রিমঝিম আহমেদের কবিতা

রিমঝিম আহমেদ
রিমঝিম আহমেদ
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় জন্ম নেওয়া রিমঝিম আহমেদের কবিতার একটি বড় বৈশিষ্ট্য গীতিময়তা। বিচিত্র রূপক-প্রতীকের ব্যঞ্জনায় বহুমাত্রিক ইশারার মাধ্যমে সময়কে স্পর্শ করতে আগ্রহী এই কবি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাষাকে ধরতে চান ছন্দ-সুরের অবয়বে। পেশায় তিনি সরকারি চাকুরিজীবী। ২০১৬ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লিলিথের ডানা’ বেরোনোর পর এ পর্যন্ত তাঁর আরও তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

অচেনা সময়ের শ্বাস

যদি ভেঙে পড়ি, যদি দুপুর পেরিয়ে আসে রাত
জীবনকে হাতে ধরে মৃত্যুশব্দ মুখস্থ করাই
এই তবে ঠিকঠাক সময়, শুশ্রূষা দিতে পারো—
শোকের গোপনে রাখো হাত— বিন্দুবৎ আয়ু পাই।

হাওয়ার জিহ্বায় শাণ, বিচ্ছেদের আমূল-বিরহ
বিদেহী স্পর্শের নুড়ি পাথরেও রয়েছে খোদাই
কড়িবর্গা ভেঙে পড়ে, ধ্বংস-দানবের ভারে। কোন
দীর্ঘ ঘাসের অরণ্য আমাকে ডাকছে অবেলায়?

আশ্চর্য দহন লেগে পুড়ে গেছে মাতৃস্নেহকোল
পিতার চোখেও জ্বলে বিমর্ষ উনুন–কালোকাঠ
বোনের আহ্লাদ যেন আধপোড়া পাতিলের ছাই
সব পথ ভ্রষ্ট হলে, উবে যায় শেষতম ঘাট

বুদ্ধের ধ্যানের মতো নৈঃশব্দ্যে নিজেকে যে-ই পাই
সেখানেও তুমি আছ, মৃত্যু আছে— শুধু আমি নাই।


ঝড়ের গান

কে যেন বলেছে কালো রাত শেষ হবে
বলেছিল— ঘুমোও এবার! কেঁপে গিয়ে—
জল ঝরে, মারমুখী সারাটা দুপুর

অশ্রুতে ভিজছে কার শাড়ি! বৃষ্টি ভেবে?

আলো জ্বালি আর... ঘর বাঁধি, খেলাচ্ছলে
স্বপ্নে কি শুনেছি সেই দুঃখভোলা গলা!
এপাড়া-ওপাড়া করে ঢেউতোলা হাওয়া
আমাকে উড়িয়ে নিয়ে কোথায় যে ফেলে!

যে পাখি গিয়েছে মরে শীতের ভেতরে
সে-ও কি শালিক ছিল, খাঁচাবন্দী টিয়ে?
পাতাঘেরা কুড়েঘর ভেঙে গেছে ঝড়ে...

এই ঝড় থেমে যাবে, আঁধার পেরিয়ে
আমরা ঘুমাব ফের ধুলোবালি ঘাসে
বীথির শরীর ছুঁয়ে যদি রোদ আসে

জুমচাষি

ক্যামেরার শাটার টানছ, দিনমান ছবি তোলো কার?
তামাশা সেলাই করে, সেই ঘরে ঢুকে বসে আছ
যেখানে তুমুল অন্ধকার!

ছেঁড়া রাত জোড়া হলে, দিয়েছ আনন্দে হাততালি
ভূগোলে নিভৃত দিন চলে যায়। বিবাদতরঙ্গে ঢেলে
মীমাংসার শর্তহীন কালি

শরীরে ঝড়ের দাগ, কাটাকুটি স্মৃতিও করুণ
ঘুম এঁকে শুয়ে থাকে অশ্বত্থের সতেজ ছায়ায়
ধনুবীর কিরীটী অর্জুন

পাহাড় অবৈধ বাড়ে, ভূমিহীন মানুষের বুকে
মনে হয়, ভাত ওড়ে অবিকল মাছির আদলে
জুমচাষি, খিদের সম্মুখে

অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]