'ঢাকা আর্ট সামিট' কেমন দেখলাম

ইন্টারমিডিয়ারি, ভারত খের
ইন্টারমিডিয়ারি, ভারত খের

এক. 

সময়ের পরিক্রমায় দৃশ্যশিল্পে (ভিজ্যুয়াল আর্ট) যেসব পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার ব্যঞ্জনা নানাবিধ। শিল্পীর চিন্তাধারা তো বটেই, শিল্পের ভাষা, শিল্পকর্মের মাধ্যম-উপকরণ, শিল্পকর্মের উপস্থাপনরীতির সঙ্গে বদলে গিয়েছে শিল্প প্রদর্শনীর চিরায়ত ভঙ্গিমা। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে জাতি-রাষ্ট্রের নামে সারা পৃথিবীর ভূখণ্ড ভাগ করে নেওয়া কর্তৃত্বশীল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে শিল্পীর আকাঙ্ক্ষা ও সৃষ্টির সঙ্গে বৃহদায়তন সমাজের সম্পর্কও বদলে গেছে ব্যাপকভাবে।

শিল্পচর্চার ধারা এখন যতটা না দক্ষতাভিত্তিক, তার চেয়েও বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক, শিল্পীর কর্মসীমানা যতটা বিশেষায়িত, তার চেয়ে বেশি সামগ্রিক। ধারণাপ্রধান (কনসেপচুয়াল) কাজের এই নতুন বাস্তবতায় তৈরি হয়েছে নতুন নতুন শিল্প সম্পর্ক, পেশা এবং বাস্তবতা। বিশ্বায়নের ছাতার নিচে ‘আত্মপরিচয় সংকটের রাজনীতি ও মোকাবিলা’ ভাবনার স্তরে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। ব্যক্তি এবং সামষ্টিক ‘সত্তা’ হিসেবে পরিচয়ের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, শিল্পকলা তার মধ্যে অন্যতম।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের দৃশ্যশিল্পের যেসব কর্মযজ্ঞ বিশ্বশিল্পের দরবারে হাজির হচ্ছে, ‘ঢাকা আর্ট সামিট’ তার মধ্যে অন্যতম। ইতিমধ্যে তা দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শিল্পোৎসব হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। দ্বিবার্ষিক ধারায় পরিচালিত এই প্রদর্শনীর পঞ্চম আসর অনুষ্ঠিত হলো এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ থেকে ১৫ তারিখে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্রাঙ্গণ এবং গ্যালারিতে বাংলাদেশসহ সর্বমোট ৪৫টি দেশের পাঁচ শতাধিক শিল্পী, কিউরেটর, শিল্প সমালোচক, স্থপতি, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় এবারের আয়োজন। যেখানে পেইন্টিং, ভাস্কর্য, স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট, ভিডিও আর্টের মতো নানাবিধ মাধ্যমের শিল্পকর্ম স্থান পায় এবং দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিম্পোজিয়ামসহ কয়েকটি সেমিনার এবং কিছু কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজনের অংশ হিসেবে।

‘Seismic Movements’—‘সঞ্চারণ’ ছিল এবারের আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য। আয়োজকদের মতে, সিসমিক মুভমেন্ট ব্যাপক, বাহ্যিক ও খুবই দৃশ্যমান হয়ে থাকে।

যে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা বা বিষয়কে ভিত্তি করে এই মূল ধারণা (সিসমিক মুভমেন্ট—সঞ্চারণ) সংগঠিত হয়েছে, তা হলো ভূতাত্ত্বিক আন্দোলন, ঔপনিবেশিক আন্দোলন, ব্যক্তিগত আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলন, নারীবাদী ভবিষ্যৎ, সামষ্টিক আন্দোলন, স্থানিক আন্দোলন, আধুনিক আন্দোলন, চলমান ছবি এবং সামদানি আর্ট অ্যাওয়ার্ড। সঙ্গে মুজিব বর্ষের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর ‘লাইটিং দ্য ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনী স্থান করে নেয় এই আয়োজনে। মূলত এই বিষয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ প্রদর্শনীটি রূপায়িত হয়।

প্রদর্শনীতে সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক ধারণার অংশ হিসেবে প্রতিটি শিল্পকর্ম স্থান পেলেও তা বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়নি, বরং প্রতিটি বিষয়ের মধ্যে আন্তসংযোগের ধারা বজায় রাখতে শিল্পকর্মগুলোকে পাশাপাশি রেখেই উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন জাতীয় চিত্রশালার সামনের অংশ অর্থাৎ স্কাল্পচার গার্ডেনে বিখ্যাত শিল্পী ভারতী খেরের ‘ইন্টারমিডিয়ারিস’ (চিত্র-১) শিরোনামের ভাস্কর্যটি এবং শিল্পী ডেমিয়েন ওর্তেগার ‘সিস্টারস; হেরমেনাস (মাকুয়েতে)’ (চিত্র-২)-এর স্তূপাকৃতির স্থাপনাশিল্প যথাক্রমে ‘সামাজিক আন্দোলন ও নারীবাদী ভবিষ্যৎ’ এবং ‘সামষ্টিক আন্দোলন’-এর অংশ হিসেবে প্রদর্শনীতে স্থান পেলেও তা ব্যবহার-উপযোগিতা, কাজের গুরুত্ব ও স্থান বিবেচনায় কাজ দুটিকে পাশাপাশি উপস্থাপন করা হয়েছে। শিল্পী রানা বেগমের ‘রেফারেন্স ইমেজ ফর নাম্বার.৯৭২ ওয়াল পেইন্টিং’ (চিত্র-৩) কাজটি নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত সিঁড়ির দেয়ালে স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ প্রদর্শনীতে শিল্পকর্ম বিন্যাসের ক্ষেত্রে আয়োজকেরা ব্যবহার-উপযোগিতার পাশাপাশি দৃশ্যগত সংযোগের সূত্রকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন বিশেষভাবে।

জেসিয়া ম্যাকডেনিয়েল এর ‘ওনলি’
জেসিয়া ম্যাকডেনিয়েল এর ‘ওনলি’

দুই.
চেকিং গেট পেরিয়ে সামনে এগোতেই পুরোনো মাটির দেয়াল এবং ছোট ছোট দরজা। ভেতরে পা রাখতেই জৈব ও অজৈব উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত সাইট স্পেসিফিক শিল্পকর্মটি ‘দ্য থিয়েটার অব ডিজ-অ্যাপিয়ারেন্স’ (চিত্র-৪) পরিবর্তিত সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। শিল্পী আদ্রিয়ান ভিল্লার রোজাস প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের আবহে প্রকৃতি ও প্রাণের সম্পর্ক মনে করিয়ে দেন।

মেঘলা আকাশের নিচে বালুর স্তূপ। হঠাৎ সেখানে মানুষের ভিড় দেখে এগিয়ে যেতেই দেখা গেল আগুনের লেলিহান শিখা উড়ছে এবং বালুর ওপর দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে তরল ধাতব। তরল থেকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরের পর শিল্পী ও তাঁর সহযোগীরা ধাতব দণ্ডগুলোকে বালুতে পুঁতে দেন। শিল্পী রাফায়েল হেফটির এই পারফর্মেটিভ ইনস্টলেশন ‘কুইক ফিক্স রিমিক্স’ চিত্র-৫) -এর মাধ্যমে দেখাতে চেষ্টা করেন নাগরিক মানুষ কীভাবে বস্তুর চরিত্রকে বদলে দেয় তার সীমা না জেনে। সভ্যতা নামক এই ব্যবস্থা কীভাবে প্রকৃতির সাধারণ প্রবাহকে ভিন্নধারায় ঠেলে দেয়, সেটাই তিনি দেখাতে চেয়েছেন। দুটি কাজই ভূতাত্ত্বিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

ঔপনিবেশিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুটি শিল্পকর্ম বিশ্বের দুই প্রান্তের জনগোষ্ঠীর ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতার জানান দিলেও সংকটের কেন্দ্রবিন্দু (ঔপনিবেশিক শাসন) একই হওয়ায় এর আবেদন অভিন্ন সুরে বাজতে থাকে দর্শকের মনে।

স্বাধীন রাষ্ট্রে উপনিবেশের মগজজাত শাসনব্যবস্থা কীরূপে কাজ করে, তা শিল্পী ঢালী আল মামুনের স্থাপনাশিল্প ‘সেঞ্চুরি’স টেইল’ (চিত্র-৬) চিত্রিত হয়। ‘চা’ ও ‘নীল’ তাই শুধু রঙের অনুষঙ্গ হয়ে থাকে না, বরং তা বাংলার শাসনের ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমান সময়ের যোগসূত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়। গ্রামোফোন রেকর্ডারের আদলে উপস্থাপিত এই কাজে প্লাটারের ওপর স্থাপন করা ড্রয়িং, এর চক্রাকারে ঘূর্ণন প্রক্রিয়া এবং অবস্থান একদিকে যেমন ঔপনিবেশিক শাসনের বলয় হিসেবে আমাদের সমকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে নির্দেশ করে, অন্যদিকে এই সংকট মোকাবিলার উপায় হিসেবে ঘটনাটিকে ওপর থেকে দেখার ইঙ্গিত দেন।

আধুনিক সভ্যতার এই পর্যায়েও ঔপনিবেশিক শাসনের নির্মমতা কীরূপে বিদ্যমান, তার দেখা মেলে জেসিয়া ম্যাকডেনিয়েলের ‘ওনলি’ (চিত্র-৭) সিরিজের কাজে। তাঁর কাজের প্রেক্ষাপট হলো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের পাঁচটি জনগোষ্ঠী, যারা এখনো মার্কিন সেনাবাহিনীর কদর্য শক্তির পদতলে আমেরিকার উপনিবেশ হিসেবে শাসিত হচ্ছে। জেসিয়ার চিত্রকর্ম তাঁর জন্য একধরনের নিরাময় পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। সেক্সুয়াল ট্রমায় আক্রান্ত নারীদের প্রতিকৃতি অঙ্কনের মাধ্যমে তিনি নিজের সেক্সুয়াল ট্রমা থেকে নিরাময় লাভের চেষ্টা করেন।

সামাজিক আন্দোলন ও নারীবাদী ভবিষ্যৎ প্রকল্পের অংশ হিসেবে শিল্পী নীলিমা শেখের ‘বিয়ন্ড লস’ (চিত্র-৮) শিরোনামের কাজটি প্রণিধানযোগ্য। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নামে কাশ্মীরে চলা দমন, নিপীড়নের গল্প উঠে এসেছে তাঁর চিত্রপটে। বিশেষ করে তাঁর আখ্যানধর্মী ল্যান্ডস্কেপে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নারী সত্তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বৈষম্যগুলো চিত্রায়িত হয় সুনিপুণভাবে। অঙ্কনশৈলীর ক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ এশীয় রেখার সঙ্গে চাইনিজ দেয়ালচিত্র ও জাপানিজ স্ক্রলচিত্রের সমন্বয় ঘটান।

দলবদ্ধ বা সামষ্টিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশ-বিদেশের অসংখ্য সংগঠন অংশ নেয় এই আয়োজনে। বাংলাদেশের শনি-মঙ্গল আড্ডা, জোগ আর্ট স্পেস, আর্টপ্রো, ব্যাক আর্ট, উড়ন্ত, গিদরি বাউলি, বৃত্ত, আকালিকো, হিল আর্টিস্ট গ্রুপ, যথাশিল্পসহ আরও বেশ কয়েকটি সংগঠন অংশ নেয়। দেশের বাইরের সংগঠন হিসেবে ফ্রান্সের ‘আমান আইয়ান’, ইন্দোনেশিয়ার ‘রংরুপা’, নেপালের ‘আর্ট ট্রি’, ভিয়েতনামের ‘আর্ট লেবার’, মেক্সিকোর ‘কালপুল্লি টিকালকো’ নামক সংগঠন অংশ নেয়। ভিন্ন ভিন্ন কিউরেটরের অধীনে এসব শিল্পসংগঠন তাদের নিজ নিজ প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে আশির দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ সময়ের রাজনৈতিক বাঁকবদলের সঙ্গে শিল্পী-সাহিত্যিকদের ভূমিকা তুলে ধরতে কিউরেটর মুস্তাফা জামান ‘নোবডি টোল্ড মি দিয়ার উড বি ডেস লাইক দিস’ শিরোনামে একটি গবেষণাধর্মী প্রকল্প সাজিয়েছিলেন। যেখানে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে একদল শিল্পী-সাহিত্যিকের প্রচেষ্টায় আশির দশকের শিল্প-সাহিত্য, থিয়েটার, স্থাপত্য ও দৃশ্যশিল্পচর্চায় একটি নতুন ধারার জন্ম হয়, যা পরবর্তী চর্চাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষত দৃশ্যশিল্পে ‘সময়’ নামে আত্মপ্রকাশ করা একদল শিল্পীর কর্মকাণ্ড, যাঁরা অন্ধভাবে পশ্চিমা শিল্পের নির্বস্তুক চর্চা অনুসরণের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে শিল্পে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্থানিক বাস্তবতার প্রতিফলন খুঁজতে উদ্যত হয়েছিলেন। ঢালী আল মামুন, নিসার হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, হাবিবুর রহমান, তৌফিকুর রহমান, ওয়াকিলুর রহমান, দিলারা বেগম জলি, আজিজ শরাফী, সাইদুল হক জুইস, আলী মোর্শেদ নোটন, লালারুখ সেলিম ছিলেন সেই গ্রুপের সদস্য। জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, কামরুল হাসানের শিল্পভাষাকেও তাঁরা অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছিলেন।

এ বছর সামদানি আর্ট অ্যাওয়ার্ডের জন্য ১২ জন বাংলাদেশি শিল্পী মনোনীত হন। কিউরেটর ফিলিপ্পে পিরত্তের তত্ত্বাবধানে এবং সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এই ১২ জন শিল্পী তাঁদের নিজ নিজ প্রকল্প উপস্থাপন করেন। ডেলফিনা ফাউন্ডেশনের পরিচালক এরন সিজারের সভাপতিত্বে শিল্পী আদ্রিয়ান ভিলার রোজাস, শিল্পী জুলি মেহরিতু, কিউরেটর ইউজি জু ও ক্রিশ্চভ বাকারগিভের সমন্বয়ে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক জুরি কমিটি শিল্পী সোমা সুরভী জান্নাতকে তাঁর ‘ইনটু দ্য ইয়ার্ন, আউট ইন দ্য ওয়ান’ (চিত্র-৯) প্রকল্পের জন্য সামদানি আর্ট অ্যাওয়ার্ড-২০২০-এর সম্মাননা প্রদান করে।

সোমা সুরভী জান্নাতের কাজের বিষয় প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক। সভ্যতার বিভিন্ন স্তরে এই সম্পর্কের যে বিবর্তন, সেটি যেমন তিনি খুঁজতে চেয়েছেন, তেমনি সমকালীন বাস্তবতায় এই সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে বুঝতে চেয়েছেন নিজ সত্তার অস্তিত্বকে। ল্যান্ডস্কেপ তার বাস্তবতা উপলব্ধির এক অন্যতম মানদণ্ড আর ভিন্ন ভিন্ন ল্যান্ডস্কেপে নিজের অভিজ্ঞতাকে তিনি ড্রয়িংয়ের মাধ্যমে ধারণ করতে চেয়েছেন। অনুভূতি ব্যক্ত করতে ভিন্ন ভিন্ন ল্যান্ডস্কেপের মেটাফোর হিসেবে বেছে নিয়েছেন উঁচু-নিচু প্লাইউডের পাটাতন, যার ওপর স্বতঃস্ফূর্ত অভিজ্ঞতাসঞ্জাত সেই ড্রয়িংগুলো উপস্থাপন করেন। প্রদর্শনীকক্ষে এই স্থাপনার গাঠনিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দর্শক খুব সাবলীলভাবে একদিক থেকে প্রবেশ করে অন্যদিক দিয়ে বের হয়ে যেতে উদ্যত হয়। আর পথিমধ্যে এই স্থাপনার সঙ্গে দর্শকের যে কথোপকথন, তা পক্ষান্তরে শিল্পীর অভিজ্ঞতার সঙ্গে দর্শকের অভিজ্ঞতার সংযোগ তৈরি করে।

ঢাকা আর্ট সামিট প্রদর্শনীর এক অংশ
ঢাকা আর্ট সামিট প্রদর্শনীর এক অংশ

চার.
ঢাকা আর্ট সামিটের এবারের আয়োজনে সম্ভবত সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দর্শকের দেখা মিলেছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের দৃশ্যশিল্পের যেকোনো ইভেন্টে বিপুল পরিমাণ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এর আগে আর দেখা যায়নি। লাইভ পারফরম্যান্স এবং ইন্টার-অ্যাকটিভ শিল্পকর্মের চারপাশে দর্শকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ দেশের দৃশ্যশিল্পের সব শ্রেণির অংশীদারের জন্য যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি আয়োজকদের জন্যও প্রেরণাদায়ক। এ পর্যন্ত দৃশ্যশিল্পের বৈশ্বিক বলয়ে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ব্যতীত আমাদের অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড স্বমহিমায় স্থান করে নিতে পারেনি। এমনকি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এশিয়ান আর্ট বিয়েনালে আয়োজন করে গেলেও খোদ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যেও বাংলাদেশের শিল্পকলার কোনো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়নি। ফলত, কনসেপচুয়াল আর্টের যে ব্যাপকতা, সেখানে এখন পর্যন্ত আশার আলো হয়ে আসছে ঢাকা আর্ট সামিটের মতো এসব কার্যক্রম।

মো. বজলুর রশিদ শাওন
লেখক: ঢাকা আর্ট সামিট-২০২০-এ অংশগ্রহণকারী সংগঠন ‘শনি-মঙ্গল আড্ডা’-র একজন সদস্য