এ গল্পের শেষ নেই শুরুও ছিল না

>আগামীকাল বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী। জীবদ্দশায় এ গল্পের শেষ নেই শুরুও ছিল না নামে একটি মহাকাব্য লিখতে শুরু করেছিলেন তিনি। লিখেছিলেন অনেক দূর পর্যন্ত। তবে মহাকাব্যটি কবি শেষ করে যেতে পারেননি। তাঁর সেই অসমাপ্ত মহাকাব্যটি এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে সরলরেখা প্রকাশন থেকে। এখানে ছাপা হলো ওই মহাকাব্যের অংশবিশেষ।
আল মাহমুদ  (১১ জুলাই ১৯৩৬—১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)
আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬—১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)

ইনিয়ে-বিনিয়ে সাপ চলে ধীরগতি
যেখানে রয়েছে সেই সুন্দরী যুবতী।
তাহার রূপের ছটা ভাষায় বর্ণনা
কেউ তো পারেনি দিতে, কেউ পারে না।
হঠাৎ দাঁড়াল ইভ কী ভেবে কে জানে
কোন–বা মায়ার টানে ফল পেড়ে আনে।
কী যে অপরূপ ঘ্রাণ ফলের নরমে
ইভকে আকুল করে শরমে ভরমে।
ফলের সুরভি যায় ইভের তনুতে

সারা অঙ্গ শিহরায় রক্তের অণুতে।
দারুণ ব্যাকুল দেহ যেন মূর্ছা যাবে
নাভিতে কম্পন ওঠে বুক দুটি কাঁপে।
বুকের কম্পনে কাঁপে নিখুঁত যুবতী
ঘটনার পরম্পরা চলে দ্রুতগতি।
দৃশ্যপট বদলায় অকস্মাৎ দ্রুত
ঘটনার ঘনঘটা হয় স্থানচ্যুত।
ফল খেয়ে জল খাও এই প্ররোচনা
হঠাৎ মানবদেহে প্রেমের বেদনা।
সূচনায় অনুভূতি এই কি প্রথম
না না করে ওঠে গায়ের পশম।

দ্বিধাগ্রস্ত তনুমন কাঁপছে ভীষণ
স্বর্গের ভেতরে বায়ু বয় অনুক্ষণ।
সবকিছু নড়ে ওঠে অনড় কেবল
একটি নারীর নাভি অচল অটল।
যেন পদ্মফুল ওই পাপড়ির ভেতরে
পরাগরেণুর ছোঁয়া নিল চুরি করে।
জ্ঞানের ফসল বুঝি ফল হয়ে আছে
শিশুর মনন নিয়ে ইভ তার কাছে।
কে জানে কিসের টানে ইভের গুঞ্জন
গানের সুরের কলি করে উচাটন।

প্রেম নয় কাম নয় তনুতে লবণ
নীরবে ঝরিয়া যায় বুকের বসন।
সিক্ত হয় বেশবাস সিক্ত হয় নারী
যেনবা নারীর পায়ে শত তরবারি।
লুটিয়ে দিয়েছে শির প্রবল পুরুষ
যতমান হতমান অপমান হুঁশ।

যখন পতন আসে কে ঠেকাতে পারে
না মানে যুক্তি সে তো চলে অন্ধকারে।
হাতড়ে খুঁজতে চায় রক্ষার উপায়
হাতে চলে যায় তার জানে না উপায়।

 আঙুল স্পর্শ করে বারণের ঘরে
ভেতরে কাঁপন ওঠে, নারীর জঠরে।
মহাভ্রান্তি কী অশান্তি নারীর উদর
আবারিয়া রাখে বুঝি জ্বরে থরথর।
কম্পনের অনুভূতি রোদন কাহার
কে যেন ফুঁপিয়ে ওঠে সন্তান আমার।
আমার সন্তান এত আমি তার মা
আর কেন পরিচয়, আর লাগে না। 

আল মাহমুদের মহাকাব্যের অংশবিশেষ আবিদ আজমের সৌজন্যে প্রাপ্ত