এক শ শব্দের চার ছোট্টগল্প

>
অলংকরণ : মাসুক হেলাল
অলংকরণ : মাসুক হেলাল
আমরা অন্য আলোর পক্ষ থেকে ফেসবুকে ১০০ শব্দে গল্প লেখার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছি। করোনাকালে ঘরে বসে থেকে এটা হতে পারে সৃষ্টিশীল উপায়ে সময় কাটানোর উপায়। সেখান থেকে বাছাই করে অন্য আলোয় প্রকাশ করা হচ্ছে।

১.

আসফিয়া আজিমের ‘অনাগত’
মার্চ মাসের শুরুতে নীরা জানতে পারে সে মা হবে। করোনার ডামাডোলে ভয়ে কুঁকড়ে কোনোমতে দিন পার করতে থাকে সে।
...
কিছুদিন ধরে প্রায় রাতে নীরা স্বপ্ন দেখে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে যাচ্ছে কিন্তু শিশুটি খেতে পারছে না। ভয় হয় তার।
...
আজ নীরার ডেলিভারি। একটু পরেই সন্তানকে দুধ দেবে সে।
ডেলিভারি বেডে শুয়ে নীরা অপেক্ষা করে শিশুর কান্নার। কোনো আওয়াজ না পাওয়ায় কষ্ট করে মাথা তুলতেই বুঝতে পারে কারণটি। ফুটফুটে একটা শিশু শুয়ে আছে একটু দূরে। পাতলাটে চামড়ার একটা আবরণ ঠোঁটটাকে আটকে রেখেছে কেমন, ঠিক যেন মাস্ক।


২.
শান্তা তাওহিদার ‘রেণুপাখি’

রেণুর মা হাঁটছে! মাথার ওপর চৈত্রের আকাশ! কপালের ওপরের ঘাম গড়িয়ে পরে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে দূরের খালপাড়ের বটগাছটা ঠিক দেখতে পাচ্ছে ।
রাস্তাঘাট সুনসান! দেশে কোন এক বিদেশি অসুখ এসেছে! সবাই নিজের ঘরে থাকে। গাড়িঘোড়া চলে না বলে রেণুর বাবা গঞ্জ থেকে বাড়ি আসতে পারেনি! পাশের বাড়ির বিদেশফেরত বাবলুর বাবাকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছে।

রেণুর তিন রাত ধরে জ্বর, সঙ্গে কাশি। মেয়েকে নিয়ে বাজারের কানাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে সে। পায়ে হাঁটা পথ আজ যেন ফুরাচ্ছে না।
রেণু কাঁদছে।
বড় বড় করে নিশ্বাস ছাড়ছে।

বাজারে ঢুকে কানাই ডাক্তারের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় রেণুর মা! ডাক্তারখানা বন্ধ কেন? বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠল তার। এখন সে কী করবে?
হঠাৎ একটা চিল কর্কশ চিৎকার করতে করতে মাথার ওপরে উড়ে গেল! তবে রেণু এখন আর কাঁদছে না! মায়ের অসহায়ত্ব কি রেণু টের পেয়ে গেছে? তা না হলে সে এমন চুপ হয়ে গেল কেন?

আচমকা বাজারের সবাই দেখল, ‘আমার রেণু-ও-ও’ বলে চিৎকার দিয়ে ছাপা শাড়িপরা এক মহিলা জ্ঞান হারাল।
আর রেণুর মায়ের মনে হলো সে একটা সবুজ মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে, আর রেণু পাখি হয়ে তার চারপাশে উড়ে বেড়াচ্ছে!

৩.
মোর্জিনা মতিন কবিতার ‘তোমায় মনে পড়ে’

ইকবাল রোড থেকে হেঁটে আসছিলাম তাজমহল রোডে। একা, সন্ধ্যায়। হরতালের ফাঁকা রাস্তায় বহুদিন থেকে ক্যাটওয়াক করার অভ্যাস আমার। আজ লকডাউনের ফাঁকা রাস্তা পেয়েও করছিলাম ক্যাটওয়াক। বিড়ালের হাঁটা। র‍্যাম্প মডেলদের হাঁটা। এই হাঁটা হাঁটলে আমার সব সময় মনে পড়ে আজাদের কথা। আমার ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসের সহপাঠী। আমাকে সে হাতের কবজি কেটে, রক্ত দিয়ে চিঠি লিখেছিল মোট চারটা। চিঠির ভাষা সব ভুলে গেছি। তবে আমার হাঁটা প্রসঙ্গে সে যে প্রশংসা করেছিল চিঠিতে, তা মনে আছে। কারণ আমিও মানি, ওই প্রশংসা সঠিক। সে লিখেছিল, ‘তোমার ওই কাজলকালো চোখের চাউনি, বুকে কাঁপনধরানো মিষ্টি হাসি আর নৃত্যের তালে তালে হেঁটে যাওয়া দেখলে আমার চিৎকার করে এই পৃথিবীকে বলতে ইচ্ছে করে, আমি কবিতাকে ভালোবাসি।’

কাচের কোকের বোতলের মতো ফিগারঅলা এক কিশোরী সাদা ইউনিফর্ম পরে হাঁটছে, ভাঁজ দেওয়া অপ্রশস্ত ওড়নায় পীনোন্নত বুক আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে সৌন্দর্যের, অস্বীকার করার উপায় নাই।
...আজাদকে আমি ভালোবাসিনি।

সলিমুল্লাহ রোডে পড়ল কবরস্থান।
‘আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর’ পড়তে পড়তে, হাঁটতে হাঁটতে কবরস্থানের গেটে এগিয়ে গেলাম। আজান পড়ছে মাগরিবের। সারি সারি কবর। সারি সারি ফুলগাছ। সব কটি গাছে ফুটে আছে সাদা ফুল। কিছু ফুলের নাম জানি, কিছু ফুলের জানি না। সাদা আমার প্রিয় রং। সাদা আমার প্রিয় মন।

আজাদ, তোমার প্রিয় রং কী?
তুমি করোনার দিনে কেমন আছো?
সাদা রঙে, সাদা মনে, তোমায় মনে পড়ে

৪.
এ কে এম জাকারিয়ার ‘স্বপ্ন’

ছেলেটি ও মেয়েটি হঠাৎ আবিষ্কার করল তাঁরা একটি পাহাড়ের চূড়ায়। কীভাবে তারা এখানে এল সেই প্রশ্ন অবান্তর। একদম খাঁড়া পাহাড়। নিচে চারপাশেই গভীর খাদ। চূড়াটি ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট আয়তক্ষেত্রের মতো। এখান থেকে নামার কোনো পথ নেই।
দুজনের আগে থেকে জানাশোনা আছে। মেয়েটির প্রতি ছেলেটির দুর্বলতা আছে। ছেলেটা নির্বিকার। মেয়েটি ততটাই অস্থির।

আমাদের বাঁচার পথ কী?
ছেলেটা কোনো জবাব দেয় না। চারপাশ ঘুরে দেখে। মেয়েটি ধৈর্য হারিয়ে ফেলে।
কিছু বলছো না কেন?
বাঁচার একটাই পথ আছে।
কী সেটা?
যদি এটা একটা স্বপ্ন হয়।
ছেলেটির ঘুম ভেঙে যায়। সে ভাবে, স্বপ্ন আসলে কাকে বাঁচল? তাঁকে, নাকি দুজনকেই।

নিয়ম
১০০ শব্দের গল্প লিখুন। প্রথম আলোর সাহিত্য অনলাইন ম্যাগাজিন অন্য আলো ডটকমের জন্য। নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে পাবলিক করে প্রকাশ করুন। #শশব্দগল্প #ছোট্টগল্প #অন্যআলো দিতে পারেন। এই তিনটা হ্যাশট‌্যাগের যেকোনো একটা থাকলে আমরা ধরে নেব এটা আপনারা অন্য আলোডট কমে প্রকাশ করতে দিতে রাজি আছেন। আপনি গল্প লিখে ফেসবুকের সাত বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। তাঁদের ট্যাগ করবেন। যাঁদের ট্যাগ করবেন, তাঁরা আবার শত শব্দের একটা গল্প নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করবেন। আর নিয়মকানুনগুলো গল্পের নিচে কপি-পেস্ট করে দেবেন। পেশাদার লেখক না হলেও হবে। বরং নতুন প্রতিভাকে উৎসাহিত করলে ভালো।