সেঁজুতি জাহানের কবিতা

সেঁজুতি জাহান
সেঁজুতি জাহান
>

সহজ কথা সহজভাবে বলাই কবি সেঁজুতি জাহানের কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য। শব্দ-ছন্দে সময়ের নির্জনতা নয়, বরং কালের কোলাহলকে ধরতেই বেশি আগ্রহী এই কবি। বিচিত্র রূপকে ধরতে চান সময়ের স্বর। জন্ম ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। এখন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। তাঁর একমাত্র কাব্যগ্রন্থ 'জিনটিকা' বেরিয়েছে ২০১৭ সালে।

আমার খালি বিদেশ বিদেশ লাগে

আমার খালি বিদেশ বিদেশ লাগে
প্রতিদিনের দাঁতব্রাশের ফাঁকে
গলার ভেতর গরম গরম ব্যথা
দ্রুত হাঁটার নিয়ম বাঁধা দিনে
ঘুমের ঘোরে কাজের মাথা ঘোরে

আমার খালি বিদেশ বিদেশ লাগে
ভোরসকালে অলস কর্যকলাপ
শেষ দুপুরে ঘুম না হওয়ায় ঠেকে
কালের সাথে গেলেই আসে সকাল
কাল না গেলে বিকাল নেমে আসে
রাতগুলো সব মিথ্যে ফাঁকির বোলে
কার দুয়ারে চিহ্ন-মাছের ঝাঁক

আমার খালি বিদেশ বিদেশ লাগে
মন মেজাজে সকল সময় ঠ্যাকা
সবগুলো দিন অচিন মাঠের ঘাসে
দূর থেকে ওই বরফ-সূর্যবেলা
বুঝি না তার কোনোই কথার জাল
কান-কপালে সবখানেতেই ভড়ং
অপর কোথাও সকল লাগে আপন
ঠিক তখনই আস্থা হারায় জলে
চাবির ছড়া অন্য কোথাও থাকে

মৃত নারকেল গাছগুলো

নারকেল গাছগুলো
তরতরিয়ে
স্বাধীনতার পরের বছর বেঁয়ে
উঠে গেছে দোতলা ঘর ছাড়িয়ে

সেদিনও তার চিকন চিনচিনে দেহ
একরোখা এলোচুল বাতাসে নড়ছিল
ডাবগুলো পবিত্র সবুজ
ঝুনাগুলা ঝনঝনে পয়সার আকর—
কারও কারও কাছে

কারও কাছে শুষ্ক চোখের আর্তনাদ

পরগাছা বাড়িওয়ালা
ঘানি ধরেছিল ম্যালা

ফাউ ফাউ বিরিয়ানি বিলিয়ে
ম্যালা ভোট গুঁজে তো নেবেই
পাজামার রিবনে

আকাশমুখী বনতালাশের গাছ
ঝড়ে ভেঙে পড়েছে সে নর্দমায় আজ!

উঁই
আস্ত একটা বুকশেলফ গিলে খেয়ে ফেলেছে।
শেলফের ভেতরের বইগুলোকে খুব নিরীহ আর অসহায় লাগছে দেখতে।
কত শত বুদ্ধির তোড়জোড়, ইতিহাসের নানা তত্ত্ব ও অন্যান্য ভালোবাসার অসমাপ্ত আখ্যান
সব এখন উঁইয়েদের পেটে।
উঁইগুলো দেখতে সুন্দর। হালকা পুঁজের মতো সাদা সাদা পেটে পুরো দুনিয়া এঁটে যায়!
শুনেছি তারা নাকি জন্মান্ধ—সর্বনাশ, তাতেই এই!
পাতলা কাগজ থেকে ভারি ভারি কাঠ—অন্ধ সে চোখে তাদের জিহ্বার স্বাদ জাগায়!
বুঝলাম,
সুন্দরী পুঁজওয়ালা উঁই আর পুঁজির মধ্যে পার্থক্য কেবল এক ঝাকমারি বুকশেলফের!

অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]