সন্ধ্যানদীর জলে: শিকড় অনুসন্ধানের দীর্ঘ যাত্রা

একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি
তোমার জন্যে গলির কোণে
ভাবি আমার মুখ দেখাব
মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।
কবি শঙ্খ ঘোষের এই কবিতার উদ্ধৃতিটি অনেকটা খাটে তাঁর নিজের গদ্যের বেলায়। তাঁর গদ্য এত চমৎকার–হৃদয়গ্রাহী, অথচ কবিতার শক্তি এবং বিজ্ঞাপনের কাছে সেটা তুলনামূলক ম্রিয়মাণ হয়ে আছে। শঙ্খ ঘোষের গদ্য মানেই কাব্যময়, স্বাদু, সরল ও গভীর। তাঁর দেখার চোখ একদম আলাদা, রন্ধ্র বেয়ে আরও গভীরে পৌঁছে যায়। অথচ কবি শঙ্খের তুলনায় গদ্যকার শঙ্খ যেন কিছুটা (সম্ভবত অনেকটাই) কমই পঠিত পাঠকের কাছে।

আমরা অনেকেই জানি, শঙ্খ ঘোষের জন্ম বাংলাদেশে। জীবনের সূচনা, প্রথম বিকাশ এখানেই। সে স্মৃতি তাঁকে আঁকড়ে রেখেছে সারা জীবন। এর মধ্যে এ দেশে যাওয়া–আসা, সাহিত্য ইত্যাদি নানা কারণে বন্ধন দৃঢ় হয়েছে। ‘সন্ধ্যানদীর জলে’ বইটি মূলত বাংলাদেশ প্রসঙ্গেই নানান সময়ে লেখা তাঁর স্মৃতিকথা, ভ্রমণপঞ্জি ও অন্তরঙ্গ বিশ্লেষণময় লেখাগুচ্ছের সংকলন। লেখাগুলো পরিশ্রম করে খুঁজে সংকলিত করেছেন কবি, গদ্যকার পিয়াস মজিদ। ‘একুশে, একাত্তর ও নববর্ষ’, ‘ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান’, ‘গানের ভিতর দিয়ে’, ‘শিক্ষা আন্দোলন’ ও ‘স্মৃতি, ভ্রমণ’—এই পাঁচটি পর্বে বিভক্ত হয়েছে বইটি। সন্ধ্যানদী আসলে জীবনের সায়াহ্নের প্রতীক। সায়াহ্নে এসে যে নদীর জল তাকে তারিত ও তাড়িত করে, তার প্রতীকী নাম সন্ধ্যানদী। 

প্রথম পর্বের নাম ‘একুশে, একাত্তর ও নববর্ষ'। পর্বের নামই বলে দেয়, এ পর্বে কী কী বিষয়ে রচনা আছে। প্রথম রচনাটির নাম ‘কালো মাটির কালো পুতুল’। লক্ষণীয় যে, লেখাটির প্রকাশকাল ১৯৭১ সাল। শুরুতেই তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ইত্তেফাকের অফিস গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তাহলে জসীমউদ্‌দীন থেকে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ—বাংলাদেশের এই কবিরা কোথায়?’ স্পেনের গৃহযুদ্ধে যেমন আলবের্তি ও তাঁর বন্ধুরা লিখছিলেন উদ্বোধিত করার জন্য, বাংলাদেশের কবিরাও কি তা–ই করছেন? বেঁচে আছেন তাঁরা? নাকি তাঁরা লোরকার মতো প্রাণ দিয়েছেন? শঙ্খ ঘোষ সে সময় আতঙ্কিত বাংলাদেশের প্রিয় কবিদের নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন মুক্তবুদ্ধির মানুষগুলোকে নিয়ে। তাঁর ভয়ের কারণ, সৈন্যদের প্রথম লক্ষ্য এই মাথাগুলো, যাঁরা জাতীয়তাবাদী, অথবা যাঁরা প্রশ্ন করেন নিজেদের পরিচয় নিয়ে, যাঁদের কাছে সবার ওপরে আধুনিক মানুষ।
অবশ্য পরেই তিনি প্রকাশ করেছেন, ভয় নয়, এই কবিদের জন্য তিনি গর্ব বোধ করেন, কবিতার জন্য গর্ব বোধ করেন। তিনি জানেন, দীর্ঘ ২৫ বছর এ দেশের সত্তাকেন্দ্রের সন্ধান করেছিলেন কবিরা। তিনি বিস্মিত হয়ে বলছেন, কীভাবে ধ্বংসময় আক্রমণের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ উচ্চারণ করছে প্রেমের কবিতা। প্রেমের একটা পঙ্‌ক্তি কীভাবে মিছিলের স্লোগান হয়ে উঠছে। পুরো প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, দেশের কবিতা লিখতে হবে ভেবে কীভাবে দেশাত্মবোধক একটি চেহারা ঠেসে গিয়েছিল কবিতার ভেতর। বাংলাদেশের কবিরা সে জায়গা থেকে বের হয়ে এসে ভালোবাসার কথাই বলে এসেছিলেন। দিনে দিনে গড়ে তুলেছিলেন আত্মসন্ধানের ব্রত। তখন এক অজানা ভবিষ্যৎ সামনে। তিনি কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছিলেন না, ঠিক কতটা জটিল হবে কাঙ্ক্ষিত পরিণাম। কতটা মূল্য দিতে হবে সে পরিণামের জন্য। কিন্তু তবু তিনি বুঝতে পারছিলেন, বিপ্লবের এক নিঃসন্দিগ্ধ মূর্তি জেগে উঠছে দেশজুড়ে, প্রবাহিত হচ্ছিল জাতির মধ্যে নিজেদের আইডেন্টিটির প্রশ্নে। তিনি বলছেন, ‘আমাদের এ আত্মপরিচয়ের পথ তৈরি করছিল বাংলাদেশের কবিতা।’ তিনি স্বীকার করছেন, এক ‘দেশহীন দেশ’–এ তাঁদের বসবাস, এক ‘নির্ভাষ ভাষা’য় তাঁদের বাচালতা। কিন্তু ২৫ বছরে এসে বাংলাদেশের কবিরা পেরেছেন এক সরল সত্যের ওপর ভর করে দাঁড়াতে, দেশপ্রকৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে স্তবের মতো বলে উঠছেন তাঁরা, ‘কালো মাটির কালো পুতুল তুমি আমার!’ এই দেখাতেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন বাংলাদেশের জয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময়টিতে জীবননাশের ভয় নিয়েও কিছু কবিতা লেখা হচ্ছে, নাজিম হিকমত যেমন লিখেছেন। দুই মুক্তিযোদ্ধার হাত হয়ে আবু সয়ীদ আইয়ুবের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে সেসব কবিতা, ছাপা হচ্ছে কলকাতার পত্রিকায়। কবির আসল নাম শামসুর রাহমান। প্রয়াণের পর রাহমানের স্মৃতিতে লেখা এই ছোট কিন্তু আশ্চর্য গদ্যটি।
পরে শঙ্খ ঘোষ ঢাকায় আসেন ১৯৭৫ সালে। সেটাই তাঁর প্রথম ঢাকায় আগমন। তখন বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন। এসে এক লেখকের নঙ্গে দেখা করার সময় ভীষণ অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েন শঙ্খ। সেই লেখক অভিযোগ করেন যে শঙ্খ ঘোষ একাত্তরে তাঁদের খুন হওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি করেছিলেন। এটা শুনে সঙ্গে আসা বন্ধুটিও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। তিনি ব্যাখ্যা দেন যে শঙ্খ কত কিছু করেছেন সে সময় বাংলাদেশের জন্য। উৎকণ্ঠা জানিয়েছিলেন কয়েকজন লেখক-বন্ধুদের সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে, সে তালিকায় ওই লেখকও ছিলেন। দেখা গেল লেখক সেসব জানেনও। তাহলে? লেখকের অভিযোগ সেটা নিয়েই। জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল এই নাম নেওয়াতে। ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। তিনি ছিলেন শামসুর রাহমান। এরপর শঙ্খের ভাষায়: সত্যি তো, আবেগের টানে এদিকটা...এই ভয়াবহ সম্ভাবনার দিকটা তো খেয়াল করিনি আমরা।
শঙ্খ অপরাধ স্বীকার করে নেন তৎক্ষণাৎ। এখানে এসে চেনা যায় ব্যক্তি শঙ্খকে। এভাবে টুকরো টুকরো করে ব্যক্তিগত শঙ্খ ঘোষ নানাভাবে আসতে রয়েছেন গ্রন্থজুড়ে।
পরের রচনাটির শিরোনাম ‘আমাদের কাছে একুশে’ ২০১৬ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে লেখা। কলকাতার ভাষা-উদ্যানে ‘একুশে উদ্‌যাপন’ উপলক্ষে কথা বলেছেন। তখন কলকাতায় এ চর্চা ২০ বছরের। শঙ্খ সেখানে টেনে আনছেন বাংলাদেশকে—৬০ বছরেরও আগে যারা একুশে ‘উদযাপন’ করছে। তিনি তখন আফসোস করছেন তাঁদের ভাষার সাধনা নেই বলে। বর্ণনা দিয়ে যাচ্ছেন দুই বাংলায় ভাষার তুলনামূলক প্রভাব, প্রকৃতি, রাজনীতি নিয়ে। সে বর্ণনা পাঠকে আবেগাক্রান্ত করবে। এই নিবন্ধটি শেষ করছেন এভাবে: ‘আমাদের এই বাংলায় আজও পর্যন্ত একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মনে কোনো যথার্থ মর্যাদা পেয়েছে বলে মনে হয় না।’
পরের রচনাটি মূলত অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির শ্রুতলিখন। তিনি দুই বাংলার মধ্যে কোনো পার্থক্য না দেখার বিষয়টিতে জোর দিয়েছেন এই বক্তৃতায়।
পরের নিবন্ধটির শিরোনাম ‘নববর্ষের চিঠি’। নতুন বাংলা সনে ঢাকা থেকে যাওয়া একটি চিঠি তুলে ধরে শঙ্খ ঘোষ বলেছেন পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের কথা।
দ্বিতীয় পর্বের নাম ‘ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান’। পর্বের শিরোনামই বলে দেয় এ পর্বের বিষয়বস্তু। প্রথম রচনা ‘নদী নিঃশেষিত হলে’ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া কবি, শিক্ষাবিদ আনোয়ার পাশার একটি কবিতার শিরোনাম, যিনি লিখেছিলেন, ‘তবু ভালো লাগে হাসতেই, বাঁচতেই’। ২৫ মার্চ আনোয়ার পাশার ঘরে গুলি ঢুকেছিল, কিন্তু গায়ে লাগেনি। আনোয়ার বলতেন, তাহলে তিনি আর মারা যাবেন না। কিন্তু ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে মরে যেতে হয়েছিল। শবদেহের গায়ের চাদর দেখে আনোয়ার পাশাকে উদ্ধার করা হয়।
‘নদী নিঃশেষিত হলে’ নামের রচনাটি আনোয়ার পাশার স্মৃতি, তাঁর কবিতা নিয়ে লেখা। এটি আপনাকে আলাদাভাবে আগ্রহান্বিত করবে আনোয়ার পাশার কবিতার প্রতি।
পরের রচনাটি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ওয়াহিদুল হককে নিয়ে। তাঁর মৃত্যুতে ২০০৭ সালে প্রকাশিত।
কিংবদন্তি নওয়াজেশ আহমেদের স্মৃতিতে লেখা রচনাটির শিরোনাম ‘ধানসিড়ি নদীটির পাশে’। পরের রচনাটি ‘দেশাত্মার প্রতীক হয়ে দাঁড়ানো’ ছায়ানট নিয়ে। ছায়ানট তখন সুরম্য ছ-তলা এক স্থাপত্য। শঙ্খ বলছেন, ‘স্বপ্নকে নিয়ে কত দূর পৌঁছানো যায়, এই বাড়িটি দেখলে সে কথা একবার মনে পড়ে।’
পরবর্তী পর্বটির নাম ‘গানের ভেতর দিয়ে’। গান ও গানের মানুষ নিয়ে সজ্জিত হয়েছে এ পর্ব। প্রথম রচনা ‘আমাদেরই গান’ শুরু হয়েছে রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইফফাত আরা খানের একটি ঘটনা দিয়ে। ইফফাত আরা তখন কলকাতায় গিয়েছেন আমন্ত্রণে গাইতে। রবীন্দ্রসংগীত গাইছিলেন তিনি। তখন শ্রোতাদের একজন বলেন, ‘এসব নয়, আমরা শুনতে চাই আপনাদের গান।’ বিস্মিত, ব্যথিত ইফফাত আরা বলেছিলেন, ‘কিন্তু এ তো আমাদেরও গান!’ সে অনুষ্ঠানের কথা শঙ্খ ঘোষ শুনেছিলেন কোনো এক বন্ধুর কাছে। শঙ্খের মন্তব্য, ইফফাত আরার বলা উচিত ছিল, ‘এ তো আমাদেরই গান!’
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো এক পয়লা বৈশাখের বর্ণনা দেন। পরে দেখেছেন বসন্তবরণ অনুষ্ঠান। শঙ্খ খেয়াল করেন, সেখানে পাঠ করা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, গাওয়া হচ্ছে গান। এর সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ছায়ানটের কথা। এখানে তিনি আবার ছায়ানটের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বলেছেন সনজীদা খাতুন আর ওয়াহিদুল হকের কথা। তাঁরা দুজন তখন ব্যস্ত সংগীতশিক্ষক সম্মেলন নিয়ে। শঙ্খ ঘোষ অবাক হয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে কতটা ধারণ করে এ দেশ, তা দেখে। এবং সে প্রসঙ্গেই তাঁর মনে হয়েছিল, ইফফাত আরার বলা উচিত ছিল, 'রবীন্দ্রনাথের গান? সে তো আমাদেরই গান!’
পরের লেখাটি সনজীদা খাতুনকে নিয়ে, রবীন্দ্রসংগীতে তাঁর নিবেদন, আত্মপরিচয় অনুসন্ধান নিয়ে।
পরের পর্ব ‘শিক্ষা-আন্দোলন’। এ পর্বের লেখাগুলোর ক্ষেত্রে শঙ্খ ঘোষ সরাসরি সাহিত্য-সংগীত থেকে সরে এসেছেন। প্রথম লেখাটি বুয়েট থেকে পাস করা স্থপতি আবুল হাসনাত মোহাম্মদ রেজোয়ানকে নিয়ে, যিনি চাকরিবাকরি না করে চলনবিল অঞ্চলের অবহেলিত মানুষজনের জন্য কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। সে পরিকল্পনার ফসল নৌকাস্কুল। এই রচনাটি মূলত সেই নৌকাস্কুল নিয়ে।
পরের রচনাটির প্রকাশকাল ২০০৮ সাল। মৌলবাদীদের আবদারে দাবি উঠেছে গোটা বাংলাদেশ থেকে সমস্ত ভাস্কর্য সরাতে হবে। কিন্তু এই মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখেছিলেন শঙ্খ। এক বিদূষী মেয়েকে চিনেছিলেন তিনি, যে পড়াশনার ফাঁকে ফাঁকে স্কুলে স্কুলে গিয়ে পড়ায়।
‘স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়’ শিরোনামের লেখাটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র নিয়ে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং তাঁর বন্ধুদের গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে তিনি স্বপ্ন দেখেন, একদিন হীন সংকীর্ণতার আয়োজনকে মুছে দেবে একদল মুক্তবুদ্ধির ছেলেমেয়ে।
সব থেকে আকর্ষণীয় পর্বটির নাম ‘স্মৃতি, ভ্রমণ’। সর্বশেষ পর্ব। এ পর্ব শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশের জলে’ শিরোনামের একটি লেখা দিয়ে। অনেকগুলো উপশিরোনাম আছে লেখাটিতে। ‘পদ্মা ১৯৮৪’–তে এক আপ্লুত কুয়াশায় তিন বন্ধু ঘুরে বেড়াচ্ছেন লঞ্চে। কী অদ্ভুত বর্ণনা নদীর। অথই জলে দাঁড়িয়ে এক বন্ধুর মনে পড়ে যায় দৌহিত্রী অথইয়ের কথা।
এরপর ব্রহ্মপুত্র, রূপসা, ঠিক ৫০ বছর পর এক রোমহর্ষতার মধ্য দিয়ে দেশের বাড়িতে যাওয়ার স্মৃতি নিয়ে সন্ধ্যা আর মেঘনা নিয়ে আলাদা আলাদা লেখা। পরের রচনাটির শিরোনাম ‘বাড়িযাওয়ার দিন’। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত লেখাটিতে তাঁর শৈশব–ছেলেবেলার স্মৃতিময় হাহাকার ফুটে উঠেছে করুণভাবে। সে কারুণ্য পাঠক ‘উপভোগ’ করবেন, নিজেকে খুঁজে পাবেন এক গ্রামে, উৎসবে।
‘দেশহারানো মানুষ’ শিরোনামের লেখাটিতেও অনেকগুলো উপশিরোনাম আছে। গল্পের ছলে লুকিয়ে থাকা গভীর জীবনবোধ আর বেদনা মিশে আছে প্রতিটি লেখায়।
৫০ বছর পর শিকড়ের খোঁজে ফিরে আসা নিয়ে কথোপকথনের ঢঙে লেখা ‘পঞ্চাশ বছর পর’ শিরোনামের লেখাটি নস্টালজিক শঙ্খ ঘোষকে সামনে এনে দাঁড় করাবে আমাদের। ‘কই যাইত্যাছি জানি না’ শিরোনামের লেখাটির অভিজ্ঞতাও পাঠককে আনন্দ দেবে।
একদিন শিকড় ছিঁড়ে গিয়েছিল যে ভিটা থেকে, সে শিকড় কি আর জোড়া লেগেছে? পুরো বইটি মূলত শঙ্খ ঘোষের সে শিকড় অনুসন্ধানেরই গল্প। প্রতিটি লেখায় নিয়ে বাংলাদেশের প্রতি কী যে ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে শঙ্খ ঘোষের! কী মায়া, হাহাকার! প্রতিটি লেখা আনন্দ দেবে। ঋদ্ধ করবে, আচ্ছন্ন করে রাখবে জীবনভর।