কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের নির্দেশনা

আমাদের কর্মক্ষেত্রে এখন প্রতিনিয়তই করপোরেট কালচারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রাণপণ প্রয়াস চালাতে হয়। বিশেষত মনস্তাত্ত্বিকভাবে। ধরুন, আপনি চাকরি করেন এমন একটি প্রতিষ্ঠানে, এমন এক দপ্তরে, সে সরকারি বা বেসরকারি যা–ই হোক না কেন, আপনার মাথার ওপর থাকেন একজন ইমিডিয়েট বস। সেই বসের ওপরে থাকেন আরও দু-একজন বস, শেষে থাকেন সেই সুপ্রিম বস, যাঁর নির্দেশে আপনাদের পুরো প্রতিষ্ঠান চলে। আবীর শওকত হায়াতের প্রথমা প্রকাশন থেকে সদ্য প্রকাশিত বস ম্যানেজমেন্ট: কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের উপায় শিরোনামের বইয়ে সেই নানা স্তরের বসকে কীভাবে সামলে নিয়ে আপনি কর্মক্ষেত্রে সাফল্য বা উন্নতির মুখ দেখবেন, ধাপে ধাপে যুক্তিসহকারে তা তুলে ধরা হয়েছে দৃষ্টান্তের পর দৃষ্টান্ত দিয়ে।

বইয়ের লেখক ভূমিকায় জানাচ্ছেন, ‘ম্যানেজমেন্ট লিটারেচারে সাব-অর্ডিনেট ও টিম পরিচালনার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকলেও বসকে ম্যানেজ করার গাইডলাইন খুব কমই পাওয়া যায়।’ ফলে তাঁর এ বই রচনায় উদ্যোগী হওয়া। এ সুবাদেই তিনি আমাদের জানাচ্ছেন, ‘বস ও সাব-অর্ডিনেট সম্পর্কিত অনুমিতি, নিয়মকানুন ও বসের কাজ করার ধরন জানা থাকলে বসকে ম্যানেজ করা তেমন কঠিন নয়। একই সঙ্গে তাঁর পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো জানা থাকলে সহযোগিতা পাওয়া সহজ হয়। এ বই বৃহত্তর পরিসরে সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতি সম্পর্কে কর্মজীবীকে প্রস্তুত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করি।’

আবীর শওকত হায়াতের প্রত্যাশা খুবই সঙ্গত। তাঁর এই সঙ্গত আশার প্রতিফলন ঘটিয়ে যে বইটির জন্ম দিয়েছেন, তা চলমান কালের একান্ত উপযোগী। সেই উপযোগিতার ধারাগুলো লেখক ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছেন এভাবে—বস এবং সাব-অর্ডিনেট সম্পর্কের মূলনীতি, বস কে? বসের শ্রেণিবিন্যাস, প্রজেক্ট বস, ম্যাট্রিকস রিপোর্টিং, মালিকই যখন লাইন বস, বস ম্যানেজমেন্টের মৌলিক অনুমিতি, বসের কাজের ধরনসমূহ, বস ম্যানেজমেন্টের নিয়মনীতি, বস যা বলবেন না, অথবা যে বস আপনাকে পেছনে টেনে ধরেন, কেন এসব হয়, মাইক্রো–ম্যানেজিং বস, সেকেন্ড ইনিংস বস, বসের পোষ্য, উদাস বস, দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারী বস, বাজে বস, কেন তাঁরা এমন, চোরের চক্র, কীভাবে বুঝবেন, বস ও সাব-অর্ডিনেট সম্পর্কের দ্বিধাদ্বন্দ্ব, আনুগত্য বনাম প্রতিযোগিতা, দক্ষতা বনাম অযোগ্যতা, স্বাতন্ত্র্যবোধ বনাম একাত্মবোধ ও সততা বনাম অস্বীকৃতি শিরোনামের অধ্যায় ও উপ-অধ্যায়গুলোর পাঠ চাকরিজীবীদের চোখ এমনভাবে খুলে দেবে যে, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করবেন, এত দিন এত কিছু অজানা ছিল কেন? নিজের দোষগুণ এবং বসের দোষগুণের বিচার শেষে পৌঁছাবেন সেই সিদ্ধান্তে, যা চাকরিজীবীদের সাহায্য করবে পদোন্নতিসহায়ক আচরণ শিখতে কিংবা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

মোট ৩০টি বিদেশি, বিশেষত ইংরেজি ভাষায় লেখা এ–সংক্রান্ত গ্রন্থের ভাবানুসরণে লেখা হয়েছে বস ম্যানেজমেন্ট। ঝরঝরে ভাষায় লেখা বইয়ে শুধু বসের সঙ্গ মানিয়ে নেওয়ার কথাই বলা হয়নি, বলা হয়েছে বস ও তাঁর সাব-অর্ডিনেটের মধ্যকার সম্পর্ক যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে উন্নীত করার উপায় প্রসঙ্গেও। বইটি এ যুগের প্রত্যেক চাকরিজীবীর জন্য অবশ্যপাঠ্য। পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে (প্যাভিলিয়ন: ১৫)।