তুহিন চৌধুরীর কবিতা
>
কবিতায় নিচু স্বরে কথা বলতে ভালোবাসেন তুহিন চৌধুরী। পরিস্রুত অনুভবগুলো আঁকতে চান সহজ-সাবলীল ভাষায়। তাঁর কবিতার তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে প্রায়ই ডানা মেলে অকথিত এক বেদনা। সিলেটে জন্ম নেওয়া এই কবি বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন। এখানে সংহতি সাহিত্য পরিষেদর তিনি সাধারণ সম্পাদক। এখন পর্যন্ত তাঁর দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।
অব্যক্ত বুনো ফুল
কারও কারও জীবন মৃত্যুর মতো
যেখানে ঘাসের জন্ম হয় বুকের ওপর।
গ্রীষ্মে বা শীতে, সেখানে দিনগুলো
কেবলই অন্ধকারাচ্ছন্ন।
নিভু নিভু মোমবাতির মতো একেকটি রাত
প্রতি ক্ষণে কেঁপে ওঠে অনুষ্ণ বাতাসে।
ঝোপঝাড়ে, নিঃশব্দ সহবাসে
জেগে ওঠে অব্যক্ত বুনো ফুল;
পার্থিব শরীরে জল-মাটির আগ্রহ তার চিরকালের।
জগতে শরীরই যখন সম্পর্কের সেতু
মৃতের সংস্পর্শে আগ্রহ জেগেছে কার কোন কালে?
মানুষ কী হয়েছে কখনো কারও আগ্রহের বিষয়?
সওদা
হতে পারতাম আমি কোনো ইয়াজিদি সুন্দরী
সুনসান পাহাড়ের অদম্য ঝরনা,
চাঁদ-তারাভরা আকাশের নিচে আশ্চর্য আনন্দধারা;
হতে পারতাম নির্জনতা,
আকণ্ঠ তৃষ্ণায় ওষ্ঠের প্রশ্রয়
আমার উৎসারিত নির্মল উৎসে পরিস্রুত হতো
তোমাদের উদ্যত সব পুরুষালি বোধ।
হতে পারতাম কোনো এক রোহিঙ্গা রমণী
আধকাটা স্তন, কবন্ধ বাছুর;
একবার ভেবে দেখো,
হতে পারতাম আমি এক ফিলিস্তিনি জননীও,
শুকনো পাতার মতন উড়ে উড়ে
খবরে খবরে স্পর্শ করতাম তোমাদের দূরদর্শনের পর্দা;
ধরো, তোমাদের স্বপ্নগুলো আমাকে দিলে দেখতে,
ওগুলো বিক্রি করে আমি ঠিকই স্বাধীনতা কিনতাম!
স্তব্ধ-থির
তোমার নিঃসঙ্গতা যেনো চৈত্র-দুপুরের স্তব্ধ এক পুকুর,
বাতাসে কেঁপে ওঠা কচুরিপানার কুন্ঠিত প্রতিবিম্বে ছাওয়া।
বেলা শেষের দিকে ক্রমাগত প্রলম্বন,
ক্রমাগত প্রলম্বিত তার ছায়া।
রোগিণীর মতনই তুমি আর তোমার নিঃসঙ্গতা
শুয়ে থাকা হাসপাতালের বিছানায়—
নিঃসঙ্গতা, তবু নিঃসঙ্গতার সাথেই এক সঙ্গের যৌথতা।
তবুও নিঃসঙ্গতায় চলে না পুরোটা
বেদনায় কাতর ম্লানমুখ রোগিণী, সাথে সাথে আশাবাদীও;
ছাড়পত্র জুটবে তার কোনো একদিন।
এই হাসপাতাল, অসুস্থতা, ফিনাইল মিলিয়ে যাবে
ধোঁয়া ওঠা শাদা ভাত, তার সুবাসের ভেতর।
সেদিন বিচ্ছেদ হবে রোগিণীর আর
নিঃসঙ্গতার।
বিজলিতারে বসা এক কালোরং ফিঙের মতো,
নিরুদ্দেশে উড়ে যাবে সে।
সেদিন বিষণ্ন হয়ে তুমি, রোগিণী
চৈত্র-দুপুরের স্তব্ধ সেই পুকুরে নিঃসঙ্গতাকেই যেন খুঁজবে,
খুঁজবে তার সঙ্গের যৌথতা।
অন্য আলোতে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]