মেঘনার ঢল

পূজামণ্ডপে পূজা চলছিল। আমি একটা ফাস্ট ফুডের দোকানের পাশে বৃষ্টির কারণে দাঁড়িয়ে ছিলাম। খেয়াল করে দেখলাম, দুজন ৮-৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়ে পাশাপাশি বসে স্যুপ খাচ্ছে সেখানে! পরনের পোশাক দেখে অনুমান করা যায় নিতান্তই দরিদ্র ঘরের ছেলেমেয়ে ওরা। কোনো রকম কিছু টাকা জুটিয়ে খেতে এসেছে। মেয়েটি দোকানদারকে বলছিল, ‘আংকেল, চিকেন ফ্রাই দুইটা ২০ টাকায় দেওয়া যায় না?’ দোকানদার বিরক্তির সুরে বলে, ‘না, ১০০ টাকাই লাগবে।’ ছেলেটি মেয়েটির মুখের দিকে ছলো ছলো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘গত পূজায় আমার কাছে অনেক টাকা ছিল কিন্তু এবার নাই রে!’ মেয়েটি একজন বুঝদার সংসারী মেয়ের মতো কান্না গিলে নিয়ে বলে, ‘পরের পূজায় খাব আমরা, ঠিক আছে?’

এরপর ওরা দুজন দুজনের হাত ধরে বৃষ্টিভেজা পিচঢালা পথ ধরে অদৃশ্য হয়ে যায়। আমার চোখে আবছা হয়ে আসে সোডিয়াম আলোয় জেগে থাকা শহর। যখন আমার ঘোর কাটে তখন লক্ষ করে দেখি, আমি বৃষ্টিতে ভিজছি আর একাকিত্বের মন্দিরে পুজো দিচ্ছি। এমন এক পুজোর বৃষ্টিমুখর রাতে মেঘনার বিয়ে হয়ে গেছিল। সেদিনও ঠিক এমনি করে আমি ভেসে যাচ্ছিলাম মেঘনার ঢলে।