পুরান ঢাকায় নতুন চিত্রশালা

‘সময়ের বিবর্তন’, শিল্পী: অস্পৃশ্য রানী দাস
‘সময়ের বিবর্তন’, শিল্পী: অস্পৃশ্য রানী দাস

শীতবিকেলে বুড়িগঙ্গার তীরে যাত্রী পারাপারে সরগরম ওয়াইজঘাটে লঞ্চ ও স্টিমারের ভেঁপুর শব্দ ভেসে আসছিল। এই আবহে গত ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টসের সার্ধশতবর্ষী পুরোনো ভবনের দোতলায় উঠলাম কাঠের সিঁড়ি দিয়ে। বাফা আর্ট গ্যালারির উদ্বোধন করলেন শিল্পী অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান। পুরান ঢাকার ৭ নম্বর ওয়াইজঘাটে যাত্রা শুরু করল একটি চিত্রশালা।

ঢাকার সংস্কৃতি অঙ্গনে যেসব প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস তাদের মধ্যে পুরোনো এক প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির গোড়াপত্তন হয় প্রতিভাবান গুণী নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর অকালপ্রয়াণে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে। গোড়া থেকেই এটি নানা ক্ষেত্রে শিল্পচর্চার পরিবেশ তৈরির প্রয়াস চালিয়ে এখন সুপ্রতিষ্ঠিত। 

বাফা চারুকলা বিভাগের অনেক সাফল্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাফা থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত ভাস্কর রাশা ঢাকায় আয়োজিত তৃতীয় এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে গ্র্যান্ড পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া উত্তম কুমার রায়, সাগর চক্রবর্তী, শুভ ঘোষ ও মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান—বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত নবীন শিল্পী ও জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে পুরস্কৃত হয়েছেন।

বাফা আর্ট গ্যালারি উদ্বোধনের শুভক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী–শিল্পীদের আঁকা ৬১টি চিত্রকর্ম নিয়ে একটি দলীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। চারুকলা বিভাগের শিক্ষক শিল্পী উত্তম কুমার রায় এ প্রদর্শনীর কিউরেটর।

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটেছে এ প্রদর্শনীতে। একাডেমিক কাজের পাশাপাশি এক্সপেরিমেন্টাল কাজও স্থান পেয়েছে। লোকজ বাংলার শিল্পপ্রকরণের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কাজ যেমন আছে, তেমনি বেশ কয়েকটি নৈর্ব্যক্তিক চিত্রকর্মও স্থান পেয়েছে। শিল্পের নানা গতিমুখের সংকেত প্রতিফলিত হয়েছে কারও কারও কাজে। নবীন ও শিক্ষক-শিল্পীরা ক্যানভাস, কাগজে তাঁরা এঁকেছেন জলরং, তেলরং, অ্যাক্রিলিক রং ও মিশ্র রঙে। 

প্রদর্শনীতে বাফার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের তিনজন তাঁদের চিত্রকর্মের জন্য গ্র্যান্ড পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁরা হলেন অস্পৃশ্য রানী দাস, শ্রীকান্ত ভৌমিক ও সামিয়া আকতার। 

ক্যানভাসে অ্যাক্রিলিক রঙে অস্পৃশ্য এঁকেছেন ‘সময়ের বিবর্তন’। চিত্রপটের ডান প্রান্তের নিচ দিকে লাল রঙের ডাক বাকশোর তিন দিকজুড়ে চিঠি আর খামের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হয় এ ঝুঝি পেস্টিং করা। কিন্তু না, চিত্রপটে মোটা করে রং বসিয়ে এর সবটা তাঁর হাতে আঁকা। বাস্তবতার এই ইল্যুশন (মায়া) তৈরির সার্থক প্রয়োগের জন্য শিল্পীর এই নির্মিতি সার্থক হয়েছে।

ফুল ও পাতার দৃষ্টিনন্দন ছবি এঁকেছেন শ্রীকান্ত ভৌমিক। ‘প্রকৃতি’ শিরোনামে মনোপ্রিন্ট মাধ্যমে দুটি চিত্রের প্রথমটি লালচে রঙের প্রাধান্যে ও অন্যটিতে নীলচে বর্ণের মাধুর্য অনুভব করা যায়।

সামিয়া আকতার বাস্তব আর অধিবাস্তবতার মাঝামাঝি ভাবধারায় এঁকেছেন ‘স্বাধীনতার তৃষ্ণা’। লম্বাটে ক্যানভাসের কেন্দ্রে চোখ বাঁধা এক নারী অবয়ব। তাঁর পেছনে ভায়োলেট বর্ণের ত্রিভুজ যেন অনুভূমিক ক্ষেত্র তৈরি করেছে। নারীর হাতে বশ হয়ে বসে আছে এক সাদা কবুতর। তাঁর মাথার ওপরে অনেকগুলো পাখির ওড়াউড়ি চিত্রটিতে রহস্যময়তা তৈরি করেছে।

চিত্রশালা তৈরি হয়, আবার বন্ধ হয়েও যায়। বাফা চিত্রশালার মালিকানা প্রাতিষ্ঠানিক হওয়ায় ধারণা করা যায়, এটি টিকে থাকবে। পুরান ঢাকায় জন্ম নেওয়া এই গ্যালারিতে সূচনা প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ৫৩ জন শিল্পী। তাঁদের ৬২টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে আছে।

২০ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনী শেষ হয়েছে ১৮ জানুয়ারি ২০২০। 

কোথায় কোন প্রদর্শনী

● হাবিবুর রহমানের থিংকিং অ্যান্ড ড্রয়িং সিরিজের প্রদর্শনী ‘সময়ের গল্প’

কলাকেন্দ্র (১/১১ ইকবাল রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা)

১৭ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি। 

● শারমিন জামানের একক চিত্রকলা প্রদর্শনী ‘জীবনের অভিব্যক্তি’

লা গ্যালারি, (আঁলিয়স ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা, ধানমন্ডি, ঢাকা)

১৭ থেকে ২৮ জানুয়ারি।

● সমসাময়িক স্বনামধন্য শিল্পীদের বিশেষ দলীয় প্রদর্শনী ‘সেভেন’

গ্যালারি কায়া (বাড়ি ২০, রাস্তার ১৬, সেক্টর ৪, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০)

২৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি।

● দলীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘ত্রিনয়ন’

গ্যালারি কসমস (বাড়ি ১১৫, রাস্তা ৬, নিউ ডিওএইচএস, মহাখালী, ঢাকা-১২১৭)

২৭ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি।

● ছাপাই ছবির প্রদর্শনী ‘পরিবর্তনের জন্য পুনর্নির্মাণ’

গ্যালারি চিত্রক( বাড়ি: ৪, রাস্তা: ৬, ধানমন্ডি, ঢাকা)

১৭থেকে ৩১ জানুয়ারি।