ওলা ওঠা

আরিশার পায়চারি, এ ঘর ও ঘর। লকডাউনের ঝড়োন্মুখ রাতে শুয়ে পড়েছে গোটা শহর। বিছানায় শুয়ে আরিশা ঘড়ি দেখে, রাত দুটো। নাহ্। পারা গেল না সাইক্লিস্ট বাবাকে নিয়ে। সেনা আইনকে ধুলো দিয়ে উনি বার হয়েছেন একাই, শখের সাইকেল নিয়ে। বলে কিনা, এমন ফাঁকা হাইওয়ে জীবনে আর মিলবে না। কিন্তু বাবা, তোমাকে নিয়ে যে ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়, তা কি তুমি বোঝো?

দাদুর বলা গল্প মনে আসে আরিশার। সেই যে ‘ওলাওঠা’র কথা। কলেরা কেউ বলত না তখন। ও নাম মুখে নিলেই নাকি সে বাড়ি গিয়ে ঢুকত ওলাবিবি। আর তারপর? গ্রামকে গ্রাম উজাড়। ওলাবউ দেখেছিলও কেউ কেউ। হারিকেনের অস্পষ্ট আলোয়, একহাতা সাদা লম্বা ঘোমটা টানা, গোড়ালির ওপর পরা শাড়ির নিচে উল্টো খালি পা। মাথা নিচু করে হেঁটে পার হয়ে যাচ্ছে গোরস্থানের আইল। মুখ কেউ দেখেনি, কিন্তু যারা দেখেছে, তারা আর ফিরে আসেনি।
টুংটুং
টুটে যায় আরিশার ঘুম। ওহ, এত ধুন্ধুমার ঝড় আর সুইফোঁটা বৃষ্টি!
টুংটুং
যাহ, ইলেকট্রিসিটিও গেল!
ওয়েট বাবা ওয়েট...
হাতড়ে দরজা খুলতেই মারমুখী জল আর উন্মত্ত বাতাস আছড়ে মেঝেয় ফেলল আরিশাকে, যেন সে বিদ্যুৎ ঝলকে দেখতে পায়, দরজায় গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক বিঘত ঘোমটা টানা তিনটে কালো বউ। শীর্ণ অস্পষ্ট মুখ যাদের কাফনসাদা মাস্কে ঢাকা...