'নভেরা মিথ হয়ে গেছেন'

নভেরা
নভেরা

ভূমিকার বদলে

২০০৯ সালে বাংলাদেশের পথিকৃৎ ভাস্কর নভেরা আহমেদ (২৯ মার্চ ১৯৩৯-৬ মে ২০১৫) বিষয়ে কথা বলেছিলাম তাঁর সময়েরই আরেক কৃতী শিল্প-সমালোচক সদ্য প্রয়াত বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের (৯ জানুয়ারি ১৯৩৬-২৩ মার্চ ২০২০) সঙ্গে। তাঁর গুলশানস্থ বাসবভবনে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করি। সাক্ষাৎকারটি ভিডিওতে ধারণ করেন বন্ধু আশরাফুল রানা। অনেক দীর্ঘ সময় তিনি আমাদের সঙ্গে নভেরা নিয়ে কথা বলেন, যার ভেতর উঠে আসে নভেরার সেই সময়ের কিছু টুকরো স্মৃতিকথা ও নভেরার যাপন ও কাজের নির্মোহ সমালোচনা। বাংলাদেশে ১৯৬০ সালের প্রদর্শনীর পর ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে জাতীয় জাদুঘরে নভেরা আহমেদের যে প্রদর্শনীটি (তাঁর অনুপস্থিতিতে) হয়, সেখানে তাঁর ভূমিকার কথাও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। যদিও আমি ভাস্কর্যের ছাত্র, কিন্তু এই সাক্ষাৎকারটি যখন নিই, তখন আমার নভেরাবিষয়ক জ্ঞান মূলত হাসনাত আবদুল হাইয়ের 'নভেরা' উপন্যাস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল, ফলে অনেকটা জানবার কৌতূহল নিয়েই তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া। এই সাক্ষাৎকারে কিছু তথ্য তিনি আমাদের দিয়েছেন, যেগুলো সেই সময়ের প্রেক্ষিতে হয়তো ঠিক ছিল, তা ছাড়া তখন নভেরা বেঁচে ছিলেন, ফলে এখন সেই তথ্যগুলো সঙ্গত কারণেই আউটডেটেড। নভেরা আহমেদ নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকেই কাজ করেছেন, ফলে সেই তথ্যকে চ্যালেঞ্জ করবার মতো উপকরণ হয়তো অনেকের কাছেই আছে। সবকিছুর পরও এই সাক্ষাৎকারে নভেরাবিষয়ক তাঁর অকপট ভাবনা বাংলাদেশে নভেরা-চর্চায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই আমি মনে করি।

শিবু কুমার শীল: জাহাঙ্গীর ভাই আপনি আমাদের এখানকার প্রথম দিককার একজন গুরুত্বপুর্ণ আর্ট ক্রিটিক। আপনার কাছে প্রথমত ভাস্কর নভেরা আহমেদ সম্পর্কে মুল্যায়নধর্মী কিছু কথা শুনতে চাই।
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর: এখানে সমস্যা যেটা হচ্ছে, ব্যক্তি নভেরা সম্বন্ধে মানুষ যত জানে, তার একটা কারণ নভেরা মিথ হয়ে গেছেন। 'কিংবদন্তি'তে পরিণত হয়েছেন কিন্তু তাঁর কাজ সম্বন্ধে মানুষ বেশি জানেন না। তার কারণও আছে, তাঁর খুব বেশি কাজ কিন্তু নেই। কারণ, যে সমস্ত কাজ আছে, সেগুলো প্রথম দিককার। এখন সেই কাজগুলো কতজন দেখেছেন, সে-ও একটা প্রশ্নের বিষয়। এই পরিসরে নভেরাকে বিচার করা, মূল্যায়ন করা কাজের দিক থেকে ভাস্কর্যের দিক থেকে বড় দুরূহ। এ কথাগুলো যদি আমরা মনে রাখি, তাহলে হয়তো নভেরার কাজের কাছে আমরা পৌঁছাতে পারব। কিংবা নভেরা যে কাজ করতে চেয়েছেন, অন্য একটা দিকও আছে। নভেরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে এবং তিনি আর ফিরে আসেননি। না আসার দরুন তাঁর সঙ্গে যাঁদের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল, তাঁরাও আস্তে আস্তে ধূসর থেকে ধূসর হয়ে গেছেন। তাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল হামিদুর রহমানের। তারপর আমিনুল ইসলামের। এই দুজন বাদে কিছু সম্পর্ক ছিল সাঈদের, (সাঈদ আহমদ) হামিদের ছোট ভাই। সামান্য কিছু সম্পর্ক ছিল বশীরের (মুর্তজা বশীর) সঙ্গে। এ-ই তো তাঁর জানাশোনার পরিসর। এই অবস্থায় যারা তাঁকে প্রত্যক্ষভাবে জানতেন, সেই লোকগুলো কিন্তু খুবই কম, বলা যেতে পারে একেবারেই নেই। বাংলাদেশে বর্তমানে আমিনুল ইসলামই তাঁকে জানেন, তাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় ছিল নভেরার। তাহলে আমরা কীভাবে নভেরাকে বিচার করব—এইটা হচ্ছে বড় প্রশ্ন। আর আমি তো আগেই বলেছি নভেরার কাজ খুব বেশি নেই। পাবলিক লাইব্রেরিতে (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার) যে সমস্ত ছড়ানো-ছিটানো কাজ আছে, এই তো! এমন কেন হলো, সে প্রশ্ন আমরা করতে পারি। আর নির্মম সত্য হচ্ছে, তাঁর কাজ তো এখানে নেই। তাঁর কাজ বিদেশে আছে, বিভিন্ন জায়গায় আছে। যেখান থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেছেন, বাংলাদেশে, তাঁর কাজের প্রত্যক্ষ পরিচয় কোথাও নেই। এই অবস্থায় নভেরা কত বড় শিল্পী, ভাস্কর হিসেবে কত বড়—এটা বিচার করাটা কঠিন হয়ে যায়। তার কারণ, যাঁরাই নভেরা সম্পর্কে লিখেছেন, আমি লেখার কথা বলছি, তাঁরা তাঁর সম্বন্ধে উপন্যাস লিখেছেন। কিংবদন্তি তৈরি হয়েছে তাঁর সম্বন্ধে, কিছু গল্প হয়েছে, কিন্তু তাঁর কাজ সম্পর্কে কেউ কি খুব বেশি বলতে পেরেছেন? আমার জানামতে খুব বেশি কিছু কেউ বলতে পারেননি। তার কারণ, তিনি এখন ফ্রান্সে আছেন, তাঁর কাজ তো কেউ দেখেননি বা কারও সঙ্গে তো কোনো পরিচয়ও নেই, তার কারণ তিনি কারও সঙ্গে মেশেন না। আমরা তাঁর কাজের দিকেই যদি অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে কী দেখি? গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে যখন তিনি কাজটা শুরু করেন, তখন হামিদুর রহমানের প্রশ্রয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। বলা যেতে পারে, হামিদ তাঁকে ধরে ধরে কাজের দিকে নিয়ে গেছেন। সে কারণে তাঁর প্রথম দিকের কাজে হামিদের কাজের স্পষ্ট প্রভাব আমরা দেখতে পাই। হামিদ যে মাধ্যমে কাজ করেছেন, তার বিপরীত মাধ্যমে নভেরা কাজ করেছেন। তার কারণ, হামিদ মূলত পেইন্টার আর নভেরা মূলত ভাস্কর। আর হামিদের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন তাঁর কাজে থেকে থেকে পড়েছে। এইটার বড় প্রমাণ হচ্ছে তাঁদের দুজনের এই শহীদ মিনারের কাজগুলো। সেগুলো অসম্পূর্ণ এবং সেগুলো কখনো আর সম্পূর্ণ করা যাবে না। শহীদ মিনারের কাজ সম্বন্ধে হামিদ কিছু কিছু কথা বলেছেন। সব কথা বলেননি বা সব কথা বলা তাঁর পক্ষে সম্ভবও ছিল না। ওই জন্য যদি প্রশ্ন করা হয়, শহীদ মিনারের কাজটা কে করেছেন—এই কে করেছেন—এই প্রশ্নের জবাব কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ শহীদ মিনারের যে কাজগুলোর পরিচয় আমরা পরে পেয়েছি এবং যেগুলো এখন নেই, ধ্বংস হয়ে গেছে, সে হচ্ছে কিছু ম্যুরাল তাঁরা করেছিলেন। কিন্তু এই ম্যুরাল কার হাত দিয়ে তৈরি হয়েছিল? ম্যুরালের ড্রইংগুলো, নকশাগুলো কে করেছিলেন? এ নিয়ে বহু রকমের প্রশ্ন উঠতে পারে। একজনের দাবি হতে পারে যে এগুলো হামিদ করেছে, আর একজনের দাবি হতে পারে এগুলো নভেরা করেছে। কিন্তু এই তর্কেরও কোনো সমাপ্তি নেই। তার কারণ কাজগুলো অসমাপ্ত এবং কাজগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। পরবর্তীকালে হামিদ এই কাজ সম্বন্ধে কিছু কথাবার্তা বলেছেন। সেগুলোই হচ্ছে একমাত্র প্রমাণ। এ ছাড়া অন্য কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। আমরা যারা নভেরাকে দেখেছি, সেটা বলেইছি, গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকে। আমরা তাঁর খুব অন্তরঙ্গ ছিলাম, এ কথা বলা যাবে না। তার কারণ, নভেরা ঢাকাতে প্রথম দিকে দুজন ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করতেন, একজন হামিদুর রহমান, অপরজন হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। সাঈদ, যে হামিদের ছোট ভাই, তাঁর সঙ্গে তাঁর খুব বেশি যোগাযোগ ছিল, সেটাও কিন্তু সত্য নয়। হামিদের সঙ্গে তাঁর যে সম্পর্ক, সেটা ছিল ব্যক্তির, ভালোবাসার সম্পর্ক। অন্য দিকটা হচ্ছে, আপনাদের মনে রাখতে হবে, মনে করতে হবে, সেই পঞ্চাশ দশকের ঢাকা। খুবই একটা রক্ষণশীল শহর। সেখানে হামিদ এবং নভেরার বিরোধী জীবনযাপন। তাঁরা অত্যন্ত আনকনভেনশনাল জীবন যাপন করেছেন। এবং সেটি কনভেনশনাল ঢাকা শহরের বুকে প্রচণ্ড একটা ধাক্কা দিয়েছিল আরকি।

ভাস্কর্যের সঙ্গে নভেরা
ভাস্কর্যের সঙ্গে নভেরা

এবং সেটি তাঁদের কাজে শুধু নয়, তাঁদের কাপড়-চোপড়ে, পোশাক-আশাকেও প্রতিফলিত হয়েছে, বিশেষ করে নভেরার। এখন আমি যদি তাঁর কাজের দিকে আসি, যে কাজগুলো তিনি করেছেন, যে কাজগুলো আছে এখন, সেগুলো এক হিসেবে বলা যেতে পারে প্রাথমিক কাজ। এগুলো যে পাকা হাতের কাজ, এ কথা বলা যাবে না। তার কারণ ওই কাজগুলোর সঙ্গে যদি আমরা ওই সময়ের পৃথিবীর ভাস্কর্যের তুলনা করি, তাহলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতেই হবে, এই কাজগুলো কাঁচা, এই কাজগুলো এখন পর্যন্ত পরিণতি পায়নি। অপরটা হচ্ছে যদি বাংলাদেশের পরিসরে বিচার করি, তাহলে বলতে হবে, হ্যাঁ, এ কাজগুলোর মধ্যে একধরনের পরিশীলন আছে। অর্থাৎ এ কাজগুলোর ভেতর একটা প্রচুর 'হওয়ার সম্ভাবনা' আছে। সুতরাং এই দুটো বিচার কিন্তু দুই ধরনের। বাংলাদেশে ওই সময়ে আর কেউ তো ভাস্কর্য নিয়ে কাজ করেননি, নভেরা বাদে, যখন তিনি কাজ শুরু করেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে কার তুলনা করবেন? এখন আপনাদের আর্ট ইনস্টিটিউটে অনেকেই ভাস্কর্য নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু সেই সময়ে আপনাদের মনে রাখতে হবে, আর তো কেউ ছিল না। আমি আগেই বলেছি তাঁর কাজের সঙ্গে পেইন্টিংয়ের তুলনা করে কোনো লাভ নেই। যেটা আমরা ভাবতে পারি, বলতে পারি, সেটা হচ্ছে তিনি কাজ সম্বন্ধে যা কিছু ভেবেছেন—আধুনিকতা, সেই আধুনিকতার মিশেলটা সেখানে ছিল।...হ্যাঁ, আমি যেটা বলছিলাম আরকি। হামিদের কাজ থেকে নভেরার কাজের দিকে যাওয়া যায়। কিংবা ওই সময় আমিনুলের কাজ থেকেই নভেরার কাজের দিকে যাওয়া যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশে পেইন্টিংয়ের ক্ষেত্রে যে অ্যাবস্ট্রাকশনের সূচনা, সেই সূচনাগুলো কিন্তু নভেরার কাজের ভেতরেও দেখতে পাই। নভেরা রিয়েলিস্টিক কোনো ভাস্কর্য করেননি। তিনি অ্যাবস্ট্রাকশনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। এবং তাঁর অ্যাবস্ট্রাকশনের চিন্তাটা কিন্তু হামিদের কাছ থেকে পাওয়া, আমিনুলের কাছ থেকে পাওয়া। এভাবে একটা বিচার করা যেতে পারে। অপর বিচার হতে পারে, যখন আমিনুল এবং হামিদ ইউরোপে ছিলেন, নভেরা তখন ইউরোপে, আর ইটালিতে নভেরা ও হামিদ একসঙ্গে এসেছিলেন এবং আমিনুল ইসলামের বাসায় বহুদিন থেকেছিলেন। ওই সময়কার ইটালিতে আধুনিকতার যে ঢেউ উঠেছিল, সে ঢেউয়ের স্পর্শ হামিদের কাজে পড়েছে। কিন্তু ইটালিতে নভেরা কোনো ভাস্কর্য করেছেন, তার প্রমাণ কিন্তু কোথাও নেই। তাহলে আমাদের কাছে কী থাকল? ঢাকার তাঁর প্রাথমিক কাজগুলো, এ ছাড়া অন্য কোনো কিছু আমাদের হাতে নেই। তারও পরে তিনি যখন প্যারিসে স্থায়ীভাবে জীবন যাপন শুরু করলেন, তখন তিনি কী ধরনের কাজ করেছেন, এটা কিন্তু কারও জানা নেই। তার কারণ, তিনি কোনো প্রদর্শনী করেননি। বাঙালির সঙ্গে একেবারেই মেলামেশা করতেন না। এবং তাঁর কাজ কেউ দেখেছে, তারও কোনো প্রমাণ কারও জানা নেই। আমি বাঙালিদের কথা বলছি। আমি প্যারিসে বহুদিন ছিলাম। শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বহুবার চেষ্টা করেছি নভেরার কাছে যেতে। কিন্তু নভেরার কাছে পৌঁছানো যায়নি। তিনি কিছুতেই দেখা দেবেন না। এই হচ্ছে অবস্থা, এই অবস্থার জন্যেই তাঁকে কেন্দ্র করে মিথ তৈরি হয়েছে। তাঁর কাজ সম্বন্ধে খুব অথেনটিক কথাবার্তা কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়।

নভেরা
নভেরা

শিবু: তারপরও যতটুকু তাঁর কাজ আছে, এইটুকু নিয়েই যদি বলেন, যেমন ১৯৬০ সালে নভেরা তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী করছেন তাঁর ৭৫টি ভাস্কর্য নিয়ে, যা কিনা বাংলাদেশের ভাস্কর্যচর্চার ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা। তা ছাড়া নভেরা তাঁর কাজে একটা স্টাইল মেইনটেন করেছেন। সেই স্টাইলটা সম্পর্কে, মানে যতটুকু কাজ দেখেছেন, তাঁর ওপরই যদি আলোকপাত করতেন—
জাহাঙ্গীর: আমি তো আগেই বলে নিয়েছি, তাঁর যে কাজগুলো ঢাকাতে আছে, এগুলো একেবারেই তাঁর প্রাথমিক কাজ। বেশ কিছু কাজ অসমাপ্ত। তিনি সিমেন্টে কাজ করেছেন। এবং কার সঙ্গে তাঁর এই কাজগুলোর মিল আছে, সেই সময় ঢাকায় আর তো কেউ ভাস্কর্য করছে না...

শিবু: আমরা যতটুকু জানি, তাঁর কাজের শৈলী প্রসঙ্গে হেনরি মুর বা বারবারা হেপওয়ার্থের কথা এসেছে বারবার।
জাহাঙ্গীর: এগুলো বোধহয় একটু বেশি বলা হয়ে যাবে। তার কারণ, যে পর্যায়ে হেনরি মুর বা বারবারা হেপওয়ার্থ কাজ করেছেন, সে পর্যায়ে তো নভেরা পৌঁছাননি।

শিবু: শৈলীগত বা প্রভাবের দিক দিয়ে আরকি ...
জাহাঙ্গীর: যেটা বলা যেতে পারে, হ্যাঁ, তাঁর প্রাথমিক কাজে কিছুটা হেনরি মুরের, এবং হেনরি মুরের চেয়েও বেশি প্রভাব পড়েছে বারবারার, এই পর্যন্ত আমরা বলতে পারি। তার বেশি কিছু বলা সম্ভবপর নয়।

শিবু: আপনি তো শিল্প-সমালোচনা লিখতেন। নভেরাকে নিয়ে কি কিছু লিখেছেন?
জাহাঙ্গীর: না, নভেরাকে নিয়ে আমি নিজে কিছু লিখিনি।

বিদেশের মাটিতে নভেরা
বিদেশের মাটিতে নভেরা

শিবু: নভেরা সম্পর্কে যে লেখালেখি আছে, সেগুলো নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
জাহাঙ্গীর: আমি তো বলেছি, নভেরাকে নিয়ে উপন্যাস হয়েছে। কিন্তু তাঁর শিল্প নিয়ে আলোচনা একেবারেই নেই। তাঁর শিল্প নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন আমিনুল ইসলাম। তাঁর বইটার ভেতরেই, যে বইটা তিনি লিখেছেন আরকি, 'আমার জীবন এবং বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নের পঞ্চাশ বছর', তাতে কিন্তু আভাসটা পাওয়া যায়। এটাকে আমরা বলব অথেনটিক। তার কারণ, আমিনুল তাঁর কাজ দেখেছেন। একই সঙ্গে আমিনুল, হামিদ এবং নভেরা ইতিমধ্যে জীবন যাপন করেছেন। তার থেকে একটা বক্তব্য তৈরি হয়। এই জন্যে আমি বলেছি, তাঁর কাজের সঙ্গে আমিনুল ইসলামের প্রথম দিককার, যখন তিনি বিদেশ থেকে ফিরে আসেন, হামিদুর রহমানের কাজের একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সে ক্ষেত্রে একটা কথা বলা দরকার, সে হচ্ছে শিল্পের দিক দিয়ে হামিদুর রহমান যত বেশি চঞ্চল, তার কারণ, তিনি একটা স্টাইলের ভেতর দীর্ঘদিন কাজ করেননি। এটা কিন্তু আমিনুলের মধ্যে নেই। আমিনুল একটা স্টাইলের ভেতর দীর্ঘদিন কাজ করে অন্য একটা স্টাইলে বদলে গেছেন। সুতরাং এই যে সময়, নিজের কাজ সম্বন্ধে এই দিক থেকে যদি আমরা বিচার করি, তাহলে হামিদের তুলনায় আমিনুল ইসলামের প্রভাবটাকে লক্ষ করা যায়।

আলোকচিত্র Musée Novera Ahmed এর সৌজন্যে

(সাক্ষাৎকারের বাকি অংশে আলোচনা শহীদ মিনার নিয়ে। আগামী কাল সমাপ্য)