গালিবের সম্ভার এল বাংলা হয়ে

কবি না হয়েও জাভেদ হুসেন বাংলাভাষীদের কবিতা পাঠে প্রতিনিয়ত বৈচিত্র্যের স্বাদ দিয়ে যাচ্ছেন। উর্দু ও ফারসি সাহিত্য থেকে চিরায়ত এবং সাম্প্রতিক কবিতার অনুভূতি ভান্ডার তাঁর সূত্রেই নিয়মিত পড়তে পারছে বাংলাদেশ।

এখানে অনুবাদক অনেকে আছেন। অনেকে তাঁরা উর্দু-ফারসি সাহিত্য থেকে অনুবাদও করছেন। কিন্তু জাভেদ হুসেন খুব নিয়মিত। বৈচিত্র্যে ভরপুর এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁর অনুবাদ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। উপরন্তু তিনি অধিকাংশ সময়ই অনুবাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা বা পর্যালোচনা যুক্ত করেন, যা পাঠককে গজল ও নজমগুলোর পূর্বাপর বুঝতে সাহায্য করে। এসব ভূমিকা ও পর্যালোচনায় তিনি যেকোনো উর্দু-ফারসি সাহিত্য পাঠের রাজনৈতিক পটভূমি ও তাৎপর্যটিও ব্যাখ্যা করেন, যা বাংলাভাষীদের জন্য অমূল্য এক সহায়তা।

সর্বশেষ এই অনুবাদক উপহার দিলেন মির্জা গালিবের গজলসমগ্র। প্রথমার অনিন্দ্য সুন্দর এক প্রকাশনা এটা। ২৩৫টি গজলের অনুবাদ আছে এই প্রকাশনায়। কিছু গজল ফারসি থেকেও অনূদিত। উর্দু থেকে অনুবাদ হওয়া গজলের পাশে উর্দু ও ফারসি থেকে অনুবাদ হওয়া (প্রায় ৬০টি) গজলের পাশে সেগুলোর ফারসি রূপও ঠাঁই পেয়েছে গ্রন্থে।

সাহিত্যসমালোচকেরা অনেকেই বলেন, উর্দু ভাষা ও গালিব প্রায় সমার্থক। গুরুত্বপূর্ণ আরেক উর্দু কবি ইকবাল বলতেন, গালিবের একমাত্র দোসর হতে পারেন ভাইমারের বাগানে শুয়ে থাকা গ্যোটে। মির্জা গালিব তাই উপমহাদেশের গর্ব। তাঁকে শতভাগ সহিভাবে বাংলায় তরজমা সহজ নয়। জাভেদ হুসেন এ ক্ষেত্রে সফল। উর্দু ও ফারসিতে তাঁর পাণ্ডিত্য প্রশ্নাতীত।

এই অনুবাদকর্ম উৎসর্গ করেছেন তিনি আরেক গালিব ভাষ্যকার আবু সয়ীদ আইয়ুবকে। জাভেদ হুসেন সেখানে আবু সয়ীদ আইয়ুবকে অভিহিত করেছেন ‘বাংলা ভাষায় মির্জা গালিবের প্রতি সুবিচার করার যোগ্যতাসম্পন্ন প্রথম মানুষ’ হিসেবে। বলা বাহুল্য, জাভেদ হুসেনও এ রকম সুবিচারকারী আরেক ব্যক্তি, যিনি অনুবাদক ও টীকাকারদের পরম্পরাকে সম্মান জানাতেও ভোলেন না।

দুই পৃষ্ঠার অধিক এক পরিসরে এই গ্রন্থে প্রায় পূর্ণাঙ্গ গালিবকে পাই আমরা। গালিবের হাসি-তামাশা, কৌতুক ছাপিয়ে প্রতিটি গজলে উঠে আসে চির আধুনিক এক প্রেমিক ও বিরহী, যার প্রেম ও হাহাকার প্রতিনিয়ত ধাবিত হয় সৃষ্টিকর্তার দিকে এবং একই সঙ্গে শরীরী মানবীকে ঘিরেও। গালিব মুখ্যত দৃশ্যকল্পের কবি। এ রকম প্রতিটি দৃশ্যকল্পে আবার তিনি একরূপ গতি স্থাপন করেন। দুই লাইনে নিমেষে একটা দৃশ্য সৃজন করে সেখানে নিজের সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতাকে জগতের সর্বপ্রান্তের চিরায়ত প্রেমিকের অভিজ্ঞতায় পরিণত করেন তিনি। জাভেদ হুসেনের অনুবাদে সেই বৈশ্বিকতা বাংলায় এসে একদম কমে না। প্রচ্ছদ ভুলে পড়তে পারলে মনে হয় এ যেন বাংলার কোনো কবিরই অভিজ্ঞতা, যাকে তিনি সফলতার সঙ্গে সবার বয়ানে পরিণত করেছেন। 

অনুবাদগ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
মির্জা গালিবের গজল
উর্দু ও ফারসি থেকে ভাষান্তর
জাভেদ হুসেন
২০১৯
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২০৮
দাম: ৩০০ টাকা
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
প্রথমা