পিয়াস মজিদের কবিতা

>পিয়াস মজিদের কবিতাগুচ্ছে পাওয়া যাবে এই দমবন্ধ সময়রে সুর

প্রবচন, কবিতা ইত্যাদি

প্রবচনের প্রতাপে

কাঁদে, কবিতা কাঁদে।

তুমি ও তোমার সময়ের জল

হয়তো খুঁজে পেয়েছ

কবিতার অধিক নাব্য আগুন।

আমি শব্দের হরিণ হাতে

পাড়া বেড়াতে যাই;

দেখতে মানুষ লাগে

উদ্বাস্তু আত্মার বসতি

তাদের আবাসনে। 

আমি এই কান্নার কারাগারে

হাসিখুশি নতুন আসামি।

শব্দের স্বাদ ভুলে

যোগ দিই চন্দ্রচোরের দলে;

কালোবাজারে দিগন্ত বেঁচে

কথায় কথায় রাত হওয়া কণ্ঠ

তোড়ায় বাঁধে তারার তারিফ।

এমন ফুলের ফানুসে

বিস্মরণ সহজ,

ফেলে আসা গ্রহের গঠন।

ও আমার

বিগত-কৃষি, ব্যবসাপাতি

পলিতকেশ রোদের আঁতাতে

মেঘের মুণ্ডন। 

এই করে 

গোলাভরা নন্দন

লাশের বাহারে

নিশ্বাসের যথাযোগ্য

নোঙর

বন্দর

সুন্দর।

সারি সারি 

ঘুমের সরণি

শেষ হয়েও অশেষ

নাশক জাগরণ।

অনন্য অরণ্য থেকে

দেহদীপ শান দিয়ে দিয়ে

বুঝেছি

নিভে যাওয়া কারে বলে!

পৃথিবীর সৎকারসভাতে জ্বলে

ভূত-পেত্নীর শাদিমোবারক।

অপরাধী কবিতার কল্যাণে

আবহমান উনুনে আমার

অল্প আঁচে বিরিয়ানি রাঁধা হয়।

নিজেরই খাদ্য হওয়া ঘ্রাণে

খাদকের উৎসব জমে ওঠে,

ক্ষুধিত মৃত্যুর মুখে

জং-ধরা জীবন গছাতে পেরে।

ভাইসব, বোনসকল

জন্মদিনের ঢেউ তোমাকে নিয়ে চলে কবরের তীরে।

গীতবিতানের রক্ত জমে জমে

যে নরম মাটিতে ভিত্তিপ্রস্তর;

অমিয় অসুর।

বজ্র পুষ্পাহত,

আকাশের শাদানীল স্কুলে

পড়তে আসে কালো কিতাব, মেঘ।

রাত তার রূপের রন্ধ্র থেকে

দয়া করে ভিখিরি-বাসনকে।

সেই রসদে দিনযাপন;

তুমি তার নাম দাও অরূপরতন।

সামনে সমুদ্র,

নোনা নেকলেস গলায় পড়েও

ভেতরে ভেতরে

ও মোর ভালোবাসা, 

খয়েরি স্বর্ণের ফাঁস।

পথ-ডোবা

শ্বাপদ সৌন্দর্যের শকটে

নিশ্বাসের নামজারি শেষ হয় না

বেঁচে থাকার ভূমি অফিসে।

কার বিয়ে?

আলোর বাদ্যে

অন্ধকার যথাযথ জ্যোতির্ময়।

আত্মার উপকূলবর্তী অঞ্চলে

সাত শ নম্বর সতর্ক সংকেত;

ঠিক করতে হবে

সার্বিক পরিস্থিতি 

তুমি কে?

স্ট্রেট না ট্রান্স

গে/লেস/বাই?

বৃদ্ধভুবন;

ডাক দিয়ে যাই

ঘুমন্ত কিশোরী রাঈ।

ঘাসের বুকে লাল লেক

ধূসর বুদ্ধ

স্থির বৃক্ষ

হিংস্র বাতাসে ওড়ে চলা

জলপায়রার প্রতি

নিবেদন করি 

আগুনের অঞ্জলি।

আমার সকল নিয়ে শুয়ে থাকি

উত্তেজক শূন্যতার সঙ্গে

সঙ্গমের আশায় আশায়।

প্রয়াত পুণ্যাত্মার জন্য

পাপের প্রদীপ জ্বালো,

অসহ্য ঊষার ঝলমল থেকে

কতদূর

কুতীর্থের কাল!

ভাইসব, বোনসকল,

পৃথিবী এমনই একটা

সংগ্রামী সমাবেশ

আয়ুজর্জরিত যার যার সংগ্রাম

জীবন নামের শেকল ছেঁড়ার।

উদয়, অস্তজটিলতা

জল সেই জাহ্নবী

তোমার দান করা দাহে

যেখানে অনিকেত আমার

আবাসন, ভস্মের বন।

মধুঘুম লখিন্দর

বেহুলার বিষবাসর

স্বপ্ন ও সাপের শিখায়

যতটুকু আলো,

মেঘকালো বর্ষার 

বেণি বেঁধে 

বাকি যত ঋতু

অন্ধকার মোমবাতি-তরু।

কদর কিংবা শিবের রাত

পেরিয়ে প্রহর

পালানো পাখির

প্রাণের পালক।

সব আজ খাটবে

হাওয়ার হাজত,

ইতিপূর্বে গরাদে গোলাপ

শয়তান বাস্তবের

সেবাদাস-দাসী

আবার বলে

স্বপ্নের সওয়ারি,

বহুচারী মানুষের

আত্মার ধাতব

ফুলে খুঁজে 

গলনের খেয়া,

অশোক আর পলাশের

পুরনো পরিখা থেকে

ঘৃণার ধাবমান ধারা।

বাঁচো;

শ্বাসে না হোক

সংখ্যায় বা শিরোনামে

উপযুক্ত অভিধা--প্রেমের প্রভা।

জ্যোতির্বালা জল্লাদের

কসম কেটে কেটে

যারা উন্মূল অগ্রসর

আগুনের আশ্রমে

তাদের তরী তৈরি হচ্ছে

ঝিকিমিকি তারার তনুতে।

প্রেতিনীর প্রার্থনা

হাড়-মাংস-চর্বির বলাকা

সোনাঝরা ইত্যাকার বিস্ফার

মোহমুদগার;

এত এত উদয়ে 

অভিভূত পৃথিবী

নেবে কি 

আমার আঁখি,

চির-অস্তগামী?

অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]