মায়ের সাথে কিছু আলাপ

মা, ট্রেন এখন আর কণ্ঠে তেল পান করে না, গানের সুরও গেছে পাল্টে। কোথা থেকে যেন শুনেছে অর্থেরও আছে তরলের স্বভাব, সেই তরলে কণ্ঠ ভেজাচ্ছে জ্যৈষ্ঠ মধুতে। আর গানের সুরে সুরে বের হয়ে আসছে সাদা মেঘের ধূসর অন্ধকার। গুটিগুটি পায়ে যে গান গাইত পুরোনো, তা ভুলে, নতুন গানে দৌড়াচ্ছে এক বুলেট—কার যেন বুকের দিকে। মা, অর্থে কী এমন তারল্য আছে, যা পান করলে অনর্থক ট্রেনও অর্থ পেয়ে যায় চলার। দেখো, নতুন ট্রেনের পেছনে চলছে পুরোনো একটি বগি—যেন অনর্থক বসে আছে শেষে। 

শেষ বগির বাসিন্দা আমি, ট্রেন প্লাটফর্মে পৌঁছে গেলেও আমি পৌঁছাই দেরিতে।
***
জামাটা পরতে পরতে সেটা আমি হয়ে গেছি, মা। বাবাকে বলে দিয়ো সেটা পরে বের না হতে। আমাকে পরে বাবা বের হলে বন্ধুরা বাবাকে আমার নাম ধরে ডেকে বসবে। আমার ভেতরে বাবা চলে গেলে, স্বামীর খোঁজে তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বিব্রতবোধ জাগবে। তারচে বরং আমাকে তুলে রাখো ঘরের পুরোনো হ্যাঙ্গারে। সেখান থেকে নামিয়ে কোলে করে মুখে খাবার তুলে দিয়ো। ময়লা হলে কুসুমজলে স্নান করিয়ে দিয়ো। রোদে শুকিয়ে ফের হ্যাঙ্গারে রাখতে গিয়ে যদি টের পাও ভেতরে বিবিধ কলুষ—দাগ, অদৃশ্য ময়লার নানাবিধ দুর্গন্ধ; এবং এই সব কলুষ ময়লা ধুতে গিয়ে যদি তোমার হাত নুয়ে পড়ে, তার ভেতরে মুখ লুকিয়ে বলো শুধু…
আমি তো জামা খুলে মাছের দম নিয়ে বসে আছি নদীর তীরে। তাৎক্ষণিক নেমে পড়ব আজীবন স্নানে।
****
মা, দেখো, পান্তা ভাত পানসে বেশি বলে লবণও লাগে বেশি। পানসে আর নোনতা সমান সমান হলে খাওয়ায় স্বাদ আসে। এক থালা পান্তা ভাতে কয়েক চিমটি লবণ, দেখো, ফাইট দেয় কেমন সমানে সমানে। পানসেকে হারিয়ে নোনতা বিজয়ী হলে ভালো লাগে না, পানি ঢেলে সমতা আনি। আবার নোনতাকে হারিয়ে পানসে বেশি হলে নোনতা বাড়াতে হাত বাড়াই লবণের দিকে। কেউ হেরে গেলে ভালো লাগে না, জিতে গেলেও। মা, আমি তো চাই যুদ্ধটা এভাবেই চলতে থাকুক, সমানে সমানে।
এমন একটা যুদ্ধই চলুক, যে যুদ্ধ এক থালা ভাত খাওয়াতে পারে।