রক্তের স্রোত, অশ্রুর জোয়ার

জিন্দজি ম্যান্ডেলা তাঁর বিয়েতে বাবা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে, জোহানেসবার্গ, অক্টোবর ১৯৯২
জিন্দজি ম্যান্ডেলা তাঁর বিয়েতে বাবা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে, জোহানেসবার্গ, অক্টোবর ১৯৯২

গত ১৩ জুলাই জোহানসবার্গে ৫৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন জিন্দজি ম্যান্ডেলা। বর্ণবাদ–বিরোধী সংগ্রামের কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা ও উইনি ম্যান্ডেলার কনিষ্ঠা কন্যা জিন্দজি নিজেও বর্ণবাদ–বিরোধী আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন ডেনমার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত।
জিন্দজি নিয়মিত কবিতা লিখতেন। ম্যান্ডেলা বন্দি থাকার কারণে বাবার সঙ্গে মেয়ের প্রথম কথা হয় ১৫ বছর বয়সে। রাজনীতিবিদ ও সরকার–‘নিষিদ্ধ’ মায়ের সঙ্গেও নিয়মিত থাকা সম্ভব হয়নি। জন্মস্থান সোয়েটোতে লেখাপড়া করতে পারেননি তিনি। বর্ণবাদ সম্পর্কে শিশু জিন্দজি ম্যান্ডেলার অবলোকন ‘আমার শিশুচোখে’ (‘আই স অ্যাজ আ চাইল্ড’) কবিতাটি।
দ্বিতীয় কবিতা ‘অদৃশ্য নদী’ (‘দেয়ার ইজ অ্যান আননোন রিভার ইন সোয়েটো’) তাঁর জন্মস্থান সোয়েটোর গণ–অভ্যুত্থানকেন্দ্রীক। ১৯৭৬ সালের ১৬ জুন বিদেশি ভাষায় স্কুলশিক্ষা প্রচলনের প্রতিবাদে সে বিক্ষোভে গুলি চালালে শিশুসহ সাত শ প্রতিবাদী নিহত হয়; আহত হয় চার হাজার। এর ক্রমধারায় সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ–বিরোধী সংগ্রাম তীব্রতর হয়।

আমার শিশু চোখে
শৈশবে দেখেছি
এক ছোট্ট শ্বেতাঙ্গ শিশু
লেখাপড়া করে
গাড়িঘোড়া চড়ে;
কখনো বুঝতে পারিনি
আমার বাড়িটি ইশকুল থেকে কত্তো দূরে
তার বাড়ি অত্তো কাছে
তবু দূর পথ আমাকেই হাঁটতে হয়?

শৈশবে দেখেছি
এক উঁচু দালান শ্বেতাঙ্গের
বিশাল জনশূন্য;
কখনো জানতে পারিনি
পাশে অত্তো ছোট্ট বাড়িটিতে কেন
আমাদেরই গাদাগাদি?

অদৃশ্য নদী
সোয়েটোতে এক অদৃশ্য নদী আছে
কেউ বলে, ওর স্রোত রক্তের
কেউ বলে, ওখানে অশ্রুধারার জোয়ার।

সোয়েটোতে এক অদৃশ্য বৃক্ষ আছে
কেউ বলে, ওর ডালে দুঃখপুষ্প শোভে
কেউ বলে, ওর ডাল মৃত্যুফলে ভারী।