প্যানডেমিক!

স্লাভোয় জিজেক
স্লাভোয় জিজেক

আমরা সব সময় ক্লান্ত কেন?

করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে দুটি বিপরীতমুখী দলের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে: একদিকে আছেন চিকিৎসাকর্মী ও সেবকগণ, যাঁরা কাজ করতে করতে নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছেন, আর আরেক দলের কিছুই করার নেই, যেহেতু তাদের জোরপূর্বক অথবা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী থাকতে হচ্ছে। দ্বিতীয় দলের লোক হিসেবে, এই দশার কথা বলার তাগিদ অনুভব করেছি এটা বিবেচনা করার জন্য যে আমিও কোনো না কোনোভাবে ক্লান্তি অনুভব করছি। আমি এখানে ক্লান্তিকর আরোপিত আলস্যের পরিষ্কার ধাঁধাটি ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যাচ্ছি, তবে আমি বিয়ং-চুল হানের(ঙ) কথা দিয়ে শুরু করতে চাই, তিনি খুব গুছিয়ে হিসাব কষে দেখিয়েছেন আমরা কীভাবে ও কেন একটি ‘ঝলসানো সমাজে’ (burnout society) বাস করছি। একই নামে বিয়ং-চুল হানের মহৎ কর্মের একটি ছোট্ট পরিচিতি তুলে দিচ্ছি, নির্লজ্জভাবে ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে, উইকিপিডিয়া থেকে:

যেকোনো মূল্যে কাজ চালিয়ে নেওয়া ও সাফল্য পাওয়ার তাগিদ দ্বারা পরিচালিত হওয়ার পাশাপাশি, দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে ছুটতে ছুটতে আমরা একই সময়ে হয়ে পড়ছি অপরাধী ও ত্যাগী, ঢুকে পড়ছি আবদ্ধ ঘূর্ণিপাকে, করছি আত্মশোষণ, এরপর ভেঙে পড়ছি। ‘উৎপাদন যখন মগজজাত (immaterial), তখন সবাই উৎপাদনের উপায়কে নিজের কাঁধে নিয়ে নেয়, নিজ থেকেই। নয়া উদারবাদী ব্যবস্থা আর খাঁটি অর্থের শ্রেণিব্যবস্থায় আটকে নেই। ওতে এখন শ্রেণি নেই, যারা পরস্পর বিরোধিতা করবে। ওটি এখন ব্যবস্থার স্থায়িত্বের জন্য ছক কষে।’ হান বলেন, মানুষ (সাবজেক্ট) এখন নিজেই নিজেকে শোষণ করে: ‘আজকের দিনে প্রত্যেকেই নিজ নিজ কর্মচেষ্টায় একেকজন আত্মশোষিত শ্রমিক। লোকজন এখন নিজের ভেতরেই প্রভু ও দাস। এমনকি শ্রেণিদ্বন্দ্ব এখন নিজের ভেতরেই অন্তর্দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে।’ ব্যক্তি এখন হয়ে গিয়েছে, হান বলছেন, ‘অর্জনের অনুবর্তী’ (the achievement-subject); ব্যক্তি এখন বিশ্বাস করে না তারা অধীনস্ত ‘প্রজা’ (subjugated ‘subjects’),  বরং তারা নিজেকে ভাবে ‘প্রকল্প: সব সময় নিজেদের পুনঃ সজ্জা ও পুনঃ আবিষ্কার করা যায়’, যা ‘জবরদস্তি (compulsion) ও কুণ্ঠার (constraint) কাঠামোতে পরিণত হয়—বস্তুত এতে আত্মমগন (subjectivation) ও আত্মদমন (subjugation) আরও কেজো হয়ে ওঠে।’ প্রকল্প হিসেবে সে বাইরের দুনিয়া ও অচেনা সীমাবদ্ধতা থেকে নিজেকে মুক্ত বিবেচনা করে, সেই সঙ্গে ‘আমি’ নিজেকে ঠেলে পাঠিয়ে দেয় আপনকার সীমাবদ্ধতা ও কুণ্ঠার ভেতর, আর এতেই মূর্ত হয় ইচ্ছাবিরুদ্ধ-অর্জন (compulsive achievement) ও সীমার ভেতর অসীমের আয়োজন (optimization)।  

হান যখন আত্মমগনের রূপের ওপর তাঁর স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ দিচ্ছেন, যেখান থেকে আমাদের অনেক শেখার আছে (উনি আসলে বর্তমান সময়ের মহা-অহমের গঠন ঠাহর করতে চেয়েছেন), আমি তখন ভাবি কয়েকটি বিষয় যোগ করা দরকার। প্রথমত, সীমাবদ্ধতা আর কুণ্ঠা কোনোভাবেই শুধু ভেতরের নয়: আচরণের নতুন কঠিন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে নয়া ‘বুদ্ধিজীবী’ শ্রেণির সদস্যদের ওপর। শুধু চিন্তা করুন রাজনৈতিকভাবে সংগতিপূর্ণ (Politically Correct) থাকার কুণ্ঠার কথা, যা থেকে ‘নিজের বিরুদ্ধে লড়াই’-এর এক বিশেষ জমিন তৈরি হয়, ‘অসংগত’ হওয়ার আকর্ষণের বিরুদ্ধে। অথবা বাইরের সীমাবদ্ধতা বোঝার জন্য এই উদাহরণটি দেখা যেতে পারে: বছর কয়েক আগে, চলচ্চিত্র নির্মাতা উদি আলোনি(চ) (udi aloni) ফিলিস্তিনি নাটকের দল জেনিন ফ্রিডম থিয়েটারকে আমন্ত্রণ জানান নিউইয়র্কে আসার জন্য, কিন্তু খবরটি ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ অত্যন্ত কম গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়। প্রতিবেদনের জন্য আলোনিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁর সাম্প্রতিক প্রকাশনার নাম, আলোনি তখন একটি বালামের সম্পাদনা করার কথা বলেন: গোলটা বাধে যখন তিনি বইটির উপশিরোনামের একটি শব্দ ‘দ্বিজাতীয়’ উচ্চারণ করেন। ইসরায়েলি সরকার চটে যেতে পারে এমন শঙ্কায়, ‘টাইমস’ দাবি করে বসে, এই শব্দ উহ্য রাখতে হবে, নয় তো প্রতিবেদন ছাপা হবে না।

আরও একটি উদাহরণ দিচ্ছি, আরও কাছাকাছি সময়ের: ব্রিটিশ-পাকিস্তানি লেখক কামিলা শামসি একটি উপন্যাস লিখেছেন, ‘হোম ফায়ার’, ‘আন্তিগোনে’র সফল আধুনিকীকরণ বলতে পারেন, বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন সে জন্য, সেগুলোর ভেতর জার্মান শহর ডর্টমুন্ড থেকে দেওয়া নেলি সাকস প্রাইজও ছিল। যাহোক, যখন জানা গেল শামসি বিডিএসকে(ছ) সমর্থন করেছিলেন, তখন তাড়াহুড়া করে পুরস্কারটি ছিনিয়ে নেওয়া হয় এটা বলে যে যখন তারা পুরস্কারটি ঘোষণা করে, তখন বিচারকমণ্ডলী জানত না, লেখক ২০১৪ সাল থেকে ইসরায়েল সরকারের ফিলিস্তিন নীতির বিপক্ষে বয়কট কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। আমরা আজ  এমন জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছি: ২০১৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া পিটার হান্ডকে খোলামেলাভাবেই বসনিয়াতে সার্বিয়ান সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেছেন, অথচ ইসরায়েলের পশ্চিমতীর রাজনীতির বিরোধিতা করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে সমর্থন করলে আপনাকে পুরস্কারজয়ীর টেবিল থেকে উঠিয়ে দেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, বিয়ং হান নতুন ধরনের আত্মমাত্রিকতা (subjectivity) ব্যাখ্যা করেছেন, যা বৈশ্বিক পুঁজিবাদের নতুন পর্যায়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যে পুঁজিবাদের ভেতর শ্রেণিব্যবস্থা কায়েম থাকে ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে সাথে নিয়ে—সংগ্রাম ও বৈরিতা এখন আর ব্যক্তির ভেতরে ‘নিজের বিরুদ্ধে লড়াই’-এ রূপান্তরিত হতে পারে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এখনো লাখ লাখ কায়িক শ্রমিক রয়েছে, তবে এদের সঙ্গে নানা ধরনের মগজকর্মীর (immaterial workers) (বলে রাখছি, ‘মানবসেবা’ খাতে নিয়োগকৃতদের সংখ্যা বাড়ছে, যেমন বয়োজ্যেষ্ঠদের পরিচর্যাকারী) কিন্তু বড় তফাত রয়েছে। শীর্ষ ব্যবস্থাপক, যে কোম্পানির মালিক বা কোম্পানি চালায়, তার সঙ্গে ঘরে একা ব্যক্তিগত কম্পিউটারে সময় কাটানো বঞ্চিত কর্মীর (precarious worker) পার্থক্য রয়েই যায়—কারণ, তারা কখনোই একই অর্থে উভয়: প্রভু ও ভৃত্য নয়।

কী করে পুরনো ফোর্ডের সন্নিবেশশালার (assembly line) কাজের ধরনকে সরিয়ে নতুন ধরনের সমবায়ভিত্তিক কাজ জায়গা করে নিয়েছে, তাতে তৈরি হয়েছে ব্যক্তিগত সৃজনশীলতার অনেক জায়গা, এসব নিয়ে বহু লেখাপত্র হয়েছে। যাক, এখন যা কার্যকরীভাবে চলছে, সেটাকে ঠিক প্রতিস্থাপন বলা যাবে না, বরং বলা যেতে পারে বাইরের চুক্তিভিত্তিক কাজ বা আউটসোর্সিং: মাইক্রোসফট বা অ্যাপলের কাজ হয়তো এখন বিন্যস্ত করা হয় আরও অনেক বেশি সমবায়ভিত্তিতে, কিন্তু তাদের শেষ পর্যায়ে পণ্যগুলো জোড়া লাগানো হয় চীন অথবা ইন্দোনেশিয়াতে, সেই ফোর্ডের কায়দাতেই—চুক্তির ভিত্তিতে সন্নিবেশশালার সারি স্রেফ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য দেশে। কাজেই আমরা এক নতুন ধরনের শ্রমবিভাজন পাই: উন্নত পশ্চিমে স্বনিয়োজিত ও স্বশোষিত শ্রমিক বা কর্মী (হান বর্ণিত), তৃতীয় বিশ্বে ক্লান্তিকর সন্নিবেশশালার সারিতে যাঁরা কাজ করেন, আর বিভিন্ন মানবসেবাদানকর্মী (পরিচর্যাকারী, খাদ্য পরিবেশক…), যাঁদের কর্মক্ষেত্র বাড়ছে, তবে শোষণটা পুরো মাত্রাতেই আছে। হানের বর্ণনায় শুধু প্রথম দলটিই (স্বনিয়োজিত, কখনো বা বঞ্চিত কর্মী) আছে।

উল্লিখিত তিন দলের প্রতিটিতেই নিজেদের মতো করে ক্লান্তি ও অতিরিক্ত কাজের চাপ আছে। সন্নিবেশশালার একঘেয়ে ক্লান্তিকর কাজ—সাংহাইয়ের অদূরে ফক্সকন কারখানায় বসে সেই একই আইফোনের যন্ত্রাংশ বারবার জোড়া লাগানো শ্রমিকদের সীমাহীন ক্লান্ত করে দেয়। এই ক্লান্তির বিপরীতে মানবসেবার কাজ যে কারণে আরও ক্লান্তিকর ঠেকে, তার অন্যতম কারণ, তাঁদের কাছ থেকে সহানুভূতিসহ শ্রম প্রত্যাশা করা হয়, চাওয়া হয় তাঁরা যেন তাঁদের ‘বিষয়’ সম্পর্কে যত্নশীল হন: একজন শিশুবিদ্যালয়ের কর্মীকে শুধু বাচ্চা দেখভালের জন্য টাকা দেওয়া হয় না, সে যেন বাচ্চাদের প্রতি স্নেহশীল হয়, সেটাও চাওয়া হয়। একই প্রত্যাশা থাকে বয়স্ক মানুষ বা অসুস্থদের পরিচর্যাকারীদের কাছেও। সারাক্ষণ ‘চমৎকার ব্যবহার’ ধরে রাখার চাপ বুঝতেই পারছেন! অন্যদিকে, প্রথম দুটি দলের ক্ষেত্রে আমরা অন্তত যা করতে চাইছি, তার কাছাকাছি ধরনের অভ্যন্তরীণ দূরত্ব বজায় রাখতে পারব (এমনকি যখন আমাদের কাছে প্রত্যাশা থাকে যে বাচ্চাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে, তখন সেটার ভঙ্গি করলেও চলে), তৃতীয় দলের জন্য আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি ক্লান্তিকর।

প্যানডেমিক!
প্যানডেমিক!

কল্পনা করুন তো, পণ্য সম্পর্কে আপনার কোনো আগ্রহ নেই, এমনকি আপনি পণ্য বেচার ধারণাটিকেই ঘৃণা করেন, তারপরও আপনাকে ভাড়া করা হয়েছে প্রচারের জন্য বা একটি পণ্যের মোড়ক তৈরির জন্য, যেটা দিয়ে মানুষকে পণ্যটি কিনতে প্রলুব্ধ করা হবে। এমন অবস্থায় সৃজনশীলতাকে গভীরভাবে যুক্ত করতে হবে, ভাবতে হবে সত্যিকারের সমাধান কী হতে পারে, আর এ ধরনের প্রচেষ্টা সন্নিবেশশালার একঘেয়ে কাজের চেয়েও ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। হান নির্দিষ্ট করে এমন ক্লান্তির কথাই উল্লেখ করেছেন।

তবে বাসায় কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে শ্রম দেওয়া বঞ্চিত কর্মীরাই যে শুধু নিজেরা নিজেদের শোষণ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, তা কিন্তু নয়। আরেকটি দলের নাম এখানে উল্লেখ করতেই হবে, এদের কাজকে সাধারণত ধোঁয়াশা পরিভাষায় ডাকা হয় ‘সৃষ্টিশীল দলগত কাজ’। এই কর্মীদের কাছ থেকে আশা করা হয়, উপরমহলের ব্যবস্থাপক বা মালিকের মতো তাঁরাও উদ্যোক্তাসুলভ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবেন। তাঁরা উৎপাদনের সামাজিক সংগঠন ও এর পরিবেশনের সঙ্গে ‘সৃজনশীলতা’ নিয়ে কাজ করেন। এমন দলের ভূমিকা একটু ঘোলাটে: একদিকে, ‘ঠিকঠাকভাবে উদ্যোক্তসুলভ কর্মকাণ্ড করার মধ্য দিয়ে কর্মীরা মুখোমুখি হন সমাজের প্রকৃতির সঙ্গে এবং এর সঙ্গে তাঁরা মুনাফার বাঁধাধরা ছাঁচের ভেতর নিজের কাজের মানেও খোঁজার চেষ্টা করেন।’: ‘অবশ্য শ্রমকে সংগঠিত করার সক্ষমতা, সহযোগিতাকে দক্ষতার সঙ্গে ও অর্থনৈতিকভাবে সংযুক্ত করা, এবং শ্রমচরিত্রের সামাজিক ব্যবহার নিয়ে চিন্তা করা, মানবসভ্যতার জন্য এখন যেমন, ভবিষ্যতের জন্যও কার্যকর।’

যাক, এটা তাঁরা করছেন অবিরত পুঁজিবাদের অধীন থেকে, তাঁদের ভেতর কোম্পানিকে আরও ক্রীয়াশীল ও লাভজনক করার লক্ষ্য, আর এই চাপটাই ‘সৃষ্টিশীল দলগত কাজ’কে বেশ ক্লান্তিকর করে তোলে। কোম্পানিকে সফল করার দায় তাঁদের ওপর, একই সময়ে তাঁদের দল ভেতরে ভেতরে যেমন, বাইরের দলের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কর্মপ্রক্রিয়ার সংগঠক হিসেবে তাঁদের এমন ভূমিকায় কাজের জন্য অর্থ দেওয়া হয়, যে ভূমিকা ঐতিহ্যগতভাবে পুঁজিপতিদের। আর তাই, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সব উদ্বেগ ও দায়িত্ব নেওয়ার পরও বাকি বেতনভুক্ত কর্মীদের ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চিতই থেকে যায়, তখন তাঁরা উভয় দিক থেকেই সংকটে পড়েন।

এ ধরনের শ্রেণিবিভাজন করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের ভেতর নতুন মাত্রা যোগ করে। আমাদের ওপর বারবার নির্দেশের বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, আমরা যেন বাসায় বসে, নিরাপদে আলাদা থেকে কাজ করি। কিন্তু এমনটা কোন শ্রেণি করতে পারে? বঞ্চিত বুদ্ধিজীবী কর্মী ও ব্যবস্থাপক, তাঁরা সঙ্গনিরোধে থেকেও তড়িৎ-ডাক ও দূর-সম্মেলনের (টেলিকনফারেন্স) মাধ্যমে কমবেশি কাজ ঠিকঠাক চালাতে পারেন। এ সময় তাঁরা হয়তো আরও সময় পান ‘আপনাদিগকে শোষণে’র। কিন্তু তাঁদের বেলায় কী হবে, যাঁদের কাজের জন্য বাইরে যেতে হয়, কারখানায় বা মাঠে, দোকানে বা হাসপাতালে, অথবা গণপরিবহনে? অনিরাপদ বাইরে অনেক কিছুই হতে হয়, যাতে অন্যরা নিজেদের ব্যক্তিগত সঙ্গনিরোধে টিকে থাকতে পারে…

আর শেষ হলেও সামান্য নয় যে কথা, কঠোর আত্মশৃঙ্খলা ও কাজের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাকে দোষারোপ করার প্রবণতাকে এড়াতে হবে। ‘সহজভাবে নিন’—এই মনোভঙ্গিই প্রচার করতে হবে। ‘আরবাইট মাখ্ট ফ্রাই’ (Arbeit macht frei অর্থাৎ কর্মেই মুক্তি) এখনো পর্যন্ত সঠিক মন্ত্র, যদিও নাৎসিরা একে বর্বরের মতো অপব্যবহার করেছে। হ্যাঁ, এই মহামারির ধাক্কা সামলানোর জন্য অনেকেই কঠোর ক্লান্তিকর কাজ করছেন—কিন্তু এটি নিজ সম্প্রদায়ের মঙ্গলের জন্য অর্থবহ কাজ, এই কাজ আত্মতৃপ্তি বয়ে আনে, এটি বাজারে সফল হওয়ার চেষ্টায় গাধার খাটুনি খাটা নয়। সময়ের অতিরিক্ত কাজ করে চিকিৎসাকর্মীর প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, চাহিদার চাপে সেবাদানকারী হন অবসন্ন, তবে তাঁদের ক্লান্তি, অতিরিক্ত পেশাগত কায়কারবার দ্বারা অবসাদগ্রস্তদের থেকে আলাদা রকম। তাঁদের ক্লান্তি কষ্টস্বীকারের যোগ্য।

লেখকের খত

৫. বিয়ং-চুল হান, দ্য বার্নআউট সোসাইটি, রেডউড সিটি: স্ট্যানফোর্ড ইউপি ২০১৫

৬. https://en.wikipedia.org/wiki/Byung-Chul_Han

৭. https://www.middleeasteye.net/news/german-city-reverse-prize-uk-author-kamila-shamsie-over-support-bds

৮. স্টিফেন সিমেন্স ও মার্টিনা ফ্রেনজেল, দাস উন্টারনিমেরিসখ্ই ভির (Das unternehmerische Wir, উদ্যোক্তা আমরা), হামবুর্গ: ভিএসএ ফালাগ, ২০১৪ দ্রষ্টব্য

৯. ইভা বোকেনহেইমার, ‘হোয়্যার আর উই ডেভেলপিং দ্য রিক্যুয়েরমেন্টস ফর আ নিউ সোসাইটি,’ ভিক্টোরিয়া ফ্যারেল্ড ও হানাস কুখ সম্পাদিত ‘ফ্রম মার্কস টু হেগেল অ্যান্ড ব্যাক’, লন্ডন: ব্লুমসবারি ২০২০, পৃষ্ঠা-২০৯

অনুবাদকের খত

ঙ. বিয়ং-চুল হান (জন্ম ১৯৫৯) দক্ষিণ কোরিয়ায় জন্ম নেওয়া জার্মান দার্শনিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক তাত্ত্বিক। তিনি বার্লিন ইউনিভার্সিটি অব আর্টসে বহুদিন অধ্যাপনা করেছেন।

চ. উদি আলোনি (উডি অ্যলেন নামেই বহুল পরিচিত) ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ইসরায়েলবিরোধী বিডিএস (পরবর্তী টোকা ‘ছ’ দ্রষ্টব্য) আন্দোলনের সমর্থনকারী এবং বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্রের কট্টর সমালোচক।

ছ. বয়কট, পরিহার ও আইনের পথে ফিরিয়ে আনতে শাস্তি, ইংরেজিতে এই তিনটিকে বলা হয় বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশন, সংক্ষেপে বিডিএস। এটি একটি ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন। এর সমর্থকেরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল, তাই তাদের সবকিছু বয়কট ও পরিহার করতে হবে।