বিশ্বসেরা ৪ বইমেলা

>

প্রযুক্তির মাঝখানে বসেও ছাপা বই নিয়ে এখনো দারুণ উচ্ছ্বাস কাজ করে সারা পৃথিবীর বইপ্রেমীদের মধ্যে। তাই বইমেলার জন্য সারা বছরই এক ধরনের উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করেন তাঁরা। বইমেলার এই মাসে বিশ্বের বড় বড় চারটি বইমেলা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানাচ্ছেন মারুফ ইসলাম

ফ্রাঙ্কফুর্ট বুক ফেয়ার
ফ্রাঙ্কফুর্ট বুক ফেয়ার

ফ্রাঙ্কফুর্ট বুক ফেয়ার
প্রতিবছর মধ্য অক্টোবরে হয় পাঁচ দিনের এই মেলা

ফ্রাঙ্কফুর্ট বুক ফেয়ার বিশ্বজুড়ে বিপুল জনপ্রিয় একটি বইমেলা। প্রতিবছর মধ্য অক্টোবরে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ফ্রাঙ্কফুর্ট ট্রেড ফেয়ার গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা। প্রকাশক এবং প্রকাশনা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতব্যক্তিরাই এ মেলার আয়োজন করে থাকেন। মেলা চলে পাঁচ দিন ধরে। প্রথম তিন দিন নির্ধারিত থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের জন্য। শেষের দুই দিন উন্মুক্ত থাকে সর্বস্তরের জনগণের জন্য।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মেলার একটি। সেই ১৭ শতক থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই মেলা। মাঝখানে কিছু দিন বন্ধ থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে সেন্ট পল চার্চে এই বইমেলা পুনরায় শুরু হয়। এরপর থেকে মেলাটি নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় প্রায় তিন লাখ বইপ্রেমীর সমাগম ঘটে থাকে। তবে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা মূলত বই বিক্রির পরিবর্তে বই প্রকাশনাসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আইন, লাইসেন্স ফি এবং ট্রেডিংয়ের কাজ করে থাকে।

লন্ডন বইমেলা
লন্ডন বইমেলা

লন্ডন বইমেলা
প্রতিবছর মার্চে অনুষ্ঠিত হয় ১২ দিনের এই মেলা

লন্ডন বইমেলার নাম শোনেনি, এমন বইপ্রেমী বিশ্বে খুঁজে পওয়া ভার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলার একটি। তবে আয়তনের দিক থেকে এই মেলা ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার মতো বড় নয়। প্রতিবছর মার্চ মাসে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ১৯৭৬ সাল থেকে লন্ডন বইমেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে কখনো কখনো বিশেষ পরিস্থিতির কারণে মেলার তারিখ ও স্থান পরিবর্তন হয়। এ রকম ঘটেছিল ২০০৬ সালে। ওই বছর মেলাটি হয়েছিল লন্ডনের অলিম্পিয়া এক্সিবিশন সেন্টারে। পরের বছর আবার মেলাটি হয়েছিল ডকল্যান্ডের আর্ল কোট এক্সিবিশন সেন্টারে।

লন্ডন বইমেলার মেয়াদ ১২ দিন। তবে আয়োজনের প্রথম দিকে এর মেয়াদ ছিল সাত দিন। জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তী সময়ে মেলার মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এই মেলার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে বিশ্বের শতাধিক দেশ থেকে প্রায় ২৫ হাজার প্রকাশক, বই বিক্রেতা, সাহিত্য প্রতিনিধি, লাইব্রেরিয়ান, সংবাদকর্মী অংশ নেন। ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলার সঙ্গে এই মেলার বড় পার্থক্য হলো, এটি প্রকৃত অর্থে প্রকাশকদের মেলা। প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রচারের জন্য, অন্য প্রকাশক থেকে বইয়ের স্বত্ব অথবা বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনাবেচার জন্য প্রকাশকেরা এই মেলায় অংশ নেন। এই মেলায় সাধারণ পাঠকের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।

হংকং বইমেলা
হংকং বইমেলা

হংকং বইমেলা
প্রতিবছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত হয় ১০ দিনের এই মেলা

ওয়েলসের ছোট্ট এক শহর হে-অন-ওয়ে। শহরটির আরও ছোট নাম ‘হে’। হে’র আরেক নাম ‘বইয়ের শহর’। এখানেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় হংকং বইমেলা। মেলা চলে ১০ দিন ধরে। মেলায় প্রায় ৮০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। হংকং বইমেলা প্রথম শুরু হয় ১৯৯০ সালে। বর্তমানে হংকংয়ে এটি বছরের একটি প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

প্রতিবছর মধ্য জুলাইয়ে শুরু হয় হংকং বইমেলা। হংকং কনভেনশন অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত মেলার উদ্দেশ্য, হংকংয়ের জনগণের জন্য কম দামে দেশি বা বিদেশি বই পৌঁছে দেওয়া। এই মেলা মূলত আন্তর্জাতিক বই ব্যবসাকে উৎসাহিত করে।

তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা
তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা

তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা
প্রতিবছর মে মাসে অনুষ্ঠিত হয় ১০ দিনের এই মেলা

ইরানের রাজধানী তেহরানে ২৪ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা। এই মেলায় প্রায় ২০ লাখ সাহিত্যপ্রেমী অংশগ্রহণ করে থাকেন। মূলত ইসলামের ইতিহাস, ইরান ও বিশ্বের ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাস এবং পবিত্র প্রতিরক্ষাযুদ্ধ সংক্রান্ত বইয়ের জন্য তেহরান আন্তর্জাতিক বইমেলা বিখ্যাত।

বাংলাদেশের বইমেলার সঙ্গে এই মেলার একটি বিশেষ মিল হচ্ছে, তেহরান বইমেলাও ইরানিদের কাছে প্রাণের মেলার মতো। লেখক-পাঠক আর গ্রন্থানুরাগীদের ভিড়ে প্রতিদিনই মেলা থাকে জাঁকজমকপূর্ণ। প্রতিবছর মে মাসের ৪ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।