আবিদ আজাদের অপ্রকাশিত কবিতা

আবিদ আজাদ জন্ম: ১৬ নভেম্বর ১৯৫২ মৃত্যু: ২২ মার্চ ২০০৫
আবিদ আজাদ জন্ম: ১৬ নভেম্বর ১৯৫২ মৃত্যু: ২২ মার্চ ২০০৫
অপ্রকাশিত এ কবিতা আবিদ আজাদ লিখেছিলেন ২০০৫ সালে, মৃত্যুর দিন কয়েক আগে। কবির ছেলে তাইমুর রশীদের সূত্রে পাওয়া গেছে কবিতাটি। আসছে ২২ মার্চ সত্তর দশকের উজ্জ্বল এ কবির মৃত্যুদিন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা


শরতে কোনো চীনা রেস্তোরাঁয়

কথা বলছিলাম শরতের সঙ্গে টেলিফোনে

একটি আপস্টার্ট জুটি বসেছিল রেস্তোরাঁর এক কোণে

ওরা থাই স্যুপের চেয়ে নিজেদের শরীর ছুঁয়ে বসার মজাটা

আরও অনেক বেশি ঘন ভেবে ফ্রস্টেড গ্লাসের দরজাটা

টেনে দিয়ে ঈষৎ বাঁকা হয়ে গেল হঠাৎ—

ওরা আবার ভাবছে কি টেলিফোনে কার সঙ্গে কথা বলতে বলতে বুড়োটা

হয়ে গেল এমন মাত?

মেয়েটির ঠোঁটের রং ডানাভাঙা পাখির মতো খোঁজে টিস্যু পেপারের পরত

এদিকে রিসিভার কানে চেপে গলা ফাটিয়ে ডাকি আমি, ‘শরৎ, শরৎ

কোথায় তুই? কোন রাস্তার জ্যামে আটকা পড়েছিস?’

শরৎ যেন কী কী বলে—ওর কণ্ঠে শুধু বাজছে কালো ধোঁয়ার হিসহিস

একবার মনে হয় শরৎ খুব দূরে, একবার মনে হয় ভীষণ কাছে

হঠাৎ দেখি টেবিলের গ্লাসে গ্লাসে সাজানো রুমাল সব ফিঙে হয়ে নাচে

শরতের সাথে আমার জরুরি কিছু কথা ছিল আজ

একটি টিভি চ্যানেল থেকে কখন যেন উড়তে উড়তে বের হয়ে

একটা প্রজাপতি, তার পাখার আওয়াজ

শুনেই মনে হলো শরতের সাথে কথাগুলি ঝটপট শেষ করা দরকার

শরৎ বলছে আমি শুনছি, আমি বলছি শরৎ শুনছে—কথাগুলো যার যার

অবশ্য আমাদের কথার ফাঁকে ফাঁকে কানে এসে ভীষণ বাজছে মাঝে মাঝে

কাশফুল, শিশির, নদী ও শিউলির মতো আজেবাজে

কিছু শব্দ—যা শুনে একটা সময়ের বাংলা কবিতার ন্যাকামির কথা

মনে পড়ে গেল আমার। মনে পড়ল খাতাভর্তি পাতা ফুল এবং লতা

ছিঁড়ে তছনছ করেছিলাম বলে শরৎ আর আমাকে হাত পেতে

নিতে হয়েছিল কী যে দুঃসহ শাস্তি—সারা জীবন কাটাকুটিতে মেতে

থেকে সেই দীর্ঘ ক্লাসরুমের স্মৃতি আমি ভুলেছি, শরৎও কি ভুলেছে সে কথা?

মেয়েটি রূঢ় চোখে ছেলেটিকে বলে হঠাৎ, দেখি, বোয়াল মাছের মতো

আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থেকো না তো অযথা।