না-বলা কথাগুলো না-পাঠানো চিঠিতেই রয়ে গেছে...

প্রিয় বাবা,

প্রিয় অপেক্ষাও আপন কোনো শব্দ যদি আমার জানা থাকত, তবে আমি সেটা তোমার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করতাম। তোমাকে না–বলা কথা বা অনুভূতি এক চিঠিতে কখনো শেষ করা সম্ভব না।

আমি যখন মায়ের কাছে বকুনি খেতাম, তখন আমার মনে হতো, বাবা থাকলে অবশ্যই আমাকে বকতে পারত না। মাকে আচ্ছা করে বকে দিত যেন আমাকে না বকে। সারা দিন আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকতাম, কখন তুমি বাসায় ফিরবে। আমি এখনো বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তোমার ফেরার অপেক্ষা করি। তুমি যে ঘেমে আধো গোসল করে বাসায় ফেরো, তখন আমার ইচ্ছা করে তোমার জন্য যদি আমি ঘরকে তোমার সবচেয়ে আরামদায়ক জায়গা করে দিতে পারতাম, তবে কতই না ভালো হতো!

এক রাতে মা জানল, তোমার আসতে ঢের খানেক দেরি হবে। তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! সকাল তখন আটটা। মা উদ্বিগ্ন গলায় জানায়, তুমি ফেরোনি। কথা শুনে আমার শরীরে কেমন একটা শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গিয়েছিল, এদিকে ফোনটাও সুইচ অফ। রাতে চার্জ শেষ হয়ে গেছে, তা বুঝতেই পারছিলাম। তারপর তোমাকে খুঁজতে সবাই ব্যস্ত, আমিও কাল যাদের কাছে তোমার কাজ ছিল, তাদের নম্বর বের করে খবর নিচ্ছিলাম, আর কান্না করে ভাসাচ্ছিলাম, জানো বাবা? দুপুরে কলবেলের টিং টং। তুমি দরজায় হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে, ঘেমে টইটুম্বুর হয়ে। আবার হাসতে হাসতে বলছিলে, ‘আরে, আমি কাল স্টেশনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হা হা হা।’ কী কাণ্ডটাই না ঘটিয়েছিলে, একটা ফোনকল তো দিতে পারতে কারও ফোন থেকে। দিলে কী এমন হতো?

>

মা উদ্বিগ্ন গলায় জানায়, তুমি ফেরোনি। কথা শুনে আমার শরীরে কেমন একটা শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গিয়েছিল, এদিকে ফোনটাও সুইচ অফ। রাতে চার্জ শেষ হয়ে গেছে, তা বুঝতেই পারছিলাম। তারপর তোমাকে খুঁজতে সবাই ব্যস্ত, আমিও কাল যাদের কাছে তোমার কাজ ছিল, তাদের নম্বর বের করে খবর নিচ্ছিলাম, আর কান্না করে ভাসাচ্ছিলাম, জানো বাবা? দুপুরে কলবেলের টিং টং। তুমি দরজায় হাসতে হাসতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে, ঘেমে টইটুম্বুর হয়ে। আবার হাসতে হাসতে বলছিলে, ‘আরে, আমি কাল স্টেশনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হা হা হা।’  

বাবা, তুমি কি জানো, তোমার যে অদ্ভুত একটা গুণ আছে। তুমি খুবই অসাধারণভাবে প্রত্যেক কাজে অনুপ্রাণিত করতে পারো। হতাশার সময় তুমি সব সময় এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছ। আমি জানি, আমার প্রত্যেক সফলতা, প্রত্যেক ফলাফলের পেছনে আছে তোমার হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর হাসিমাখা মুখের অনুপ্রেরণা। আমার প্রত্যেক সফলতা কিংবা ভালো কাজের পর তুমি যে ধন্যবাদ দাও, আমার কাছে সেটা সবচেয়ে বড় উপহার।

জেনে বা অজান্তেই মাঝেমধ্যে তোমার মনে অনেক কষ্ট দিয়ে থাকি। কেন যেন তুমি কখনোই তা প্রকাশ করো না, আমিও কখনো মুখফুটে ক্ষমা চাইতে পারিনি। অনেক দোষী মনে হয়, মাঝেমধ্যে খুব কষ্টও হয়। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো, বাবা। আমি সত্যিই সবকিছুর জন্য সরি। সত্যি বলতে বাবা, আমি কখনো তোমাকে ভয় পাইনি, তুমি কষ্ট পেতে পার, এটাকে ভয় পেয়েছি।

কোনো এক অদ্ভুত জড়তার কারণে তোমাকে কখনোই বলা হয়নি ‘বাবা, তোমাকে ভালোবাসি’। সর্বদা সৃষ্টিকর্তার কাছে তোমার সুস্থতা এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

ইতি, তোমার রুবাইয়া।
অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]