করোনাকালের কবিতা

লকডাউন

রিচার্ড হেন্ডরিক

অনুবাদ: আনিসুল হক

হ্যাঁ। আছে ভয়।
হ্যাঁ। আছে বিচ্ছিন্ন করে রাখা।
হ্যাঁ। আছে আতঙ্কের কেনাকাটা।
হ্যাঁ। আছে অসুস্থতা।
হ্যাঁ। এমনকি আছে মৃত্যু।

কিন্তু তারা বলছে, উহানে অনেক বছরের গোলমালের পর 

আবারও শোনা যাচ্ছে পাখির কূজন।
তারা বলছে, কয়েক সপ্তাহের নীরবতার পর আকাশে 

আর ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে না;
তার বদলে আকাশ এখন নীল, সাদা, পরিষ্কার।

তারা বলছে, অ্যাসিসির রাস্তায় মানুষ গান শোনাচ্ছে পরস্পরকে,
তাদের জানালা খোলা রেখে,
শূন্য উঠোনের ওপার থেকে,
যাতে করে যারা একা আছেন, তারা শুনতে পান চারদিকে পরিবারগুলোর সাড়া–শব্দ,

তারা বলছে, পশ্চিম আয়ারল্যান্ডের একটা হোটেল বিনি পয়সায় খাবার সাধছে এবং তা পৌঁছে দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি;

আজ আমি জানি, একজন তরুণী তার নম্বরসমেত লিফলেট বিলি করছে ঘরে ঘরে, যাতে করে প্রবীণেরা তাকে ফোন করতে পারেন।

আজ মসজিদ মন্দির গির্জা প্যাগোডা সিনাগগ প্রস্তুত হচ্ছে 

ঘরহীন অসুস্থ দুস্থ মানুষকে স্বাগত জানাতে;

পৃথিবীজুড়ে মানুষ চলার গতি কমিয়ে দিয়ে ভাবতে শুরু করেছে
পৃথিবীজুড়ে মানুষ তার প্রতিবেশীর দিকে তাকাচ্ছে নতুনভাবে
পৃথিবীজুড়ে মানুষ উঠছে জেগে এক নতুন বাস্তবতায়

আমরা কি আসলেই বড়?
আমাদের নিয়ন্ত্রণ আসলে কত সামান্য!
কোন বিষয়টা আসলে গুরুত্বপূর্ণ!
মানুষ জেগে উঠছে ভালোবাসায়।

সুতরাং আমরা প্রার্থনা করি, আর স্মরণ করি,
হ্যাঁ, আছে ভয়;
কিন্তু ঘৃণার দরকার নেই!
বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার দরকার আছে, 

কিন্তু তা থেকে দরকার নেই একাকিত্বের!
হ্যাঁ। আছে আতঙ্কের কেনাকাটা। কিন্তু দরকার নেই ক্ষুদ্রমনা হওয়ার।

হ্যাঁ। আছে অসুস্থতা। কিন্তু তা থেকে আত্মার অসুখ 

বাধিয়ে ফেলার দরকার নেই।
হ্যাঁ। এমনকি আছে মৃত্যু। কিন্তু সব সময়ই তো আছে 

ভালোবাসার পুনর্জন্ম।

জেগে ওঠো, বেছে নাও, এই মুহূর্তে কীভাবে বাঁচতে হবে।
আজ, শ্বাস নাও।
শ্রবণ করো:
তোমার আতঙ্ক-কারখানার আওয়াজের ওপারে পাখিরা 

আবারও গাইতে শুরু করেছে।
আবারও নির্মল হতে শুরু করেছে আকাশ ।

বসন্ত আসছে। এবং আমরা সর্বদাই ভালোবাসা দিয়ে 

পরিবেষ্টিত হয়ে আছি।

তোমার আত্মার জানালাগুলো খুলে দাও, যদিও তোমার স্পর্শ
পাড়ি দিতে পারবে না শূন্য আঙিনা

তবু গান গাও।

রিচার্ড হেন্ডরিক

দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আয়ারল্যান্ডের ফ্র্যান্সিসকান ধর্মযাজক ব্রাদার রিচার্ড হেন্ডরিক ১৩ মার্চ ‘লকডাউন’ নামে এই কবিতা লেখেন। এরপর তাঁর নিজের ফেসবুকের পাতায় এটি প্রকাশের পরমুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। কবিতাটি নেওয়া হয়েছে বিবিসি রেডিওর প্রকাশনা থেকে।