এক গুচ্ছ কবিতা

একজন বাবার গল্প

স্বপন বিশ্বাস

বাবার দীর্ঘ জেলজীবন।

কিশোরী বালিকা দু’পাশে বেণি দুলিয়ে
ছোট ভাইটিকে বাবার গল্প শোনায়
ছেলেটি মাথা নেড়ে নেড়ে গল্প শোনে
আর দু’চোখজুড়ে বাবার ছবি আঁকে।
বিশাল দেহের একটি মানুষ
তার লম্বা হাত উঁচু করে যখন কথা বলে
তখন তর্জনী গিয়ে আকাশ স্পর্শ করে।
বাবার কিছু আবছা স্মৃতি মনে পড়ে
বাবা যখন মাঝে মাঝে জেল থেকে বাড়ি ফেরে
তখন বাড়িময় শুধু আনন্দ আর আনন্দ
পোষা পায়রাগুলো বাকুম বাকুম করে
বাড়িতে অনেক মানুষের আনাগোনা
মা তখন নতুন নতুন খাবার রান্না করে।
বাবা তাদের বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে
বালিকাটি বাবার কাছে কাছে ঘুরঘুর করে
বালকটি শিশুর ঈর্ষা নিয়ে দূর থেকে দেখে।
আবার নিরুদ্দেশ, জেলে ফিরে যাওয়া।

একবার জেলের বারান্দায়
বালিকা হাঁটছে সামনে, বালক পিছনে,
বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে
হঠাৎ বালক জামা ধরে টান দিল বালিকার—
তোমার বাবাকে কি আমি বাবা বলে ডাকতে পারি?
বালিকার বুকে তখন জোয়ারের জল
ছলাৎ ছলাৎ ছল
ঠোঁট কেঁপে ওঠে, চোখে জল তার ছল ছল—
এ প্রশ্ন কেন? সে তো তোমারও বাবা!
বালকের সকল উৎকণ্ঠা বেদনা ও ভালোবাসা
কণ্ঠনালি ভেদ করে বেরিয়ে আসে
এক অস্ফুট শব্দ—যে নামে পুত্র পিতাকে ডাকে।
পিতার বিশাল বুকে সে শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়
প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে হিমালয় থেকে সুন্দরবন
প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে পদ্মা মেঘনা থেকে বঙ্গপোসাগর
প্রতিধ্বনি অনুরণিত হয় প্রতিটি মানুষের বুকে।

জন্ম হয় একটি জাতির।
তিনি হয়ে ওঠেন বালকের পিতা থেকে জাতির পিতা।

ফুলের বাগানে যেমন সাপ শুয়ে থাকে
তেমনি মানুষের মাঝে বাস করে কিছু
হিংস্র জন্তু জানোয়ার—যাদেরকে অমানুষ বলে।
কিছু অমানুষ খুন করেছে সেই বালককে—
খুন করেছে জাতির পিতাকে।
এ জাতি এক হন্তারক জাতি।

সেই কিশোরী বালিকা এখনো পিতার স্বপ্ন আঁকে
ছবি আঁকে আমাদের হৃদয়ের ক্যানভাসে
সে ছবির নাম—আমার সোনার বাংলা।

একটি তর্জনীর নির্দেশে

সাকিব জামাল

৭ মার্চ ১৯৭১, রেসকোর্স ময়দান, ঢাকা ।
পুরো ময়দান জনসমুদ্র। উৎসুক সব চোখ—
একজন মুজিবের, একটি তর্জনীর নির্দেশের অপেক্ষায়—
নেতা আসলেন, আঙুল উঁচিয়ে বললেন—
‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
জয় বাংলা।’

এরপর, ৯ মাস
নতুন ইতিহাস!

একটি তর্জনীর নির্দেশে—একটি যুদ্ধ।
একটি তর্জনীর নির্দেশে—একটি বিজয়।
একটি তর্জনীর নির্দেশে—একটি পতাকা।
একটি তর্জনীর নির্দেশে—একটি জাতি।
একটি তর্জনীর নির্দেশে—একটি মানচিত্র।
একটি তর্জনীর নির্দেশে—একটি বাংলাদেশ।

মুজিব মরে নাই, মৃত বোলো না তাকে

নজমুল হেলাল

যে জাগায় সে ঘুমায় না
যে প্রেরণা
যে শক্তি সাহস আলোকবর্তিকা
তাঁকে মৃত বলতে নেই!

বীজমন্ত্র ম'রে গেলে মানুষের কী থাকে আর?
মুজিব মরে নাই! মৃত বোলো না তাঁকে!

অবহেলা অমর্যাদা অনাদর যাঁকে দুর্বল করে না
জাতি আর জাতি'র কণ্ঠস্বর
অভিন্ন নক্ষত্র হয়ে ওঠে
দেশ–দশ আর পতাকা'র বিকল্প যিনি
তাঁকে মৃত বলো না।
মুজিব বেঁচে আছে অন্তরে অম্লান
মুজিব মরে নাই মৃত বলোনা তাঁকে!

মুজিব রাঙা ফুল সুবাসিত
মুজিব মর্মমূল চেতনার
ভাষা আশাতে দেশপ্রেম মানুষে মানুষে ভালবাসাতে
বাতিঘর জাতিস্বর মুজিব
এ্খনও স্বপ্ন দ্যাখায়
অমর কবিতা লেখায়
মৃত বোলো না তাঁকে মুজিব মরে নাই!