জ্যোৎস্নাসম্প্রদায়

মূলত ধানের মতো তুমি, মূলত বৃষ্টির মতো।
কার্পাস তুলোর দেশে আমি বৃষ্টিনির্ভর প্রেমিক,
এসো তুমি, একলক্ষ ছত্রিশ হাজার বৃষ্টিবিন্দু
তুমি এসো আজ। নীল নীল সুপারির মতো চোখ
তুমি এসো। জামদানি হৃদয় তোমার, তুমি এসো।
ধানগাছ গর্ভবতী হলো, আজ ক্ষীর রাঁধো বউ,
জমির ঈশান কোণে শোনো আজ লক্ষ্মীভোগ হবে।
কচু আর লাউয়ের মতো দ্রুত বাড়ে আমারই প্রেম।
দিন গুনি, একদিন ধানের ধরনে গর্ভবতী
হবে তুমি, তারপর লক্ষ্মীকাজল ধানের মতো
শিশু হলে, যাযাবর হব গঙ্গা উপকূল ধরে।
সারি সারি নারিকেল আর সুপারির গাছ বেয়ে
সন্ধ্যা নামবে যখন, তখন ভাতের ন্যায় ফর্সা
এক চাঁদ দেখা দেবে তোমারই মুখ উজ্জ্বল করে...

***

পাথরে জ্বলছে চুমা, এক হেঁয়ালি চাঁদের প্ররোচনায়,
গোত্রমাতা, তুমি দেখেছিলে পেয়ারাগাছের নিচে
জেগে উঠছিল আরও ছোট ছোট গাছ—সেই থেকে
বীজের ধারণা নিয়ে তুমি চুম্বন করেছ ঠোঁট;
পুরুষের আর পাতাদের। সেই থেকে ক্ষণে ক্ষণে
নিজেকেও ভেবেছ বীজ, এক অনন্ত কৃষির বীজ
তুমি, তুমি চারা, তুমি গাছ, তুমি বিশ্বচরাচর।
সুরমার তীরে দেখ আজও সে যুবতী চাঁদ আমায়
প্ররোচিত করে, আর পানিতে শিরীষপাতা পড়ে,
আর আমি সেই পাতায় পাতায় ভেসে ভেসে কত
তোমাকে ভাবনা করি দ্রাবিড় মহিলা, কী প্রকারে
তুমি বীজের ধারণা নিয়ে এখনো চুম্বন করে যাচ্ছ
সভ্যতার ঠোঁটে। সাত লক্ষ বছর আগের এক
রাতে, মনে পড়ে? হৃদয় ছিঁড়ে ঠিকরে বেরিয়েছিল
প্রেম, আর স্থলে স্থলে মিশেছিল প্রণয়ী পাথরে।

***

তুমি ছিলে ময়ূরাক্ষী নদীর কিনারে। সেই থেকে
নদীতীরে জগত গড়েছি। একদিন আমাদের
প্রত্ন-প্রশাসন দেখে যারা হেসেছিল, আজ দেখো
সমাধিতে হলুদ কঙ্কাল হয়ে তারা শব্দহীন।
রাঢ় দেশে, নিঝুম প্লাবন থেকে গড়ে উঠেছিল
তোমার তামাটে মন, আর ছাইয়ের মধ্যে লৌহ
হয়ে তুমি দাঁড়িয়ে থেকেছ, লাল-কালো মৃৎপাত্র
আর মানচিত্র হাতে নিয়ে। লোহিত স্বপ্নের দেশে।
সহস্র বছর পর, আজ, ময়ূরাক্ষী নদীর পানিতে,
এক নেড়ি ইঁদুরের পা-ধোয়া জগতে, আধো-সাদা
জ্যোৎস্না পড়েছে। ইচ্ছে হয়, তামাটে কাজল-কাঠি
দিয়ে ছুঁয়ে দেখি তুমি আজও জেগে আছ কি না। আর,
লালচে কাঁকর মাটি দিয়ে বানানো ঢিবির কোণে,
তোমার ভাস্কর্য, আজ-অবধি চিরহরিৎ আমার মনে।