আবির আবরাজের কবিতা

আবির আবরাজ
আবির আবরাজ
>

কবিতায় নিজের একটি স্বর তৈরির চেষ্টা আছে কবি আবির আবরাজের। শব্দে শব্দে সময়কে আঁকতে ভালোবাসেন। প্রচল অনেক কিছুকেই অস্বীকার করতে চাওয়া এই তরুণ কবির এখনো কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। বর্তমানে তিনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ঢাকার তিতুমীর কলেজে পড়ালেখা করছেন।

জলের দিকে আরও
কেউ যখন জলের দিকে আরও
ডুবছে ধীরে মেঘের অন্ধকারে
দৃশ্যে যদি তাকে ধরতে পারো
এমন দিনে গোমতী নদীর পারে

তুমি তখন বাড়িতে আছ একা
তখন যদি মেলানকোলিক রাত
অন্তরালের জানলা রেখো খোলা
চোখেতে পড়ুক শীতল জলের ছাট

ভিজিয়ে দিয়ো ব্যথার পাণ্ডুলিপি
তোমার বলো ভাবনা কিসে আর
বৈশাখের এই গোমতীরে যদি
কেউ লিখে দেয় মৃত্যুর অধিকার

তাহার দোষে সে-ই মরবে হায়
না হয় কলবে থাকুক প্রেমানুতাপ
বলো, এত মরণ কিসের দায়
তোমার চোখে কিসের অভিশাপ?

কত গভীর গোমতী নদীর তল
সে খবর ঠিক আত্মঘাতীই জানে
তার কিসে আর গভীরতায় ভয়
যে ডুবেছে তোমার চোখে, নিজের সন্ধানে


পাতাদের মৃত্যু এবং রংসংক্রান্ত জটিলতা তুমি ধরছ
তুমি মেয়েটা,
তোমার ছোটবেলাতে আর্টের ক্লাসে দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলের গাছেদের
চিত্র আঁকতে গিয়ে পাতাদের রং হলুদাভ করে দিয়েছিলে,
ভেবেছিলে পাতারাও তো হলুদ হয়, পর্যায়ে বিষণ্ণ মৃত্যুর দিকে
এগিয়ে চলে খেজুর বৃক্ষের সবুজ সবুজ সেই সব পাতাদি।
শিক্ষিকা
বন্ধুরা
অসদয় পিতা
যারা বুঝল না তোমার অভ্যন্তরীণ ভাবনার জটিলতা।
কেউ কেউ হেসে গেল,
অনেকেই অধিক উপহাস্যে ফিরিয়ে নিল চোখ।
পিতার রাগত প্রলাপে তোমার গভীর ব্যথা পাওয়া যেন
সেই পাতাদের মতোই—
খেজুরের সবুজ সেসব অবস্কিওরড পাতাদের ধীরে হলুদাভ হয়ে মরে যাওয়ার মতোই।
বিষণ্ণতার রং কেবলই ধূসরতার দিকে কেন যাবে?
সে তো হলুদও হতে পারে
ঝরে যেতে পারে এমনও রং ধরে, ভেবেছিলে।

অথচ তোমার এই জটিল দর্শনাক্রান্ততা
পেনসিল অন পেপারের আজব সংগম রহস্য
কেউ বোঝেনি।
তুমি;
পাতারা নিজস্ব কায়ায় এমন বিবর্ণমুখ হলুদের আভা ধারণ করে ধীরে মরে যায় কেন,
আদতেই বুঝেছিলে কি?
মৃত্যু এবং রঙের জটিল এই নর্ম সহজেই ধরেছিলে কি?
সেই সব মর্মান্তিক মৃত্যু ছুঁয়ে এসে
সেই সব পাতাদের ঝরাবার শেষে
শিক্ষিকা এবং বন্ধুদের হাসির উচ্ছলতায় আলোকিত
অথবা তোমার লুকায়িত স্তননের বেদনায় অন্ধকার ক্লাসরুমের গ্রিল ভেদে যে বাতাস শুকাবার দায় নিয়েছিল
চোখ থেকে নেমে আসা জলের গোপন ধারাপথ—
তা তো অহেতুক হতে পারে না,
পাতাদের হলুদ হয়ে হয়ে মরে যাওয়া
তা তো অহেতুক হতে পারে না।

তুমি মেয়েটা,
ভাবো, কী তোমার ছোটবেলাতে আর্টের ক্লাসে পেনসিল অন পেপার
আর দূরবর্তী গ্রামাঞ্চল,
তার খেজুরের পাতাদের মৃত্যুবিষয়ক যে রং এঁকেছিলে;
যদিও তারপর বহুস্বভাবী দিন পেরিয়ে গেছে,
মরে গেছে হলুদাভ আরও বহু পাতা দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলে;
তা তো অহেতুক হতে পারে না—পারে কি—?

কিউনিফর্ম
ক্ষুধার এক নিজস্ব ভাষা রয়েছে
তার কিউনিফর্ম হতে পারে এমন—এখানে শিশুরা শোষণের পরিবর্তে কামড়ে ধরে থাকে মায়েদের স্তন, দুধ নয় উষ্ণ রক্তের গ্লানিতে ভরে ওঠে মুখ।
আতশ কাচের নিচে ফেলে পড়তে গেলে
মনে হবে নক্ষত্রের ছন্দপতন ঘটছে একে একে
জমাটবদ্ধ অন্ধকার আধুনিক হিপনোটিজম শিখে নিয়ে
এগিয়ে আসছে প্রথম আসমানে,
যার রহস্যের ধারাপথ কেবল বুভুক্ষু মানুষেরাই জানে।

অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]