এই হেমন্তে হে উৎসব

সাদাফ সায সিদ্দিকী
সাদাফ সায সিদ্দিকী

সময়টা নভেম্বরের মাঝামাঝি। চারপাশে হেমন্তের সোনালি রোদের ঝলকানি। ঠিক এই সময়ে চার দিনের হরতাল শেষে সম্প্রতি ‘হে ফেস্টিভ্যাল-২০১৩’-তে ঢাকায় বাংলা একাডেমির চারটি স্থানে তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রচুর দর্শকসমাগম হয়েছিল। আর উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা মেতেছিলাম অন্যরকম এক আনন্দে। বলতে দ্বিধা নেই, এটি এখন ঢাকায় অনুষ্ঠিত সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব, যেখানে এ বছর মিসর, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, মেক্সিকো, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১১টি দেশের ৫০ জনের বেশি বিদেশি লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করেছেন, ছিল ৭৫টি প্যানেল সেশন। উৎসবে এবার ২৩০ জনেরও বেশি লেখক, চিন্তাবিদ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নৃত্যশিল্পী একত্রিত হয়ে ভাবনা ও চিন্তা বিনিময় করেছেন, যা আমাদের সবাইকে গেঁথেছে এক সূত্রে—একাধারে পাঠক, লেখক ও বিশ্বনাগরিক হিসেবে।

আমরা আশা করছি, বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই উৎসব সব সময় এমনভাবে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে আমাদের সমৃদ্ধ সাহিত্যভান্ডারকে তুলে ধরার পাশাপাশি নিজেদের সমকালীন সাহিত্যকেও অনুবাদের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে পারব বিশ্বের কাছে। আশার কথা, ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া দিনকে দিন অগ্রসর হচ্ছে।

এবারের উৎসবে খ্যাতনামা চিন্তাবিদ তারিক আলি, লেখক আহদাফ সোয়েফ ও পঙ্কজ মিশ্রের আলোচনাপর্ব সবাইকে দারুণ আলোড়িত করেছে। আকর্ষণীয় আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি নারী লেখকদের লেখা নিয়ে। বাংলা ভাষার প্রথিতযশা সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক ও হাসান আজিজুল হকের মধ্যে মূল্যবান আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আয়োজনের মধ্যে বাংলা সাহিত্যে উত্তর আধুনিকতা নিয়ে কথাবার্তা ও কবিতা পরিষদের পরিচালনায় কবিতা আবৃত্তি ছিল অনন্য। এ বছর চারটি বাংলাদেশি প্রকাশনী সংস্থা প্রকাশ করেছে ইংরেজি কথাসাহিত্য এবং হাসান আজিজুল হক ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বাংলা বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ, যা আমাদের জন্য দারুণ এক আনন্দের খবর।

প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা হে উৎসবের নিয়মিত আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ এখন খুব দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠছে বিশ্বসাহিত্যের ভুবনে। ইতিমধ্যে বিশ্বখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা বাংলাদেশি লেখকদের লেখা প্রকাশ শুরু করেছে। চালু হয়েছে ঢাকা ট্রানসিলেশন সেন্টার। সব মিলিয়ে বলা যায়, এ উৎসব বর্তমানে ঢাকার সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য একটি উদ্দীপনামূলক সাহিত্য সম্মেলন। এই উৎসব নিয়ে আমার নিজের অনুভূতি হরেক রঙে আঁকা। শুরু থেকেই আমি রয়েছি উৎসবের সঙ্গে। আজ থেকে তিন বছর আগে ব্রিটিশ কাউন্সিলে ছোট পরিসরে আমরা শুরু করেছিলাম উৎসবটি। আমার মনে হয়, প্রতিবছর উৎসবটি যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। দিনে দিনে জৌলুসও বাড়ছে। বাইরের দেশের লেখকেরা আমাদের সাহিত্য সম্পর্কে ক্রমাগত আগ্রহী হয়ে উঠছেন। উৎসবটি এখন হয়ে উঠেছে সবার মিলনমেলা। (ইংরেজি থেকে অনূদিত)

সাদাফ সায সিদ্দিকী

বাংলাদেশি লেখক, বাংলাদেশে হে ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা। ইংরেজি ভাষায় সাহিত্যচর্চা করেন