এক যোদ্ধার গল্প

আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, একাত্তরে দেশ স্বাধীন করার জন্য কিছু চিন্তা না করেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

যখন থেকে বোঝার ক্ষমতা পেয়েছি, তখন থেকে বাবার যুদ্ধের গল্প শুনতাম আর চিন্তা করতাম, ওই বয়সে কারও কী করে এত সাহস হয় যে পরিবার ছেড়ে এত কঠিন কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৬–০৭ এর দিকে যখন ঘন ঘন লোডশেডিং হতো, তখন মোমের আলোতে আমরা পুরো পরিবার বাবার ঘরে গিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতাম আর তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেন।

একবার বলছিলেন, তিনি যখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, তাঁকে দিনরাত পাহাড়ে কাটাতে হয়েছে। পাহাড়ে অনেক জোঁক থাকায় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় লবণ দিয়ে বড় একটি বৃত্ত তৈরি করে নিতেন, যাতে জোঁক এসে কামড় না দেয়। আরও বলেন, প্রশিক্ষণে যাওয়ার আগে শপথ পাঠ করানো হতো। এর মধ্যে যাঁরা একটু ভালো সুরে জাতীয় সংগীত গাইতে জানতেন, তাঁদের নাম সংগ্রহ করে সামনে রাখা হতো, বাবাও ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন।

>

একবার বলছিলেন, তিনি যখন যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, তাঁকে দিনরাত পাহাড়ে কাটাতে হয়েছে। পাহাড়ে অনেক জোঁক থাকায় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় লবণ দিয়ে বড় একটি বৃত্ত তৈরি করে নিতেন, যাতে জোঁক এসে কামড় না দেয়। 

কত সংগ্রাম করে বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন, তা আমাদের সঙ্গে গল্প করে বলতেন। আমার ব্যক্তিগত জীবনে বাবার এই জীবনকাহিনির প্রভাব অনেক বেশি। নাচ আমার নেশা। সেই সুবাদে বিদেশে যাওয়ার পর একবার মূল আয়োজনের আগে জাতীয় সংগীত বাজানো হয়, তখন বাবার গাওয়ার কথা মাথায় আসে। এবং ভাবনা আসে যুদ্ধ চলাকালে তিনি কি কখনো কল্পনা করেছিলেন যে এমনও দিন আসবে, যখন আমাদের জাতীয় সংগীত সম্মানের সঙ্গে বিদেশের মাটিতে বাজানো হবে।

এ ছাড়া জীবনে চলার পথে যখনই কোনো বাধাবিপত্তি এসেছে, তখন বাবার যুদ্ধের দিনগুলো মনে করে নিজেকে নিজেই প্রেরণা দিতাম। তাঁর জীবনে আর যা–ই হোক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসের কমতি হয়নি। বাবাকে বলা হয়নি কখনো যদিও, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। তোমার দুই মেয়েকেই তোমার মতো যোদ্ধা বানানোর জন্য।

নৃত্যশিল্পী, সাধনা কালচারাল সেন্টার।

অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]