জসীম-জীবনচরিত মোট বইতে গিয়ে সে কী কাণ্ড!

অলংকরণ: আরাফাত করিম
অলংকরণ: আরাফাত করিম

জসীমউদ্‌দীনের বয়স তখন ১৩ কি ১৪ হবে। অষ্টম বা নবম শ্রেণির ছাত্র। তাঁর তখনকার জীবনের লক্ষ্য ছিল, অবশিষ্ট জীবন মানুষের উপকার করে কাটাবেন। কবি বা সাহিত্যিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তখনো তাঁর মনে তেমন উচ্চাশার নীড় বাঁধেনি। বই-পুস্তকে কোনো বড় আদর্শ চরিত্র দেখলে সেই চরিত্রের অনুকরণ করতে চাইতেন জসীম। যেমন বিদ্যাসাগরের জীবনী পড়ে একবার জানলেন যে তিনি কুলি হয়ে লোকের মোট বহন করে দিতেন। জসীমউদ্‌দীনদের বাড়ির পাশে ছিল রেলস্টেশন। একবার এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলেন। তবে সঙ্গের বোঝাটি কিছুতেই বহন করতে পারছিলেন না। স্টেশন থেকে শহর দুই মাইলেরও বেশি পথ। ঘোড়ার গাড়িতে নেওয়ার টাকাও তাঁদের নেই। তো জসীম গিয়ে ওই ভদ্রলোককে বললেন, ‘মোটটা আমাকে দিন। আমি গাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ তাঁরা রাজি হলেন। মোট মাথায় জসীম আগে আগে চলে যান। বৃদ্ধরা পেছনে পড়ে যান। জসীম অপেক্ষা করেন। তাঁরা এলে আবার মোট নিয়ে হাঁটেন। হঠাৎ বোঝা মাথায় জসীমউদ্‌দীন দেখলেন তাঁর বাবা দুই-তিনজন বন্ধুসহ গল্প করতে করতে রাস্তা দিয়ে আসছেন। বাবার সামনে পড়ার ভয়ে তিনি মোট মাথায় ঢুকলেন পাশের এক জঙ্গলে। এদিকে বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী মনে করলেন, তাঁদের মোট নিয়ে জসীমউদ্‌দীন পালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা শোরগোল আরম্ভ করলেন। বললেন, ‘তোমরা দেখো, একটা কুলি আমাদের মালপত্র নিয়ে এই জঙ্গলের পথে পালাল।’ এ কথা শুনে জসীমউদ্‌দীনের বাবা তাঁর বন্ধুদের নিয়ে ছুটে এলেন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সমানে চিৎকার করে বন-জঙ্গল তোলপাড় করে তুললেন। ওদিকে বালক জসীম তো ততক্ষণে মোটসহ ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে কাঁপছেন, না জানি এই অবস্থায় দেখে তাঁর বাবা কী বলবেন!

কিন্তু পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে। জসীমউদ্‌দীনের বাবাই তাঁকে সবার আগে দেখলেন। তিনি হাত ধরে ঝোপ থেকে তাঁকে টেনে বের করে আনলেন। ‘জসীম সাধু’ বলে গ্রামে জসীমউদ্‌দীনের নাম ছিল। ফলে উপস্থিত সবাই ব্যাপারটা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে খুলে বললেন। কিন্তু তাঁরা কিছুতেই তাঁকে বিশ্বাস করলেন না। জসীমউদ্‌দীনকে তাঁদের মোট আর বহন করতে দিলেন না। 

এ সময় কী করলেন জসীমউদ্‌দীনের বাবা? ছেলের ঘাড় ধরে ঠেলতে ঠেলতে তাঁকে বাড়ি নিয়ে গেলেন। আর বলতে লাগলেন, ‘পড়াশোনার নাম নাই, কেবল আজেবাজে কাজ নিয়ে সময় কাটাও।’

সূত্র: জসীমউদ্‌দীনের জীবনকথা