ভিডিও গেমস কি আর্ট?

>ভিডিও গেমস কি আর্ট? এই তর্ক চলমান। তবে এই গেমসকে বেশির ভাগ মানুষই ছেলেভোলানো বিনোদনের বেশি কিছু ভাবতে চাইত না অনেক দিন। কিন্তু একদল মানুষ শুরু থেকেই মনে করত, ভিডিও গেমস হচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রের ডিজিটাল রূপ, যত দিন যাবে, তত চমক নিয়ে আসবে এই মাধ্যম। আমেরিকার ওরচেস্টার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের গেম ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক ব্রায়ান মরিয়ার্টির এই লেখাটি ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে টাইম ডটকমে প্রকাশিত হয়েছিল। অনুবাদ করেছেন আবীর হাসান

‘আর্ট’ শব্দের নানা অর্থ। আর্টকে ‘দক্ষতা’র সমার্থক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়, যেমন ‘আর্টিসান’ তৈরি করে ‘আর্টিফ্যাক্ট’—কার্যত কারও দ্বারা তৈরি যেকোনো কিছু কোনো না কোনো ধরনের আর্ট। যেকোনো দক্ষতার অনুশীলন বা চর্চাকে আর্ট বলে অভিহিত করা যেতে পারে। রন্ধনশিল্প। রণকৌশল বা আর্ট অব ওয়ার। একইভাবে, ভিডিও গেমসও আর্ট বলে গণ্য হওয়ার যোগ্য।

কিন্তু লোকে যখন শুধায়, ‘ভিডিও গেমস কি আসলে আর্ট?’ প্রকৃতপক্ষে তখন তারা ভিডিও গেমসের চেয়ে ‘আর্ট’ শব্দটাতেই বেশি জোর দেয়। তখন লোকের মাথায় বনবন করে মহৎ শিল্প। ফাইন আর্ট। সাংস্কৃতিক স্মৃতিসৌধ। যা কিনা জাদুঘর ঘটা করে প্রদর্শনী করে আর নিচের ক্লাসের মানুষদের থেকে ওপরের ক্লাসের লোকেরা সযতনে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু মিউজিয়াম-টেস্ট পর্যন্ত উতরিয়ে যাওয়া ভিডিও গেমসকে আর্ট স্ট্যাটাস থেকে বাদ দেওয়া আরও দুরূহ হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি ডজনখানেক জাদুঘরে বিশালাকারে ভিডিও গেমসের প্রদর্শনী হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে নামজাদা স্মিথসোনিয়ান এবং মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঐতিহাসিক গেমস এবং হার্ডওয়্যারের (গেমস খেলার ডিভাইস) জন্য আর্কাইভ খোলা হয়েছে, এমনকি ভিডিও গেমস অধ্যয়নে ডক্টরেট ডিগ্রি অফার করা হচ্ছে। ফলে ভিডিও গেমস এখন এমন এক সাংস্কৃতিক ইঞ্জিন, যার শক্তিশালী অর্থনৈতিক সবলতাকে অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

টেল অব টেলের ‘ফাটলে’ গেমসের পোস্টার
টেল অব টেলের ‘ফাটলে’ গেমসের পোস্টার

পেছন ফিরে তাকালে দেখি, ২০০৫ সালের দিকে, চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্টের ‘ভিডিও গেমস কোনো দিনও আর্টের মর্যাদা পাবে না’ বিবৃতি অনলাইনে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। এবার্ট আরও বলেছিলেন, ‘ভিডিও গেমিং জগতের ভেতরের বা বাইরের কেউ কি এমন একটা গেমসের নাম বলতে পারবে, যেটি কোনো মহান নাট্যকার, কবি, চলচ্চিত্রকার, উপন্যাসিক বা সুরকারের কোনো সৃষ্টিকর্মের সমকক্ষ?’ সেই সময়, এই একটি যুক্তি দিয়েই আলোচনা থামিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু পরের দশকে ঘটে যাওয়া দুটি বিষয় এবার্টের মূল্যায়নকে ঠুনকো বানিয়ে ফেলে।