কবিতা

মাসরুর আরেফিন

পৃথিবী এলোমেলো সকালবেলায়
পৃথিবী এলোমেলো—সকালবেলায়, উন্মত্তও বেশ, আর
কারোরই নিবৃত্তি নেই
অপরের ক্ষুৎপিপাসা থেকে, যা কিনা গন্ধবহ, ক্ষার।
প্রাণ যাকে বলি তার চোলাই চলছে দেখো দলমত–নির্বিশেষে,
যদিও কিছু কমন ভেলভেটগ্রাসের চাদর পাতা আছে হিজলের পাশে।

তবে ভ্রান্তিবশত সবই হৃদয়ঙ্গম হয়ে যাচ্ছে ঠিকই—হুংকারসহ;
মনে হচ্ছে শান্তি শান্তি বেশ, মনে হচ্ছে সুসময় প্রায় সমাগত
যখন পকেট থেকে ভালো চেহারা বের করে পৃথিবীর সামনে রাখা হবে,
পিঠ দেয়ালের দিকে
আর দশ কদম হাঁটা হবে মাথা উঁচু করে
ড্রাইক্লিনিংয়ের সরু গলি ধরে—চিকচিকে;
মনে হচ্ছে ওখানকার ক্যাটওয়াকের চিনিচম্পা যুবা ও সুন্দরীগণ
মনে হচ্ছে কৌতূহলী চোখে
তারা তাকাবে আমার ছেঁড়া কাপড়চোপড়ের দিকে এইবার,
আর এবারই প্রথম জীবনে কিছুই থাকবে না বলবার মতো
বরং সামনে টমটম, খাড়াখাড়ি—প্রতিপক্ষ হতে পারে—
এসে বলবে: ‘ছি! তোমার নিজের হাল দ্যাখো,
এ পৃথিবীর কোনো কাজেই আর আসবে না তুমি।’

তখনই বাগানে হাঁটতে হবে কিছু,
তখনই মনে হচ্ছে রিমঝিম রিভলবার রিপু রিস্টওয়াচ রীতিপ্রথা
এবং র দিয়ে আরও যা যা আছে
এমনকি ম দিয়েও আছে
কিংবা বিষদাঁতের ব দিয়ে আছে
মনে হচ্ছে স্মৃতি থেকে মেয়েটাকে লেখা
শৈশবের চিঠি পড়াটাই ভালো
কারণ চারপাশে দূর্বাঘাসের গায়ে
মেক্সিকান অরেঞ্জ গাছ আছড়ে পড়েছে কেন, তার কোনো খোঁজ আছে কারও?

পড়ো এই চিঠি এবং লন্ডভন্ড পৃথিবীর তবে অর্থ উদ্ধার করো,
যদি বুটপালিশের স্বাদ জিভ থেকে সরাতেই চাও
তো দুধের থেকেও বেশি গাঢ় অন্য কিছু সন্ধান করো, যাও।

এটাও বিশ্বাস করো, ওইটাও করো—এই তো চেহারা!
আর জীবনে যা যা যা যা করেছ খোকা তুমি,
তার দাম দিতে হবে না, বলো?
(কী মুদ্রায় দেবে—সেটা ঠিক করা পাঠশালার কাজ নাকি পাগলাগারদের, বলো?)

পৃথিবী এলোমেলো, উন্মত্তও বেশ—
সকালবেলায় ফিটফাট নতুন কোনো পেপারব্যাকের মতো—
তাই যদি হয় তাহলে প দিয়ে কথা বলো,
যেমন পাজল,
যেমন পাছদুয়ার,
যা ধরে বের হলেই দেখবে যে
মানুষের পিপাসার পাশে কোনো পাতাঝরা-মতো
আনুমানিক পবিত্রতা নেই, ছিল না কখনো।

ফিরোজ এহতেশাম
হয়তো
হয়তো প্রতিটা বীজের অঙ্কুরোদগমে চিরকাল বিস্মিত হয় মাটি
হয়তো কোকিলের ডাক বলে যাকে ভাবতেছ তা আততায়ীর অন্তিম ইশারা
হয়তো এই স্তব্ধতা আগুন জ্বলে উঠবার মুহূর্তপূর্বের আর্তনাদ
হয়তো মুখোমুখি দুইটা আয়নার মাঝখানে পড়ে গিয়ে তুমি
আবিষ্কার করতেছ অনন্ত অসীমের নির্জন স্পর্শ
হয়তো নিজের অস্তিত্বে আজীবন যাকে অনুভব করছ তার কোনো নাম নাই
হয়তো একদিন নির্মমভাবে চলে যেতে হবে বলে তুমি কখনো জন্মালাই না
হয়তো কোনো সমাধির ওপর বেড়ে ওঠা গাছের সজীব উজ্জ্বলতার সাথে
সমাধিস্থ রূপসীর লাবণ্যের সাদৃশ্য আছে
হয়তো এই শূন্যস্থান দুইটা বস্তুর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার হাহাকার
হয়তো বীজের ভেতর একনিষ্ঠভাবে কান পাতলে শুনতে পাওয়া যায়
আদিগন্ত কোকিলের ডাক

ফেরদৌস মাহমুদ
হ্যালির ধূমকেতু
ছায়াপথের মানচিত্র আঁকতে আঁকতে ঘুমিয়ে পড়ি।

স্বপ্নে হ্যালি চাচার সাথে দেখা, হ্যালি চাচার নামে একটি ধূমকেতু আছে,
২০৬১ সালের কোনো এক সন্ধ্যায় দেখা যাবে। আমি সেদিন সকালে
তোমাকে নিয়ে ধূমকেতু বানানোর কারখানায় যাব, ধূমকেতুর গুদামঘরে
গিয়ে সেলফি তুলব। সন্ধ্যায় দুরবিন হাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকব,
তুমি কিন্তু আমাকে বকবে না প্লিজ।

একটা গোপন কথা বলি, শোনো, তোমাদের বাড়ির উঠোনে একটি সুচ
রেখেছিলাম। ১০ হাজার বছর পর দেখলাম ১ সেন্টিমিটার ধুলো জমেছে
ওটার ওপর। ১ মিলিয়ন বছর পর ওই ধুলো ১ মিটার উঁচু হলো। আজ
দেখলাম ওই উঁচুতে কয়েকটি ওয়াইনের বোতল নৃত্য করছে।

নক্ষত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মৃত্যুর কয়েক মুহূর্ত আগে বিজ্ঞানী
হ্যালি ওয়াইন খেতে চেয়েছিলেন, আর আমার হ্যালি চাচা পড়েছিলেন
‘লাকুম দিনুকুম ওয়াল ইয়াদিন—যার যার ধর্ম তার তার!’

আহা, হ্যালির ধূমকেতু যেদিন দেখা যাবে, সেদিন থাকব না আমি!