শিমুল সালাহ্উদ্দিনের কবিতা
কালিদর্শন
মৃত্যুর মুখোশ নিয়ে তোর অনন্ত জিভ এল সমুখে আমার
সেই জিভ-ভারানত মুখে, মুখ রেখে সমর্পণ আত্মার—
দশভুজা তোর ধসলীলাভাষ্যে আমাকে বরণ কর মরণে মরণে,
যেন অপার মরণ আমাকে মুক্তি দেয় দেহভস্ম থেকে
একা এক নদীর তীর ধরে আমি হেঁটে গেছি
কত সুনিবিড় ছায়াঘেরা লোকালয় ধরে
ঢুঁড়েছি খুঁজেছি কত সূঁচের মতন তীর্থযোগ এনে
খড়ের গম্বুজ ছেনে—রহস্যগোপন সে পবিত্র ওঁম, আলো, স্বর
কালো আলোর অন্ধকারে মিশমিশে আলোহীন ঘর
গভীর সম্মোহনের প্রগাঢ় নিশ্বাস-প্রশ্বাস
ধড়-দেহবুকের নামা-ওঠা
উড্ডয়ন-অবনমন
ধুকপুক
ওঁম ওঁম ও মূক ও মূক
বধিরতাভুক
এরপর আরম্ভ লীলালাস্যনাচ
অন্ধকূপে ভাঙে কাঁচ
ঝনঝন জানালার
যত বিলয় সম্ভাষণ আকারপ্রকার
আমারে গ্রহণ করে আমার মাতার
দুগ্ধফেননিভ স্তন-নিবি-মুখ
আমারে ভীষণ উৎসুক
করে দশভুজ দশ প্রহরণ
আমার আবাল্য করুণ
ছিন্নমস্তার লহুতে গড়ায়
জীবনের সমস্ত কাঙ্ক্ষা-কাঙালপনার
অন্তে অনন্ত জিভ আসে সমুখে আমার
সেই জিভ-ভারানত মুখে, রেখে জিহ্বার
লোলরক্ত-রসভার সমর্পণ আত্মার
এক হস্ত ডাকে জীবনের পানে, আর হাত মরণের গান গায়
আমারে ভাসায়ে লয়ে যায় কালিগঙ্গায় কালিগঙ্গায়...
বিভ্রম
বহুদূর হেটে এসে মরিচিকা পথ
জানাল আমারে তার প্রাণের শপথ
আমার তৃষ্ণা সে জলের ভাষায়
মেটাবে আছে যত নিজপিপাসায়
যদিও জল তার আছে ঘড়া ঘড়া
শিথানেই আছে তার নিজস্ব মরা
মরার খুলির পাশে একা তার শোয়া
স্মৃতির বেদম লাশ মোহনীড় ধোয়া
নীড় থেকে সে-ও চায় মুক্ত আকাশ
আকাশে রাঙামেঘ ছেড়া ছেড়া ঘাস
বলে তাকে উঁকি দিতে চোখেতে আমার
আর চোখ পড়ে নেয় চোখতারা তার
ছায়ামারিচের মতো ধাই তার পিছে
ছুটে ছুটে মরে যাই মিথ্যা প্রমিসে
ঘাসফুল, না মাছরাঙা?
এত সুন্দর খুব কম দেখা যায়।
শ্রেষ্ঠ কথাকারের অনন্ত নিপাট বর্ণনাও খুব কম মনে হবে সে ফুলের সৌন্দর্য বয়ানে। অথচ সে ঘাসফুল, জন্মেছে, মাথা তুলেছে বিশাল এক বটবৃক্ষের ফোকরে, কত যে বাঁধার পাহাড় উঁচু হয়ে আছে তার বেঁচে থাকার চারপাশে!
আমি যখন তাকে ভালোবাসার কথা ভাবি, সে তখন আলোর দিকে তাকাতে গিয়ে আরেকটু বাড়িয়ে দেয় তার ডগা। লকলক। চুমু খেতে গেলে লজ্জায় ঝরিয়ে দেয় সব পাতা। লুকায় নিজের মুখ আড়ালে নিজের।
আমি স্মিত হেসে ভাবি, সে ঘাসফুল? নাকি উড়ে যাবে বলে আমার ডালে বসা এক হঠাৎ মাছরাঙা?
অন্য আলো অনলাইনে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]