উত্থান ও দীর্ঘশ্বাসের মেটাফর তারেক মাসুদ

আজ চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের মৃত্যুদিন। তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই লেখা।

কোনো মানুষ যখন তাঁর জীবনকর্ম অসমাপ্ত রেখে প্রয়াত হন, তখনই আমাদের দীর্ঘশ্বাস ঘন হয়ে আসে। আমরা তাঁকে বলি অকালপ্রয়াত। কিন্তু কোনো মানুষ যদি একটি জাতির প্রত্যাশার স্মারক হয়ে পদক্ষেপ ফেলেন, তখন তাঁর অকালপ্রয়াণ হলে তা কেবল দীর্ঘশ্বাসে শেষ হয় না। তা হয়ে ওঠে হাহাকার। ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট বাংলাদেশসহ দুনিয়ার বাংলা ভাষাভাষী মানুষ সে হাহাকার প্রত্যক্ষ করেছেন। আর সে হাহাকার ছিল একজন চলচ্চিত্রকারের অকালপ্রয়াণে। তিনি তারেক মাসুদ।

আগস্ট বেদনাবহ মাস। বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু দুঃখজনক ঘটনার জন্ম হয়েছে আগস্টের দিনগুলোতে। ১৩ আগস্ট তেমনি একটি দিন। একটি দুঃখবহ দিন। এই দিনে আমরা আমাদের প্রিয়জন তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরকে হারিয়েছি। হারিয়েছি আরও তিনজন চলচ্চিত্রকর্মীকে। তারেক ভাইকে হারানো আমাদের অনেকের জন্য যেমনি ব্যক্তিগত ক্ষতি, তেমনি তা জাতিগতভাবে এক বিরাট শূন্যতার জন্ম দিয়েছে।

একজন ব্যক্তির মধ্যে সময়ের সবটা প্রত্যাশা ভর করতে পারে, এমন ব্যক্তিত্বের উদাহরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে। সেই তালিকায় তারেক মাসুদ নিজে কখন যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন, তা তিনিও হয়তো জানতেন না। তবে তারেক মাসুদহীন গত ৯টি বছরে আমরা সবাই ব্যক্তিগত ও জাতিগত অর্জন ও ব্যর্থতায় বারবার অনুভব করেছি তাঁর অভাব ও শূন্যতা।

ব্যক্তি যখন বিরাজ করেন তখন তাঁর আকার ও প্রকাশ যতটা জুড়ে থাকে, ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে সেই অভাব ও শূন্যতা ততটাই প্রকট হয়ে দেখা দেয়। তারেক মাসুদের ক্ষেত্রে আমাদের অনুভব এমনই। একা তারেক মাসুদ একটি যুগসন্ধিক্ষণের সময়ে আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন। সে যাত্রা মধ্যপথেই বিঘ্নিত হয়েছে। তাই আমরাও যেনবা মাঝপথে পথ হারিয়েছি। আমাদের পথ হারানোটা কতটা তীব্র, তা আজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির পরিস্থিতির দিকে তাকালে অনুভব করা যায়। মুখরোচক কিছু গালগপ্পো বাদ দিয়ে যদি গভীরভাবে দেখতে বসি আমাদের চলচ্চিত্রের ইন্ডাস্ট্রি অথবা স্বাধীন চলচ্চিত্রের নির্মাণ-বিতরণ-প্রদর্শন ও চলচ্চিত্রচিন্তা ও চর্চার পরিস্থিতি, তবে সেখানে হতাশার পরিমাণ বিপুল হয়ে দাঁড়ায়। এটা ঠিক যে এই পরিস্থিতি একা তারেক মাসুদ আমূল বদলে দিতে পারতেন, এমনটা আমরা মনে করি না। তবে তারেক মাসুদ এই পরিস্থিতির এই পতনমুখী যাত্রার গতি রোধ করতে পারতেন; এবং সম্পূর্ণ চিত্র বদলে দিতে না পারলেও তিনি উল্টো স্রোতে সাঁতার দিয়ে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। এটাই ছিল সময়–নির্ধারিত তারেক মাসুদের ভূমিকা। আর এখানেই আমাদের সামষ্টিক দীর্ঘশ্বাস বুক চিরে বেরিয়ে আসে। কারণ, আমাদের দেশের সড়ক ও মহাসড়কে যে মৃত্যুর মিছিল প্রাত্যহিক ঘটে চলেছে, তা তারেক মাসুদের শিল্পসাধনার মধ্যপথে যতিচিহ্ন টেনে দিয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদেরও জাতিগত অর্জনের ডালিতে আরাধ্য শিল্পসম্পদ যোগ না হয়ে, হয়েছে বিষাদ প্রাপ্তি।
কেন তারেক মাসুদ বাংলাদেশের জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন? শুধু কি তাঁর বা তাদের (তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদ) নির্মিত চলচ্চিত্রের জন্য?

আমরা তা মনে করি না। লক্ষ করলে দেখা যাবে, তারেক মাসুদের ৫৫ বছরের যে জীবনকাল তাতে সে গুরুত্বের বীজ লুকিয়ে আছে। শুধু তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রে নয়। এই ৫৫ বছরের আয়ুষ্কালে তিনি এমন এক জীবনযাপন করেছেন, যা কেবল তাঁর দেশের ইতিহাস-রাজনীতি ও সংস্কৃতির গভীর থেকে গভীরতর সব বিষয়ে তাঁকে ভ্রমণ করিয়েছে। তিনি নিজে এই ইতিহাসের ভেতরে যাপন করেছেন। প্রত্যক্ষ রাজনীতির খুব কাছ থেকে এর উত্তাপ ও ক্লেদ চাক্ষুষ করেছেন এবং ডুব দিয়েছেন নিজের মাটি ও মানুষের সংস্কৃতির শিকড়ের গভীরে। তিনি নিজে ভাসা ভাসা ধারণার বাইরে গিয়ে সত্যিকারের ‘সাধনা’য় নিবিষ্ট হয়েছিলেন। না হলে ‘আদম সুরত’ নির্মাণের অভিপ্রায়ে শিল্পী সুলতানের বাউলাঙ্গের জীবনের সঙ্গে সমান্তরাল যাত্রা করতে পারতেন না।

তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ
তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ

কারণ, যখন তারেক মাসুদ শিল্পী সুলতানের সঙ্গে ‘আত্মপরিচয়’ খোঁজার সাধনায় নিবিষ্ট, সে সময় তাঁর সমসাময়িক বন্ধুরা কেউই এই দীর্ঘ পথের ঝুঁকিতে অথবা বলা ভালো এই ‘বাউলাঙ্গের’ চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রকল্পের কোনো কার্যকর কারণ খুঁজে পাননি। আর সে কারণে তারেক মাসুদ তাঁর সেই সংগ্রামমুখর সময়ে বন্ধু ও পরিচিত সার্কেলে বিদ্রূপ ও ঠাট্টার উপাদান হয়েছেন। বিভিন্ন অবসরে সেই সময় নিয়ে তারেক মাসুদ আমাকে বলেছেন, ‘সেই সময়টা ছিল আমার স্থৈর্য অর্জনের সময়।’

আদতে ‘স্থৈর্য’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ আমি বেশ পরে অনুভব করেছি। এটা ধৈর্য নয়। বহু পরে ‘মহাভারত’ পাঠের সময় হঠাৎ এই স্থৈর্য শব্দটির অর্থ ও প্রয়োগের ভিন্ন ব্যাখ্যা আমি প্রত্যক্ষ করি। আর তখন তারেক ভাইয়ের ব্যবহৃত ‘স্থৈর্য’ শব্দটির মধ্যে তাঁর ৫৫ বছরের জীবন ও কর্মের অর্থ আমি খুঁজে পাই। প্রকৃত অর্থে, কোনো শিল্পী যদি নিজের অন্তরে স্থৈর্য না অর্জন করতে পারেন তবে তাঁর সৃষ্টিকর্মে জাতির কোনো প্রাপ্তি যোগ হয় না। কিন্তু যদি কেউ স্থৈর্য অর্জন করতে পারেন তবে তাঁর সৃষ্টিকর্ম হয় বহুস্তরিক ও গভীর। আর তা সময়ের প্রবাহে দীর্ঘ পরিসরজুড়ে প্রভাবিত করে চলে অগণিত মানুষ ও প্রজন্মকে। তারেক মাসুদের জীবন ও কর্ম তাঁর স্থৈর্য অর্জনের স্মারক হয়ে আমাদের সামনে হাজির আছে।

কিন্তু তারেক মাসুদের এই অর্জনের পথ সহজ ছিল না। এই পথে তারেক মাসুদের সহযাত্রী ও সঙ্গীরূপে ক্যাথরিন মাসুদের অবদান একইভাবে আলোচনা জরুরি; এবং তাঁর মূল্যায়ন না হলে তারেকেরও মূল্যায়ন অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। কার্যত, তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের যুগল জীবন বাংলার শিল্পসাধনার পথে উদাহরণযোগ্য সৃষ্টিশীল যৌথতার ইতিহাস। ‘আদম সুরত’–এর শুটিং–পরবর্তী সময় থেকে ‘রানওয়ে’ পর্যন্ত তাঁদের এই সৃষ্টিশীলতার ইতিহাস যেন বাউল মতের ‘যুগল সাধনা’র সাক্ষ্য বহন করে। তাঁদের নিজেদের পারস্পরিক আলোচনা-তর্ক বা বাহাসের মধ্যে তাঁদের প্রতিটি কাজ সমৃদ্ধ হয়েছে বা গড়ে উঠেছে। এই আশ্চর্য সম্মিলন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আর কখনো কারও মধ্যে আমরা দেখিনি। হয়তো এ কারণেই অন্যদের সৃষ্টির সঙ্গে তারেক ও ক্যাথরিন মাসুদের সৃষ্টির ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ ব্যবধান গুণগত। আর তাই তা ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তারেক মাসুদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত বোঝাপড়া বেশ দীর্ঘ সময়জুড়ে হয়েছিল। সেই বোঝাপড়ায় প্রথমত আমার বিস্ময়, পরে নানা তর্ক আর শেষ দিকে তারেক ভাইয়ের প্রিয় শব্দ ‘বাহাস’ হয়েছে। হ্যাঁ, তারেক মাসুদ আমার কাছে বিস্ময়ই ছিলেন। কারণ, তখন পর্যন্ত তাঁর মতো এমন বৃদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাসম্পন্ন কোনো চলচ্চিত্র নির্মাতার সম্মুখীন আমি হইনি। এবং আজ তাঁর প্রয়াণের প্রায় ৯ বছর পর অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলছি, আজও এমন কারও সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তারেক মাসুদ একজন চিন্তাশীল চলচ্চিত্রকার ছিলেন, যাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতার খুব সামান্যই আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি। তাঁর চিন্তার কিছু উদাহরণ তাঁর দেওয়া সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতাগুলোতে পাওয়া যাবে, যা নিঃসন্দেহে শুধু একজন চলচ্চিত্রকারের জবানি নয়। একই সঙ্গে তা ভীষণ দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাবিদ ও দার্শনিক অভিজ্ঞানে সমৃদ্ধ একজন মানুষের সচেতন কথামালা। আমার বিশ্বাস, তারেক মাসুদ আজকের দিনে যতখানি বিশ্লেষিত, তা তারেকের খুব সামান্য অংশকেই আমাদের সামনে এনেছে। আগামী দিনে তিনি আরও ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে বিশ্লেষণের অপেক্ষায় আছেন।

এক মহত্তম জীবনের পরিপূর্ণ আলোচনা আজকের লেখার উদ্দেশ্য নয়। আজ এ লেখায় কেবল তারেক ভাইকে স্মরণ করতে চাই। তাঁর শূন্যতাকে অনুভব করে আমাদের কর্ম ও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে চাই। কারণ, তারেক ভাই সর্বক্ষণ আমাদের যে প্রেরণা দিয়েছেন, তা কর্মের প্রেরণা। দুঃখের গীতের চেয়ে তারেক মাসুদ জীবনের জয়গানে বেশি আস্থা রাখতেন। যদি আমরা মনে করি যে আমরা তারেক মাসুদের চিন্তা ও কর্মের উত্তরাধিকার বহন করি তবে আমাদের জীবনের অপরাজেয় জয়গানের পথেই হাঁটতে হবে।

তারেক ভাইয়ের আরও একটি চিন্তা এক্ষণে বিনিময় করতে চাই। তারেক ভাই বিশ্বাস করতেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির দরকার আছে।’ হ্যাঁ, ঠিক এই কথাটিই তিনি আমাদের বলতেন। আমার তর্কপ্রবণ মন। তাই আমি তারেক ভাইকে বলেছিলাম, কেন? আপনি তো ইন্ডাস্ট্রির ধরনের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন না। এমনকি আপনার নির্মিত চলচ্চিত্র আমাদের ডিস্ট্রিবিউটররা দেশের সিনেমা হলে মুক্তি দিতেও চায় না। তবে আপনি কেন ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে চান?

তারেক ভাইয়ের জবাব ছিল, ইন্ডাস্ট্রি আমাদের প্রয়োজন। কারণ, ইন্ডাস্ট্রি চলচ্চিত্রের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে। ইন্ডাস্ট্রির কারণে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ বেঁচে থাকে। আর সেই সব মানুষকে কখনো না কখনো আমাদেরও প্রয়োজন হয়। যদি দেশের জনপ্রিয় ধারার চলচ্চিত্র একেবারে হারিয়ে যায় তবে দেশের চলচ্চিত্র-সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে। যদি সিনেমা হল না থাকে তবে চলচ্চিত্রের যে সামাজিক প্রভাব, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা আমাদের কারও জন্যই ভালো হবে না। আমাদের উচিত ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে এর ভেতরে চিন্তাশীল মানুষদের সংখ্যা বাড়ানো। যাতে ইন্ডাস্ট্রির ভেতর থেকে এর শক্তি তৈরি হয়।

তারেক ভাইয়ের জবাব ছিল, ইন্ডাস্ট্রি আমাদের প্রয়োজন। কারণ, ইন্ডাস্ট্রি চলচ্চিত্রের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে। ইন্ডাস্ট্রির কারণে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ বেঁচে থাকে। আর সেসব মানুষকে কখনো না কখনো আমাদেরও প্রয়োজন হয়। যদি দেশের জনপ্রিয় ধারার চলচ্চিত্র একেবারে হারিয়ে যায় তবে দেশের চলচ্চিত্র-সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে। যদি সিনেমা হল না থাকে তবে চলচ্চিত্রের যে সামাজিক প্রভাব, তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা আমাদের কারও জন্যই ভালো হবে না। আমাদের উচিত ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে এর ভেতরে চিন্তাশীল মানুষদের সংখ্যা বাড়ানো। যাতে ইন্ডাস্ট্রির ভেতর থেকে এর শক্তি তৈরি হয়।

এই হলেন তারেক ভাই। যিনি সারা জীবন চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন করেছেন কিন্তু দেশের সব চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন নেতাদের চেয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে সক্ষম ছিলেন, যা আজও ব্যতিক্রম।

তারেক ভাইকে হারিয়ে আমরা কেবল যে অভিভাবক হারিয়েছি তা নয়, তারেক মাসুদকে হারিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভিভাবক হারিয়েছে। আজ সে অভাব শুধু আমরা নই, সবাই–ই অনুভব করছেন। চলচ্চিত্র-সংস্কৃতিবিষয়ক জাতীয় বিভিন্ন নীতিনির্ধারণমূলক সংলাপে তারেক ভাই চলচ্চিত্রের জন্য ভালো এমন কিছুর পক্ষ নিতেন। এতে ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ তিনি কখনো খোঁজেননি। নিজের প্রভাব ও প্রতিপত্তি ধরে রাখতে নানা ধরনের কৌশল অন্য অনেকেই করেন। অনেকেই বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী আলোচনায় ‘ব্যক্তিগত’ সুবিধার ভিত্তিতে নিজেদের মতামত দেন। সেখানে সবচেয়ে কম আলোচিত হয় জাতির স্বার্থ। চলচ্চিত্রের স্বার্থ। আর এ কারণেই আজ বাংলাদেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নেতৃত্বহীন, পথভ্রষ্ট ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তাই দেশের চলচ্চিত্র-সংস্কৃতির যে দুঃসহ কাল চলছে, তা যেন দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে, হতাশা বাড়ছে।

তারেক মাসুদ এসব নীতিনির্ধারণী তৎপরতায় হাজির থাকতেন কিন্তু ‘যুক্ত’ হতেন না। নিজেকে এমনভাবে হাজির রাখতেন যেন চলচ্চিত্রের স্বার্থে তা কার্যকর হয়। ব্যক্তিগত স্বার্থে নয়। ব্যক্তিস্বার্থহীনভাবে মানুষের জন্য বা দেশের জন্য কাজ করতে হলে যে সাহস ও প্রত্যয় প্রয়োজন, তা তারেক ভাইয়ের ছিল। তাঁর অকালপ্রয়াণে তাই আমরা কেবল তাঁর সৃষ্টিশীল কর্ম থেকে বঞ্চিত হইনি; সামগ্রিকভাবে বঞ্চিত হয়েছি। হয়তো তাই আমরা আজ এক গভীর অনিশ্চিত সময়ে নেতৃত্বহীন, অভিভাবকশূন্য অবস্থায় নিজেদের আবিষ্কার করেছি।

তবে তারেক মাসুদের আদর্শ ও কর্মকাণ্ড আজও নতুনভাবে উত্থানের স্বপ্ন দেখায় আমাদের। কিন্তু তাঁর অকালপ্রয়াণ একই সঙ্গে দীর্ঘশ্বাসকে গভীরও করে তোলে।
আমরা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে তারেক মাসুদের জীবন ও কর্মের বহুস্তরীয় ভুবনে আমাদের আস্থা রেখে আগামীর পথে ধাবিত হই। আর সে পথে আমাদের বড় সাহসের নাম তারেক মাসুদ।

অন্য আলোয় লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]