গহ্বর

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

সকাল

আসুন আসুন ডাক্তার, গুডমর্নিং, হ্যাঁ হ্যাঁ ব্রেকফাস্ট ট্রলি থেকে কর্নফ্লেক্স নিয়েছি, টোস্ট নেব নেব করছিলাম, পরে ভাবলাম থাক। আমায় ভালো দেখাচ্ছে বলছেন, হ্যাঁ, কুশলে আছি তো। আমার স্টেটমেন্ট নেবেন আজ? এখুনি? এখনো ক্লান্ত লাগছে যে! একটু দুঃখও। সারা রাত কতবার করে আমাকে জাগিয়ে প্রেশার মেপে গেছে নার্স। পরে? নিশ্চয়ই। আমি তখন তৈরি থাকব, মনেপ্রাণে। কিচ্ছু ভাববেন না। একটা নার্স কাল রাতে যেন কাঁদছিল, কান্নার কী বিচিত্র আওয়াজ, সিনেমার গীতাবালি পিয়ানোয় উবু হয়ে ‘হম পেয়ার মে জিনেওয়ালোঁকা চ্যায়ন কাহাঁ আরাম কাহাঁ’ বাজাবার সময় আসলে যেসব বেসুরো চাবিতে চাপ ফেলেছিল, সেইমতো একটা গানের আওয়াজ যেন...গীতাবালি কে? আচ্ছা থাক। দুঃখিত।

বিকেল

কোথা থেকে শুরু করব, সেটাই সমস্যা। বলতে গিয়ে মূলসূত্র হারিয়ে যায় বারবার। রো.কে পুলিশ ধরেছে আমি জানি, বার্গলারির অভিযোগে। একটু দাঁড়ান, নার্সকে ডাকি, আরেক জগ পানি দিতে বলি। হ্যাঁ, রো., আমাদের পরিচয় একটা কলসেন্টারে। কোল্ড কল করতাম। একের পর এক। কেউ ধরবামাত্র কলের গানের মতো শুরু হয়ে যেতাম, খুব চনমনে বন্ধুত্বপূর্ণ গলায় জিজ্ঞেস করতাম, ‘অমুক বলছেন? আমি ঠিক উচ্চারণ করছি তো?’ তারপর? জিজ্ঞেস করবে না, ‘এখন কথা বলার জন্য ফ্রি আছ?’, এর উত্তরে বেশির ভাগ লোকই বলে, ‘এখন সুসময় নয়’, আর ঘটাং করে ফোন রেখে দেয়। বলবে, ‘ভালো আছ নিশ্চয়ই আজকের সন্ধ্যায়’,...তারপরই বলবে, ‘আর ভালো না থাকলেও এখুনি মন ভালো করে দেওয়া একটা খবর তোমায় আমি দিতে পারি!’ এ সময় কেউ যদি ঘটাং করে ফোনটা রেখে না দেয়, তবে সামান্য শ্বাসের বিরতি দিয়ে বলবে, ‘প্রস্তুত? আশপাশের কিছু একটাকে ধরে দাঁড়িয়েছ তো!’ এসব ফালতু কথার সুবিধে আছে, লোকে হাসে, অসহজ হতে পারে না সহজে। বলবে, ‘তুমি আমাদের ফ্রি ফটোশুটের প্যাকেজ উইন করেছ! যার নগদ মূল্য ৭০ পাউন্ড। কী খুশি?’ না না, ও রকম চোষকাগজের মতো গলা করে বললে হবে না, জোরালো গলা, যেন স্টেজে জাদু দেখাচ্ছ, বা সার্কাসের রিংয়ে সিংহের খেলা দেখাচ্ছ। এখনো যদি ঝপ করে ফোন রেখে না দেয়, তবে বুঝবে ফাতনা নড়েছে। মক্কেলের বয়স এবং নামের বানান কনফার্ম করবে সময় নিয়ে...মেয়েরা বয়স বললে চট করে মৃদু হেসে বলবে, ‘কী যে বলো, তোমার গলা তো রীতিমতো যুবতীর গলা! ঠাট্টা করছ না তো!’ বলবে, ‘এই ফটোশুটে আমরা চুল ধোয়া-ছাঁটা বা শুকানোর কাজ করি না, শুধু স্টাইলিং করি আর মেকওভার। তারপর সেজেগুজে যদি তোমার মন চায় তুমি পোর্ট্রেট ছবি তুলবে। যদি মন চায়, সেখান থেকে বেছে কিনবে। যদি মন না চায়, এই পুরো প্রক্রিয়ার শেষে এমনি হেঁটে চলে যাবে। কোনো প্রবলেম নেই’...এই সব আমড়াগাছি করে-টরে ক্রেডিট কার্ডের বা ডেবিট কার্ডের ডিটেইল চাইবে, এমনি এমনি কি আর লোকের টাকশালে হাত দেওয়া যায়! এই–ই করতাম আমরা, অনেকগুলো মানুষ, অনেকগুলো ফোনে। কথা শুরু করলেই ঘরগুলোতে মৌচাকের আশপাশের মতো গুনগুন শব্দ মৃদু থেকে প্রবল হতো। এইখানে রো. আর আমার পরিচয়। 

সে খুব করিৎকর্মা ছিল ফোনে লোক পটাতে। দেখলাম স্ক্রিনে সে তার নাম লিখে রেখেছে নিরো, রো. নয়। ওই থেকে আমরা আলাপ জমিয়ে ফেললাম। সিনেমার নিরো কেমন করে অশ্রুদানিতে একফোঁটা চোখের জল ফেলেছিল রোম পুড়তে দেখে, ইতিহাসের নিরো কেমন করে কুখ্যাত হয়ে গেল রোমের পথঘাট চওড়া করে শীতের বাতাস জনপদে বইতে দিয়ে...আমি বললাম, ‘রো. তুমি নিরো না দিয়ে তোমার নাম রোমুলাস দাও না কেন?’ ও খ্যাকখেকিয়ে হেসে বললো, ‘কেন আমাকে দেখলেই কি মনে হয় নেকড়ের দুধ খেয়ে বড় হয়েছি?’ তা হ্যাঁ, বাজপাখির মতো একটা সদা ক্ষিপ্রভাব ছিল তো ওর মুখে, সেটা আমার ভালো লেগে গেল। আর রো. যাকে দেখল, তার বুক-পাছা-উরুতে খানিকটা ভার আছে, কেশভার ঘনিয়ে আছে পিঠজুড়ে, চাউনিতেও গুরুভার মেঘফেগ আছে, রো. আমার সাথে পটে গেল।

আমি তখন ডিভোর্সী, আমার দুটি মেয়ে। প্রবল আইনি যুদ্ধ করেও মেয়েদের কাস্টডি পাইনি। অনেক দিন অসুস্থ ছিলাম আমি। মেয়েরা হাইস্কুলে পড়ে, বাবার কাছে থাকে, ছুটিতে সিসাইড টাউন থেকে আমাকে পোস্টকার্ড পাঠায়। আমি থাকি একটা ওয়ান বেডরুম বাংলোবাড়িতে, কবরখানার ওদিকটায় ওয়াটারবোর্ডের অনেকগুলো সিকামোর গাছ আছে না? সেখানটায়। রায়টের রাতে আমরা কাজ সেরে আর দুজন দুদিকে যেতে পারলাম না, রো.র বাড়ির দিকে খুব গন্ডগোল হচ্ছিল, ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে, বাসও ওদিকটা ঘুরে যাচ্ছে না, এই সব হুজ্জতের কারণে রো. আমার ঘরে এল। একরকম সাপ আছে, নিজের পোকার আকৃতির লেজটাকে নেড়ে পাখিকে প্রলুব্ধ করে আনে। একরকমের শিকারি পাখি আছে, হাজার ফুট উঁচু থেকে শাঁ করে নেমে এসে তুলে নিয়ে যায় মেষশাবক। আমি আর রো.—কে শিকার আর কে শিকারী ছিলাম, সে রাতে তা স্পষ্ট হলো না। পরদিন সেটা ভালো করে বুঝবার জন্যই আমরা কাজে গেলাম না, সিকামোর গাছগুলো অন্ধকার করে রইল আমাদের ঘর, জামফলের কাদার মতো কালো। রেডিওতে রয়্যাল লিভারপুল ফিলহার্মনিক অর্কেস্ট্রা কত কী বাজিয়ে গেল! 

হ্যাঁ, রো. আমার সাথেই থাকতে শুরু করেছিল সে রাত থেকে, আর ফিরে যায়নি। কেমন একটা দমকা হাওয়ার মতো অন্যান্য জীবনে পৌঁছে যায় রো.। গায়ে কেমন চেতনা মদির করা পারফিউম, পাউডার-ব্লু আর শাদা নরওয়েজিয়ান সোয়েটার; নিঃসংকোচ ব্যবহার, অবারিত হাসি আর বুদ্ধিদীপ্ত কথার তোড়ে হাট করে খুলে যায় মনের জানালা। আমারও গেছিল। পরে জানলাম, বিকেলের জানালায়ই গাঢ় হয়ে সন্ধ্যা নামে। অন্ধকার। তখন সভয়ে জানালা বন্ধ করে দিতে হয়। প্রথম দেখায়ই যেমন মনে হয়েছিল, রো. সব সদ্​গুণ আর বদখেয়াল জাহির করে জানিয়ে দিচ্ছে, আদৌ তা নয়। ওই অন্ধকার অচিনপরিচয়ের অন্ধকার। আমি তাকে চিনি না। অন্ধকার থেকে শব্দভেদী বাণ হাতে তিরন্দাজের চোখে তাকিয়ে আছে রো., তার চোখেমুখে হাসি নেই। না না, ঠিক বলেছ তুমি, এতে এত কাব্য নেই। শিকার এবং শিকারির সম্বন্ধ স্থায়ী হয়ে যাবার পরের গল্প করব। কী নিয়ে অত ঝগড়া আর মারপিট হতো? পরে বলব। এখন আমার খারাপ লাগছে। পরে কথা বলতে চাই। প্লিজ।

পরদিন সকাল 

ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে একদিন আমার গলায় কিচেন নাইফ ধরল রো.। দেখি, ওর মুখ থেকে গ্যাঁজলা বের হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে আমি অ্যাম্বুলেন্সে কল করলাম। হ্যাঁ, ভেবেছি ওর চিকিৎসা দরকার, তাই। আমি তখন জানি না যে কেউ কেউ চাইলেই ওভাবে মুখ থেকে ফেনা তুলতে পারে। পুলিশে কেন দিইনি? আমাকে এসব প্রশ্নের উত্তর জিজ্ঞেস কোরো না। অত সন্দেহপরায়ণ, ক্ষিপ্ত হলে অত হিংস্র, ধিক্কারে মন ভরে যেত সেই ব্যবহারে। পরে আদর। তোমাদের বইয়ে এ রকম ঘটনা নতুন নয়। কেমন ভেজা জামার মতো বিশ্রী গায়ে-পড়া স্বভাব হয়েছিল আমার। ওই তোমার ‘আত্মসচেতনতা’, ‘অবমাননাবোধ’—ওসব শব্দ রেখে দাও... 

আমি ওকে বের করে দিলাম এক সন্ধ্যায়। ও বের হয়ে যাবার আগে পেছনের বাগানের দিকটা শেষবার সাফ করে দিতে গেল। একবার অস্ফুট চিৎকার শুনলাম। কিন্তু বাগানের দিকে অন্ধকারে আর যাবার সাহস করলাম না। সে কখন চলে গেল, আমি জানিই না আর। 

রো. চলে যাবার পরে আমি পাড়ার যোগব্যায়ামের ক্লাসে ভর্তি হলাম, সোশ্যাল সার্ভিসের লোকে জোর করে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এল। কসরৎ করলাম, ঘাম ঝরালাম। দ্যাখো, তুমি ডাক্তার, তুমি ভাল জানবে, শারীরিক পরিশ্রমে আর শারীরিক সংশ্রবে নাকি একই হরমোনের খেলা, অক্সিটোসিন...এন্ডোরফিন...পরে মনে হলো, কথা হয়তো খুব সত্যি। কিন্তু ওয়ার্ক-আউটের আনন্দটার যেন কেন্দ্র নেই, শূন্যগর্ভ, ৭০ পাউন্ডের সেই মেকওভারের মতো (অস্বীকার করব না, খুব খালি লাগছিল, যেন কেউ আমায় লাফিং গ্যাস দিয়ে আনন্দের হাসি হাসাচ্ছে), আর সেক্সের আনন্দে কেন্দ্রে প্রিয়তম মানুষ...তবে একদিন বাড়ি ফিরে সুস্থির হয়ে এক মগ সবুজ চা নিয়ে বসে মনে হলো, আমি আসলে দেখতে পাচ্ছি না, ওয়ার্ক-আউটের আনন্দের কেন্দ্রে আমি।

একটা অদ্ভুত ব্যাপার কাজ করত এই সময়টায়। মনে হতো, রো. জানালার বাইরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছে। বাগানঘরে লুকিয়ে। দরজার ফাঁকে চোখ রেখে। বাথরুমের ঘুলঘুলিতে হাত রেখে ঝুলতে ঝুলতে। পথে যেতে চমকে উঠি, যেন কেউ আমার পিছে পিছে আসছে। শাদা একটা চোখ, তাতে চাঁদমারির মতো মণি। জানালায় স্টিকারপেপার বসিয়ে কাঁচ ঘোলা করলাম একদিন সারা বেলা। আমরা দুজন রেডিওতে ক্ল্যাসিক এফএম শুনতাম, চালালাম, তারপর মেন্ডেলসন কি রাখমানিনভের গলা ধরে আশ্চর্য, রো.র জন্য একবেলা খুব কাঁদলাম। সদ্য ধার দেওয়া একটা ছুরি দেখেছিলাম একবার, গায়ের রোমের কাছে আনলেই ফ্যাতফ্যাত করে রোম কেটে যায়। কারও নাম শুনলেও অমন হয়, জানো? কান্না শেষ করে মনে হতে লাগল যেন দুজন মিলেই শুনছি, ভিভাল্ডি তুষারগলা প্রথম বসন্তে কত অনুনয় করে একটা একটা রোদ্দুরের ফুল ফোটাচ্ছেন। সামনে রোদেলা দিন। এমন হয় না?

বাড়ির কাজে একটা অগোছালোপনা তো আমার ছিলই। এই যে সময়ের আগেই চা-পাতা ফুরাচ্ছে, প্যাকেটের বিস্কুট ফুরাচ্ছে, চিনি নেই...এত দিন এমন করেই কি চলছিল? বাজারসদাই আমি ছকে করি না, পারি না; যখন লাগে, নিয়ে আসি। ক্রমে অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসে, শুক্রবার রাতগুলোয় আমার সাথে পানশালাফেরতা কোনো বন্ধু এসে থেকেও যায়। সহিংসতা অভ্যাস হয়ে গেলে মাদক লাগে, বের হয়ে আসাটা সহজ নয়, কিন্তু সম্ভব! হ্যাঁ, টাকাপয়সার হিসাব নিয়ে একদম কি আর বসি না! বসি, বসে দেখি রো. যাবার পরেও আমার খাইখরচা একই আছে। তাজ্জব। অথর্বের মতো জীবন কাটাচ্ছি। টিনে জমানো পেনিগুলো ছাড়া বাকি সব ঠনঠনে।

একদিন ভোররাতে যেন
আমি শুনতে পেলাম রো.র ফোন বাজছে, রিংটোন, ‘রাদেৎস্কি মার্চ’, যে মিউজিক শুনলেই মনে হবে অলিগলিতে দৌড়ে পালাচ্ছি প্রিয়জনের হাত ধরে। ঘুমের ভেতরই টের পেলাম, ধুপ করে বেড়াল লাফিয়ে পড়ল আমার ঘরের ছাদে। বাড়িটায় ভূত আছে, এমনটা রো. প্রায়ই বলত। ভয় পাই জেনে মজা করত সে, বাজপাখির মতো মজা। পা টিপে টিপে এসে তড়াক করে ধরত—ঘরে তো বটেই, ভিড়ের ভেতরেও; বাইরের জানালায় মুখ ব্যাদান করে দাঁড়িয়ে থাকত চুপচাপ, কাবার্ডের ভেতরও গুটিয়ে বসে থাকত, যেন খুলেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। চিলেকোঠাটাকে আমি ডরাই, সেটা সে জানত, তাই নিয়েও কত ঠাট্টা। এখন বাড়িটায় ভূতের উপদ্রব নেই, তা–ই না? কিন্তু আছে দেখলাম। রো.র সেই ঝিমঝিমে পারফিউমের গন্ধ ভেসে আসে। তামাকের গন্ধ, অথচ আমি তো তামাক খাই না। একদিন দেখি, আয়নায় তেলা আঙুল দিয়ে লেখা ‘প্রিমাভেরা’, রো.র আমাকে দেওয়া নাম। মন যা বলে, সব সত্যি, তা–ই না ডাক্তার? কিন্তু মনের কথা কতই না শুনি আমরা!

মানসিক রোগ নিয়ে তো আর এখানে তাচ্ছিল্য করে না লোকে, একটা কৌটো আছে—তাতে পুরে দেয়, লেবেল দিয়ে রাখে—‘ইহা হয় মানসিক রোগী’। ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত প্রাণায়াম করলাম, মেডিটেশন করতে গিয়ে খামোখা নিজের দাঁতের ব্যথা মনে পড়তে লাগল, তবু প্রাণপণে মন সংহত করতে চেষ্টা করলাম। ভাবতেই থাকলাম, আমার মাঝে শান্তির কুণ্ড রয়েছে। এই ভস্মবৃষ্টি থেমে যাবে। জগৎ শান্ত হবে। 

একদিন এক সোশ্যাল সায়েন্স পড়া বন্ধু আমার হাতে একটা চকচকে শব্দ দিল, ‘এজেন্সি’, আপনা জীবন আপনি যাপনের সিদ্ধান্ত, সেই বন্ধুকে নিয়ে আমি আবার জানালার সব অস্বচ্ছ স্টিকার পেপার খুললাম। খেটেখুটে ঘর সাফ করলাম। খাটের নিচও, যেখানে উঁকি দিতে ভয়ে প্রাণ উড়ে যেত আমার। পেছনের বাগানেও এলাম, শিয়ালের বাসা হয়েছে সেখানে, ফুরফুরে তিনটা বাচ্চা। মই এনে বন্ধুটি চিলেকোঠার ডালা খুলে শিউরে উঠল, সেখানে নোংরা কম্বলের বিছানা পাতা। রো. অম্লানবদনে বসে বসে কাগজের বিড়ি বানাচ্ছে, এত দিন সে ওখানেই ছিল। হ্যাঁ, একটু পানি খাব ডাক্তার। হা হা হা, তুমি ঠিক বলেছ, চিলেকোঠায় এখনো ‘ফার্স্ট মিসেস রচেস্টার’কে খুঁজলেই মেলে। আমি যখন বাইরে যেতাম, সে নিচে এসে খেত, টয়লেট সারত, স্নানটানও করত নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, আমার বাজারের হিসাব মিলত না বলে খটকা লাগত, আর ভাবতে পারতাম না। কেন?...দোহাই ডাক্তার, আজ যাও।

বিকেল

কেন মরতে চেয়েছিলাম? মরতেই যে চেয়েছি, তাতে আমি নিশ্চিত নই ডাক্তার। একরকমের স্থায়ী ভয়ের ভেতর বাস করতে অপারগতা জানিয়েছি হয়তো। আর কী, পুলিশ কেস হলো, রো. জেলে চলে গেল, এখন আর জানালায় কেউ দাঁড়িয়ে নেই, উৎকর্ণ হয়ে কেউ আমার সব আলাপ শুনছে না, কেউ তাকিয়ে দেখছে না, কে আমার সাথে পানশালা থেকে ফিরল, কে বর্গা নিল আমার খাটের ভূখণ্ড। দুষ্টু গরু গোয়াল শূন্য করে পালিয়েছে, ওহ, ওটা আমার দেশের বুলি। কিন্তু দ্যাখো ডাক্তার, এই যে আমরা জানি আমাদের অ্যাপেন্ডিকস আছে, কিন্তু ছাই দেখতে পাই না; পিত্তথলি আছে, কিন্তু দেখিনি কখনো; কিন্তু এই ‘আছে-আছে’ ব্যাপারটা আছে...সেই ‘আছে’টা নাই হয়ে গেলে একটা খালি খালি ব্যাপার হয়ে গেল না?