহিলা বেশ পুরোনো।

রাশিদা তাকে দেখে বললেন, ‘হাই।’

সে বিনীত গলায় বলল, ‘ভেতরে আসুন, ম্যাডাম।’ 

ভেতরে গিয়ে বসলেন রাশিদা। ছোট্ট পারলার। মনে হয় শুধু হোটেলের রেসিডেন্টদের জন্যেই। কিন্তু রাশিদা এখানে আসেন। এই হোটেলের যিনি আসল মালিক, তিনি সোবহানের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। 

এই রকম নির্জন পারলারই রাশিদার পছন্দ ইদানীং। বেশি ভিড়–ভাড়াক্কা আজকাল তার ভালো লাগে না। অথচ তিনি সারাজীবন হই চই করা মানুষ। মনে হয় এ জন্যই সোবহান তাকে পছন্দ করতেন, তিনি নিজে যদিও ছিলেন স্বল্পভাষী।

এই হোটেলে প্রথম সোবহান সাহেবই তাকে সঙ্গে করে এনেছিলেন। এমনকি সেদিনও রাশিদা যখন এই পারলারে এসেছিলেন, ওয়েটিং রুমে চুপ করে বসে ছিলেন সোবহান সাহেব। তার সামনে একগাদা ইংরেজি ম্যাগাজিন পড়ে ছিল, তিনি তার একটাও হাত দিয়ে নাড়েননি। তার পকেটে দামি হাইফাই স্মার্টফোন ছিল, সেটিও খোলেননি, শুধু চুপ করে বসে ছিলেন জানালা দিয়ে দূরে তাকিয়ে। তার কিছুদিন আগেই ভুগে উঠেছিলেন জ্বর থেকে।

সে সময় একবার রাশিদা মাথায় রং দেওয়া অবস্থাতেই উঠে বাইরে বেরিয়ে এসে তাকে বলেছিলেন, ‘মিলন, তোমার নিশ্চয় বোরিং লাগছে। তুমি নিচের লাউঞ্জে গিয়ে বসো। কোনো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলো। আমার তো এখানে একটু দেরি হবে।’

উত্তরে মিলন মানে সোবহান সাহেবকে বলেছিলেন, ‘আমি এখানেই বেশ আছি। তুমি চিন্তা কোরো না।’

সোবহান সাহেব পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবার পর রাশিদার কেন জানি মনে হয়, সোবহান বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি আর বেশি দিন পৃথিবীতে নেই। তাই সময় বা সুযোগ হলেই রাশিদার কাছছাড়া হতেন না। তাঁর সেই চুপ করে বসে থাকা রাশিদা যতবার স্মৃতি হাতড়ে দেখে ওঠেন, ততবার অশ্রুপ্লাবিত হয়ে ওঠে তাঁর চোখ।

সে বুঝতে পেরেছিল!

গদি আঁটা রিভলভিং চেয়ারে বসে মনে মনে এখন বললেন রাশিদা।

তার সামনে–পেছনে বাতি–ঝলমল ঘরে ঝকঝক করছে বড় বড় আয়না—দেয়ালের এ মুড়ো থেকে ও মুড়ো। সেখানে চেহারা প্রতিফলিত হচ্ছে বড় জমকালোভাবে। সবকিছু বড় উজ্জ্বল, বড় সৌখিন। এখানে যেন সুখ ছাড়া আর সবকিছুর প্রবেশ নিষেধ! 

এত বড় ব্লাফ আর কী হতে পারে?

মনে মনে ভাবলেন রাশিদা।

ভেতরে এখন শুধু এই মহিলা। ঘরে আর কেউ নেই। রাশিদার বিস্ময় অনুমান করে সে বলল, ‘আজ মনিকা ছুটিতে আছে, ম্যাডাম। আজ সোমবার তো। ভীড় কম।’

মহিলা তার চুলে পছন্দের রং দিতে শুরু করল। এখন সে রাশিদার পেছনে দাঁড়িয়ে কাজ করছে।

রাশিদা মহিলার উদ্দেশে সামনের আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘গতবার আমার স্বামী মিস্টার সোবহান সিরাজ এসেছিলেন আমার সঙ্গে, আপনার মনে আছে?’

‘জি’, কথার উত্তরে মাথা হেলিয়ে বলল মহিলা।

রাশিদা আয়নায় মহিলার মুখ দেখে বুঝলেন তার মনে নেই। তবে তিনি হাল ছেড়ে দিলেন না। বললেন, ‘গতবার আমার স্বামী সোবহান সাহেব আমার সঙ্গে এসেছিলেন। যতক্ষণ না আমার কাজ এখানে শেষ হয়, ততক্ষণ বসে ছিলেন চুপ করে। মনে আছে, সেদিন আপনিই আমাকে সার্ভিস দিয়েছিলেন।’

এরপর একটু থেমে রাশিদা বললেন, ‘তিনি আর নেই। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে মারা গেছেন। খবরের কাগজে, সব কটা কাগজে তার ছবিসহ সেই খবর ছাপিয়েছে, আপনি দেখেননি?’

না, মহিলা সে খবর দেখেনি। সে একটু অপ্রভিত হয়ে মাথা নেড়ে আবার চুলে রঙের পোঁচ দিচ্ছে।

রাশিদা স্বপ্নাচ্ছন্নের মতো বলে চললেন, ‘জানেন, আমার স্বামী খুব বড় একজন ইকোনমিস্ট ছিলেন। বাংলায় যাকে বলে অর্থনীতিবিদ। অর্থনীতিবিদ, বুঝলেন?’

উত্তরে মাথার পেছন থেকে মহিলা বলল, ‘হ্যাঁ।’

রাশিদা বললেন, ‘একবার অমর্ত্য সেন এসে তাকে বললেন, আপনার মতো অর্থনীতিবিদ যে দেশে আছেন, সে দেশের চিন্তা কী? আপনি তো দেশে থেকে এভাবে দেশের সেবা করছেন। আমি তো পারলাম না।’

মহিলা চুলের রং সেরে এবার মাটিতে বসে রাশিদার পায়ের নখ পরিষ্কার করছে।

ওপর থেকে মহিলার মাথা দেখছেন রাশিদা। লালচে রং করা চুল। একেবারে পাট পাট করে সাজানো। দেখতে ওপর থেকে খুব পরিষ্কার লাগছে।

চেয়ারে বসে মহিলার কোলে পা রেখে রাশিদা বললেন, ‘আমার স্বামী মারা যাবার আগে বারবার করে বলে গেছেন, আমি যেন আমার নিজের শরীরের যত্ন নিই। যেন নিয়মিত পারলারে গিয়ে নিজেকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখি। আমি যেন কখনো কাতরতা নিয়ে, বিমর্ষতা নিয়ে, হাহাকার নিয়ে চলাফেরা না করি। যেন কোনো মানুষ বুঝতে না পারে, স্বামী হারিয়ে আমি অসহায়! ’

 মহিলা এবার তার নখ পরিষ্কার করে পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করছে। স্পঞ্জ দিয়ে পা ঘসছে। ঝুঁকে সেটা তাকিয়ে দেখলেন রাশিদা। তারপর কণ্ঠে একটু উচ্ছলতা টেনে এনে বললেন, ‘জানেন, আমার স্বামীর সঙ্গে যখন প্রথম দেখা হয়, আমরা যখন প্রেম করতে শুরু করি, তখন একদিন আমার স্বামী—তখন তিনি বয়সে অনেকই তরুণ—তার বাবার গাড়ি চুরি করে চালিয়ে আমাকে সাভারের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে এক জায়গায় বংশী নদীর তীরে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে খেলা করছিলাম আমি। নদী আমি চিনতাম না। তিনি বললেন, বংশী নদী। তিনি ঝুঁকে দাঁড়িয়ে পানির নিচে আমার পা দুটোর খেলা দেখে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘আমার সাদা খরগোশ দুটো এভাবে পানিতে জলকেলি করছে!’

তখন আমি দেখতে খুব ফরসা ছিলাম তো!

পারলারের মহিলা এবার তার পায়ে যত্ন করে ক্রিম মাখিয়ে দিচ্ছে। মহিলাটি ভালো, মনে মনে বললেন রাশিদা। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার নাম কী?’

‘আমার নাম কামরুন, ম্যাডাম।’

‘কামরুন? বেশ ভাল নাম। ভার্সিটিতে পড়তে আমার এক সতীর্থের নাম ছিল কামরুন। সে এখন স্টেটসে আছে। এক মেয়ে।’

তারপর ঝুঁকে পা দেখতে দেখতে বললেন, এই যে দেখেন, আমার স্বামী মারা গেছেন, কিন্তু এখন কেউ দেখলে আমাকে বলতে পারবে না যে আমি শোকাহত। কেউ আমাকে করুণা করতে পারবে না। কেউ না। আমার যত শোক সব গোপনে। গোপনের গোপন। রাতে তার মাথার বালিশে মাথা রেখে আমি কাঁদি। চোখের পানিতে আমি রোজ তার মাথার বালিশ ভেজাই। আমার স্বামী বলে গেছেন, ‘সোনা আমার, আমাকে যেন মিস কোরো না! আমি তোমার সঙ্গেই থাকব। তাই কখনো, কখনো, কখনোই আমি তাকে মিস করি না! কখনোই...সরি, কামরুন, আপনার স্বামী কী করেন?’

কামরুনের জাম রঙের ঠোঁটে এবার যেন বঙ্কিম হাসি ফুটল। 

মুখ তুলে সে বলল, ‘আমি তো বিয়ে করিনি ম্যাডাম!’

‘কেন?’ এবার হতভম্ব রাশিদা।

কামরুন বলল, ‘বিয়ে আমি হেট করি। আমার বড় বোনকে তার স্বামী যৌতুকের জন্যে গলায় ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলেছিল। বিয়ে, স্বামী, সন্তান আমি তাই হেট করি, হেট, হেট, হেট...।’