বুবুনদের বাড়িতে এমনিতেই একটু ঠান্ডা বেশি। তার ওপর ঝপ করে মাইনাসে নেমে যায় তাপমাত্রা। বুবুনের ছোট মামা বেড়াতে এসে খেয়াল করলেন বিষয়টা। বুবুনও এখন বুঝতে পারছে। অথচ আগে মোটেই বুঝতে পারত না। এমন অনেক কিছুই আগে বুঝতে পারত না বুবুন। ছোট মামা এবার এসে যেসব কথা বলছেন, তা শুনে বুবুনের গা ছমছম করছে। তবে ভালোও লাগছে। মামা বলেন, ‘তোদের বাড়িতে যে ভূত থাকে সেটা জানিস?’
বুবুন বলে, ‘জানি না। এখন জানলাম। তবে মন্টিও বলেছিল। জানো মামা, মাঝেমধ্যে আমার কানে কে যেন ফুঁ দেয়! আর রাতে কম্বলের বাইরে পা রাখলে ভেজা টিস্যু দিয়ে পা মুছে দেয়! রন্টিকে এই কথা বলার পর সে বলে, “এটা ভূতে করে। তোর পায়ে ময়লা থাকে না? সেই ময়লা ভূতেরা জিব দিয়ে চেটে খেয়ে পেলে।” বুড়ো ভূতদের প্রিয় খাবার নাকি পায়ের ময়লা। আচ্ছা মামা, ভূতেরা আর কী কী খায়?’
মামা মুখ খুলতে যাবেন তখনই দুজনের মাঝখান দিয়ে শাঁই করে কী যেন উড়ে চলে যায়! আর হিমেল হাওয়া ঠান্ডা ছড়িয়ে দেয় তাদের গায়ে। তাড়াহুড়ো করে ছোট মামা গোস্টবক্স খুলে কার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। আর তাপমাত্রা মাপার জন্য কয়েকটা যন্ত্র বের করেন। বুবুন চোখ বড় করে দেখে যন্ত্রপাতি। মামা যন্তুগুলো রেডি করতে করতে বলেন, ‘এই যে দেখছিস, এটা থার্মোগ্রাফিক ক্যামেরা। আর এটা হচ্ছে ইনফ্রারেড টেম্পারেচার সেন্সর। এই যন্ত্র দুটি দিয়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করে বলে দিতে পারব ভূতের অবস্থান ও গতিবিধি। আরেকটা যন্ত্র আছে। ওটার নাম ইএমএফ মিটার।’
বুবুন বলে, ‘যন্ত্রটা দিয়ে কী পরীক্ষা করা যায়?’
ছোট মামা বলেন, ‘সে তুই বুঝবি না।’
বুবুন বলে, ‘আ রে, বলেই দেখো না। বুঝব। সব সময় ছোট ছোট কোরো না তো।’
মামা বলেন, ‘এই মিটার দিয়ে আশপাশের তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের পরিবর্তন দেখা যায়। মানে এই যন্ত্র বসালে ভূত আশপাশে থাকলে যন্ত্রের মিটারের কাঁটা নড়ে উঠবে। এতেই বোঝা যাবে, আশপাশে আছেন তেনারা।’
বুবুন বলে, ‘তেনারা কে আবার?’
ছোট মামা বলেন, ‘আ রে, ভূতু মিয়াদের কথা বলছি আর–কী!’
‘ও আচ্ছা। তা তুমি ভূত নিয়ে এমন গবেষণায় মন দিলে কবে?’
‘আর বলিস না। ভূতযাত্রা নামে একটা ভ্রমণ–গ্রুপে নতুন চাকরি নিয়েছি।’
‘ভ্রমণ–গ্রুপের নাম ভূতযাত্রা?’
‘হুম। এই ভ্রমণ–গ্রুপে থাকতে হলে ভূত নিয়ে গবেষণা করতে হয়। ভূত সম্পর্কে নিত্যনতুন তথ্য পর্যটকদের দিতে না পারলে এখানে চাকরি থাকে না।’
‘বলো কী! আচ্ছা মামা, তোমার অফিসে আমাকে একটা চাকরি দাও না।’
‘বড় হয়ে নে। তারপর দেখব।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। এখন বলো, তোমাদের ভূতযাত্রা গ্রুপের কাজ কী?’
‘আসলে আমরা পর্যটকদের ভৌতিক ও ভয়ংকর জায়গাগুলোতে ঘুরতে নিয়ে যাই। এই ধর বিভিন্ন পোড়োবাড়ি, পুরোনো ও পরিত্যক্ত সেতু, ভাঙা কারখানাসহ নানান জায়গায় যাই। সেসব স্থানে গিয়ে আমরা পর্যটকদের গায়ে কাঁটা দেওয়া ভূতের গল্প শোনাই। কপাল ভালো থাকলে মাঝেমধ্যে ভূতের দেখাও মিলে যায়।’
‘কোন সময়টায় ভূতের দেখা পাওয়া যায়?’
‘যেকোনো সময়েই পাওয়া যেতে পারে। তবে আমরা গবেষণা করে বের করেছি, মধ্যরাত থেকে ভোর চারটা পর্যন্ত সময়টা। এই সময়ে ভূতদের আনাগোনা একটু বেশি থাকে। মানুষ মড়ার মতো তখন ঘুমায়। আর ভূতেরা এই সময়ে নিজেদের খেলাধুলাসহ গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ সেরে নেয়।’
‘কেউ ভ্রমণে যায় তোমাদের এই ভূতযাত্রা গ্রুপের সঙ্গে?’
‘যায় মানে! গত মাসে ৮৩টা ট্যুর দিয়েছি। মজার বিষয় হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে ভূতেরাও কাজ করে।’
‘তাই?’
অমন সময় ডোরবেল বাজে। বাজতেই থাকে। বুবুনের মা রান্নাঘর থেকে চেঁচিয়ে বলেন, ‘জুটুন, দরজা খুলে দেখ তো, কে এল।’
বুবুনের মামা দরজা খুলতেই বুবুন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে, ‘এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে। সেই সক্কালবেলা বেরিয়েছি। ব্যাগ থেকে টিফিনও কে যেন খেয়ে ফেলেছে। খিদেয় পেটে ছুঁচো বুকডন দিচ্ছে। আর তুমিও না মামা! প্রতিবার এলে কত কী খাওয়াও। এবার কিছুই খাওয়ালে না।’
বুবুনের মামা দৌড়ে যান বুবুনের রুমে। একি! তিনি তাহলে কার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বললেন?