আরব দুনিয়ায় মহামারি

`আল ওয়াবা` বা মহামারি
`আল ওয়াবা` বা মহামারি

হানি আল-রাহিব সিরিয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন লেখক, তাঁর শ্রেষ্ঠ কাজের নাম 'আল ওয়াবা' বা 'মহামারি'। সুবিশাল এক উপন্যাস। তবে এই 'মহামারি' শুধু মড়কের উপন্যাস নয়, এ উপন্যাসে মহামারি এসেছে ঠিক, কিন্তু যতটা না মড়কের ভয়াবহতা নিয়ে, তার চেয়ে প্রতীকী অর্থে।

হানি আল-রাহিবের লেখার বরাবর মূল প্রতিপাদ্য প্রতিবাদ, বিদ্রোহ আর প্রত্যাখ্যান। দুর্নীতি, সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তাঁর অন্য উপন্যাসগুলোতে তিনি দেখিয়েছেন সামাজিক রাজনৈতিক সংকট থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটতে পারে। তাঁর লেখনী দিয়ে আরব দুনিয়ায় মহামারি রূপে স্থান করে নেওয়া কুসংস্কার অন্ধ বিশ্বাসকে ভাঙার চেষ্টা করেছেন তিনি। 'মহামারি' একই সঙ্গে সিরিয়ার দীর্ঘ ইতিহাস-গ্রন্থও।

হানির জন্ম ১৯৩৯ সালে সিরিয়ার লাযিকিয়্যা শহরে এক ধার্মিক মুসলিম পরিবারে। তাঁর বাবা কথা বলতে পারতেন না, তাই পরিবারের হাল ধরতেও পারেননি। অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে নবম সন্তান হিসেবে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পাঁচটি ভাইবোন শুধু অনাহারে আর অসুখে ভুগেই মারা যায় শৈশবে।

চল্লিশ আর পঞ্চাশের দশকে লাযিকিয়্যা ছিল রাজনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। এখানে জন্ম হয়েছে অনেক রাজনৈতিক আর সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বের। হানির সমসাময়িক প্রজন্মটি বেড়ে ওঠে সংস্কারবাদী বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাচেতনা নিয়ে। লাযিকিয়্যাতে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর হানি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হন দামেশক ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৬১ সালে ছাত্র অবস্থায় তার প্রথম উপন্যাস 'আল মাহযুমুন (পরাজিতগণ)' প্রকাশিত হয়। প্রথম উপন্যাসেই সবার দৃষ্টি কাড়েন। সিরিয়ার বিখ্যাত 'আল আদাব' পত্রিকা এই উপন্যাসের জন্য তাঁকে পুরস্কৃত করে। এই উপন্যাসে আরবের তিনটি নিষিদ্ধ বিষয়কে উপজীব্য করেছিলেন, আর তা হলো, ধর্ম, রাজনীতি আর যৌনতা। তাঁর তৃতীয় উপন্যাস 'আলফু লায়লা ওয়া লায়লাতান' (এক হাজার দুই রাত্রি) প্রকাশিত হয় ১৯৭৭-এ। এ উপন্যাসের সারমর্ম হলো আরববিশ্বের মানুষেরা এখনো বসবাস করছে সেই রূপকথার যুগেই।

১৯৮১ সালে তাঁর চতুর্থ উপন্যাস এই 'আল ওয়াবা' বা 'মহামারি' প্রকাশিত হয়। এটি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ বলে পরিগণিত হয়। এ উপন্যাসের কারণে তাঁকে আরব দুনিয়ায় তুলনা করা হয় তলস্তয় আর দস্তয়ভস্কির সঙ্গে। আধুনিক সিরিয়ার এক শ বছরের ইতিহাস বিবৃত হয়েছে এখানে। এ উপন্যাসের কাহিনির শুরু ১৮৭০ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কাল পর্যন্ত। তিন প্রজন্মের গল্প। তৃতীয় প্রজন্মের কাহিনি শেষ হয় সিরিয়ার জেলে। এটি মহাযুদ্ধের গল্প, মহামারির গল্প, যা পাঠকের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়ে যায় গভীরভাবে। অন্ধকার যুগ থেকে আরবের মধ্যবিত্ত সমাজের জেগে ওঠার গল্প 'আল ওয়াবা'।

হানি আর-রাহিব একাধিকবার বহিষ্কৃত হয়েছেন আরব রাইটার্স ইউনিয়ন থেকে তাঁর ভিন্নমতাদর্শের অভিযোগে। কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয় ইসরায়েলের প্রতি উদার মনোভাব পোষণের অভিযোগে। মৃত্যুর আগে কয়েক বছর তাঁর খুব কষ্টে কাটে। আদর্শ আর ভিন্নমতালম্বনের কারণে বন্ধুহীন হয়ে পড়েন তিনি। তবু লেখালেখি চালিয়ে গেছেন শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। তার সর্বশেষ কাজ ছিল হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবনী নিয়ে উপন্যাস লেখা। তবে শেষ না করেই তিনি ইন্তেকাল করেন ২০০০ সালে, মাত্র ৬১ বছর বয়সে।

এ উপন্যাসে মহামারি রূপে আবির্ভূত হয়েছে টাইফয়েড। জ্বরে দলে দলে লোকজনের প্রানহানি ঘটছে। শরণার্থী হয়ে নিরাপদ জনপদের দিকে পাড়ি জমাচ্ছে আক্রান্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা।

কেন্দ্রীয় চরিত্রের একজন জাওয়াদও চলেছে পরিবারসহ লাযিকিয়ায়। পথে নির্মম ঘটনা ঘটল, মহামারি লন্ডভন্ড করে দিল তার পরিবারকে—

'আল ওয়াবা' বা 'মহামারি' উপন্যাসের কিছু অংশ:

১৯১৬ সালে সিরিয়ায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াল থাবা বসে। তুর্কি সৈন্যরা সিরিয়ায় ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। গত চার শ বছরে এমন যুদ্ধ হয়নি। খাদ্যগুদাম লুট হয়। ধনসম্পদ হাতছাড়া হয়। পুরুষদের হত্যা করা হয়। মানুষের চোখেমুখে যুদ্ধের বিভীষিকা স্থায়ী হয়ে যায়। লাখ লাখ মানুষ পালাতে শুরু করে। বাড়িঘর সহায়-সম্পত্তি ছেড়ে শুধু প্রাণরক্ষার্থে দিগ্বিদিক ছুটে বেড়ায়। কেউ যায় ফিলিস্তিনের দিকে আর বৈরুত হারওয়ানের লোকেরা যায় দামেস্কে। পাহাড়ি এলাকার লোকেরা আসে হামা অ লে। সব রাস্তায় শুধু একটি শব্দই প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। রুটি! রুটি!

খুব সামান্য মালামাল সম্বল করে মানুষ একটু আশ্রয়ের জন্য ছুটে বেড়ায়। এ সময় টাইফয়েড জ্বর ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। মানুষের মাথা ও বগলে উঁকুনের প্রাদুর্ভাব এই মারাত্মক জ্বরের কারণ। খুব দ্রুতই মানুষ মরতে শুরু করে। উন্মুক্ত প্রান্তরে একত্রিত হওয়া ভুখা নাঙ্গা মানুষগুলোর একটাই আর্তনাদ 'রুটি'।

হানি আল-রাহিব
হানি আল-রাহিব

খাওয়া-ঘুম-মলমূত্র-ত্যাগ—সব এক স্থানেই হয় সবার। এত যে কাঙ্ক্ষিত রুটি, তার দেখা মেলে না কোথাও। মাটি পরম মমতায় এই ক্ষুধার্ত অসুস্থ মানুষগুলোকে বুকে টেনে নেয়। বাড়তে থাকে কবরস্থান। লাশ সাধারণত খচ্চরের গাড়িতেই বহন করা হতো, এখন গাধার গাড়ি অনবরত লাশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ২০ মিটার লম্বা আর ৩ মিটার গভীর একেকটা কবর।

শির গ্রামে এই মহামারি ছড়ায়নি। সম্ভবত এই গ্রামটিই শুধুমাত্র মুক্ত ছিল। এ জন্য মুক্ত ছিল না যে তুর্কি সৈন্যরা সমতল পেরিয়ে এই পার্বত্য অঞ্চলে আসতে আসতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, এটা বিশ্বাসযোগ্যও নয়, তুর্কি সৈন্যরা চাঁদে পৌঁছাতেও সক্ষম; আসল কারণ এ গ্রামে শায়খ সিনদিয়ানের দোয়া আছে। সব অঞ্চল যখন মহামারি-আক্রান্ত, তখন এ অঞ্চল একদম নিরাপদ। এটি এমন এক শায়খের গ্রাম, যার কাছে সরাসরি মান্না-সালওয়া আসে। শায়খের বয়স এখন ৭৮। লাঠি ছাড়াই তিনি এখনো হাঁটেন। সূর্যের সঙ্গে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম আগের মতোই বহাল আছে। তার মৃত্যুতে গোটা গ্রাম পাথর হয়ে যায়। প্রথমে সবাই ভেবেছিল তিনি ইতিকাফে বসেছেন। তিন দিন তিনি আস্তানা থেকে বের হননি। টাইফয়েড এ গ্রামেও পৌঁছেছে, কিন্তু মানুষ খুব একটা বিচলিত হয়নি। একদিন ফজরের পুর্বে কেউ কেউ আর্তনাদ শুনতে পায়। কেউ আবার আকাশ বিদীর্ণ হয়ে আলো আসতেও দেখেছে। কেউ সেই আলোয় এত দূর পর্যন্ত দেখে ফেলে যে শায়খ সিনদিয়ান আকাশে উঠে যাচ্ছেন খোদার সঙ্গে মিলিত হতে।

পরদিন সকালে চারজন লোক মারা যায় জ্বরে। তুর্কি বাহিনী শির গ্রামে প্রবেশ করেই আশিজনকে হত্যা করে। ভয়ংকর নীরবতা নেমে আসে পুরো গ্রামে। সবাই অপেক্ষায় থাকে অভূতপূর্ব ধ্বংসযজ্ঞের, যেন বজ্রপাতে সব স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। রাশিয়াতেও তখন বিদ্রোহ চলছে। এবার শিরবাসীও দলে দলে পালাতে থাকে যেদিকে চোখ যায়।

এই পালিয়ে যাওয়া মানুষদের একজন দরজি আবদুল জাওয়াদ। তার কোলে অসুস্থ ছেলে আহমাদ সালিম। আর মায়ের কোলে ছোট ছেলে দাউদ। বড় ছেলে সালেহ মা-বাবার সঙ্গে হেঁটেই যাচ্ছে। অনেক পরিবার একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে আরও অনিশ্চিত ভয়ংকর কোনো পরিণতির দিকে। মনে হচ্ছে বাড়িঘর ছাড়া অদ্ভুত এক বসতি এটা। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না। অনেকেই উকুনের ভয়ে ন্যাড়া করেছে। তারা আবার চুলওয়ালাদের সঙ্গে মিশতে চাইছে না টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে। দূরদূরান্তের লোকেরা আসছে। কেউ কেউ পাগলের মতো চুলের মধ্যে উকুন খুঁজছে। যদি পেয়ে যায় কোনো উকুন, বিজয়ীর মতো আনন্দে তাকে পাথরের উপর পিষে মারছে। আরও কিছুদিন বাঁচার আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠছে। এক তরুণী চার দিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। চোখমুখ টকটকে লাল হয়ে উঠেছে, তবু মনের জোরে হাঁটছে সবার সঙ্গে। জ্বর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার হাঁটাও ধীর হয়ে যাচ্ছে। সাত দিনের দিন সে পড়ে যায়। তার পরিবার কিছুক্ষণ দ্বিধা করে তাকে ফেলে যেতে। সবাই অপরাধীর দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে, তারপরও অশ্রুসিক্ত চোখে সবাই বাধ্য হয় মরণাপন্ন মেয়েটিকে ফেলে এগিয়ে যেতে।

এদিকে আবদুল জাওয়াদও বাধ্য হয় থামতে। এ পরিবারটি বড়ই ক্লান্ত। লক্ষ্যস্থল লাযিকিয়্যা শহর, যা এখনো অনেক দূরের পথ। পথে বৃষ্টিতে, ঠান্ডায় শরণার্থীদের প্রায় অর্ধেকই মারা পড়েছে। অসুস্থ আহমাদ সালিমের মাথায় হাত বোলায় মা। পরক্ষণেই দাউদকে আদর করে। আবার ওদের ছেড়ে সালেহকে কাছে টেনে নেয়। জাওয়াদ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভুলতে চায় বাস্তবতা। স্বামী-স্ত্রী মুহূর্তের জন্য একটি শান্তি পেতে চায় কঠিন সত্যকে ভুলে থেকে। নীরবে দুজন দুজনকে দেখে। আর এভাবে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হয় না। একসময় কঠিন মুহূর্তের মুখোমুখি হতেই হয়। জাওয়াদই প্রথমে মুখ খোলে।

কী করব আমরা?

সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী সায় দেয়, তোমার যা ইচ্ছা করো।

শহর এখনো অনেক দূর। এভাবে তো আমরা চলতে পারব না। ওর বউ ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বুক ফেটে যায় তার। তবু বলে, যা খুশি করো।

জাওয়াদ নির্বাক হয়ে যায়। কেন তাকেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দূরের উন্মত্ত সাগরের দিকে চেয়ে থাকে। বৃষ্টিঝরা থমথমে আকাশের দিকে বারবারই তাকায় কিন্তু সন্তানদের মুখ কিছুতেই ভুলতে পারে না। দাউদকে দুধ পান করায় মা। স্বামীকে পর্যবেক্ষণ করছে চোরা দৃষ্টিতে। বোঝার চেষ্টা করছে কী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সে। শান্ত স্থিরচিত্তে অপেক্ষা করে, সিদ্ধান্ত তার দিক থেকেই আসুক।

বউয়ের দিকে তাকিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে জাওয়াদ বলে, কাকে রেখে যাব বলো?
যাকে তোমার ইচ্ছা। নিরুত্তাপ উত্তর আসে অপরজনের কাছ থেকে।
আহমাদ তো অসুস্থ, ওকে নিয়ে আমার ভয় হচ্ছে। কিন্তু, ও আল্লাহ! এ কেমন পরীক্ষা তোমার? পাঁচ বছর ধরে ছেলেটাকে লালনপালন করছি। ওকে ফেলে কীভাবে যাব? তবে কি দাউদকে রেখে যাব? এ জ্বরে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। দাউদ বা আহমাদ যে কেউই শহরে যেতে যেতে মারা যেতে পারে। ও আল্লাহ ও আল্লাহ, খুব বড় পাপ করেছি। তুমিই বলে দাও। আচ্ছা দাউদকে কি ফেলে যাব? আবার জিজ্ঞাসা করে বউকে।

বললাম তো, তুমি যা খুশি করো।

উফ! নির্দিষ্ট করে একটা বলো দয়া করে। আমার একার ওপর এই কঠিন সিদ্ধান্তের ভার চাপিয়ে দিয়ো না।

মা কোনো জবাব দিতে পারে না। জোরাজুরি করে জাওয়াদ। বলো কিছু জলদি। এরা তো তোমারও সন্তান।

মা তবু পাথরের মতো নিশ্চুপ। বাবা দেখে দাউদ বুকের সঙ্গে লেপ্টে মায়ের দুধ খাচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে। আহমাদ মাটিতে শুয়ে। হঠাৎ মা চিৎকার করে জবাব দেয়, দাউদকেই রেখে যাও।

আচ্ছন্নের মতো বাবা জবাব দেয়, দাউদকে ফেলে যাব?

আহমাদের তো টাইফয়েড হয়নি। ও এমনি দুর্বল ছোটবেলা থেকেই। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে মা আর কিছুই বলতে পারে না। দুধের শিশুটার দিকে তাকিয়ে দুচোখ প্লাবিত হয়। আরেক স্তন তার মুখে গুঁজে দিয়ে বলে, আহমাদ বড় হয়ে গেছে। এত দূর কোলে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। দাউদই বরং হালকা হবে বহন করতে। আমরা না হয় আহমাদকেই ফেলে যাই।

দুজনেই একসঙ্গে আহমাদের দিকে তাকায়। সে অচেতনের মতো পড়ে আছে। রোগাক্রান্ত দুর্বল সে। তবু মা-বাবার পুরো অন্তরজুড়ে তার স্থান। বাড়ন্ত শিশু কিন্তু দুর্বল। আবার মত পাল্টায় মা।

আচ্ছা দাউদকেই রেখে যাই। বলেই স্বামীর দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়, তারপরই কাঁদতে শুরু করে।

রেখে দাও তাহলে ওকে এখানেই। নিশ্চয়ই আল্লাহই ওর জন্য যথেষ্ট, তবু মা কোল থেকে নামায় না সন্তানকে, যেন শুনতেই পাচ্ছে না কিছু।
দাউদকে নামিয়ে রাখো।

ঠিক আছে। ঠিক আছে। স্তন ছাড়িয়ে দাউদকে শুইয়ে দেয় মাটিতে। তারপর ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই বড় দুই ছেলেকে নিয়ে মা-বাবা সামনে এগিয়ে যায়। একটু দূরে যেতেই দাউদের কান্নার আওয়াজ হারিয়ে যায়। মা কিছুতেই কান্না থামাতে পারে না। স্বামীর পিঠ খামচে খামচে ধরে। পিছলে পড়তে পড়তে জাওয়াদ নিজেকে সামলে নেয়। কিছুদূর যাবার পর সালেহ থেমে যায়। পিছ ফিরে দেখতে চায় ফেলে আসা ভাইটাকে। মা-বাবাকে জাপটে ধরে কেঁদে ওঠে। দাউদকে ফেলে এলে মা!

চুপ করো বাবা।

একটু পর মা বলে, ওর কাছে ফেরেশতা আসবে। ওকে দুধ খাওয়াবে আর যত্ন করবে।

সালেহ মায়ের মুখে হাত বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, মা এখনো কাঁদছে কি না।

১৯২০ সালে ফরাসি সৈন্যরা সিরিয়া দখল করে নেয়।

[আরবি থেকে অনূদিত]