মৌনসন্ধ্যায় শ্যামলীর কথা

পাহাড়ের গায়ে স্নিগ্ধ প্রতিমার মতো ফুটে থাকা মৌনসন্ধ্যা, তোমার সঙ্গে দেখাদেখি কত শতবার, তোমার প্রসঙ্গ তবু কবিতায় কখনো আসেনি, যদিও অপরাজিতা চন্দ্রমল্লিকার কথা অনেক বলেছি। 

সেই তুমি কিনা আজ পানপাত্র বাড়িয়ে দিয়েছ, খুব কাছে তোমার লাবণ্য ছুঁয়ে নেমে আসা পান পাত্রে টলমল বন্দী হয়ে আছে মৌনসন্ধ্যা রঙের ঝরনা। কী করে বুঝলে তুমি—এই বনবাসে আগুনপিপাসা নিয়ে আমি প্রায় সন্ন্যাসী ছিলাম! অথচ কী করে বলি তোমার নেশায় মাতাল হয়েছি বহু আগে। তারপর আবার সন্ন্যাসী। 

হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে কী সন্ধ্যা রচনা করে দিলে! পোড়া নক্ষত্রের ছাই পড়ে আছে ধ্যানবৃক্ষ তলে, সমস্ত শরীরজুড়ে পাখির পালকে জেগে ওঠে, যেন আমি আবার উড়াল দিতে পারি রাত্রির আকাশ গায়ে মেখে। 

আমার বয়স চুরি করে অরণ্যের হাওয়া দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে, তাকে ধরো। আমাকে মোহনা থেকে উজানের দিকে ঠেলে দিয়ে কী লাভ তোমার বলো! সব সুর হারিয়ে ফেলেছি। গোটাও তোমার হাত হে অন্য রকমের রাত, ওই দেখো, তোমার ছায়ার মধ্যে কেঁপে উঠছে শ্যামলীর চোখ। তোমার তো দোষ নেই, যখনই সুন্দর কিছু দাঁড়ায় চোখের সামনে এসে, তখনই শ্যামলী এসে প্রসঙ্গকে তার করে নেয়, কিছুই ছিল না তার তবু সে আমার সবকিছু। 

তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব, আপাতত মৌনসন্ধ্যা, আমার প্রণতিটুকু নাও, একগুচ্ছ কৃতজ্ঞতা নাও, তারপর গোটাও তোমার হাত, ফিরে যাও অন্ধকারে, সুদূরে মিলাও।