ফরাসি কাব্যভুবনে দারুণ আলোচিত কবি ইভো বঁফোয়া মারা গেছেন সম্প্রতি
কণ্ঠস্বর বুড়ো হচ্ছিলাম আমরা। সে ছিল পাতা, আমি ছিলাম বহমান বসন্ত। সে ছিল সূর্যের রুপো, আমি ছিলাম তলদেশের গভীরতা সে ছিল মৃত্যু আর আমি ছিলাম বেঁচে থাকার প্রজ্ঞা। ছায়ার মধ্যে সময় তার ছবি দেখাল, মুখটা গ্রিক দেবতা ফনের তার হাসি আমাদের সঙ্গে কৌতুক করছে না আর আমি সময়কে মেনে নিয়েছি। অন্ধকারের কাঁধ ছুঁয়ে বাতাস কীভাবে জেগে ওঠে, আমি তা-ও ভালোবেসেছিলাম। ডুবন্ত আইভিলতার ছোঁয়ায় পুকুরের পানি নড়ে উঠলে গভীর কালো বসন্তে কী করে মরে যেতে হয়, ভালোবেসেছিলাম তা-ও। ভালোবেসেছিলাম: অনন্ত স্বপ্নের মধ্যে দাঁড়ানো ডুবন্ত আমি। বৃক্ষ, প্রদীপ একটি গাছ গাছের মধ্যেই বুড়ো হচ্ছে, এখন গ্রীষ্মকাল। পাখিরা পাখি-সংগীতের সীমানা ছাড়িয়ে উড়ে আসছে, চলে যাচ্ছে। পোশাকের লাল রং জ্বলজ্বল করছে আর ছড়িয়ে পড়ছে দূরে, ওই আকাশে, বহুকালের দুঃখগুলি নেমে এল।
হে আমার বিপন্ন দেশ,
প্রদীপের শিখা বুঝি দরজা পেরিয়ে যাচ্ছে,
পৃথিবীর সুড়ঙ্গের খুব কাছাকাছি ঘুম,
ভাগাভাগি করে নেওয়া আত্মা কী সহজ প্রতিধ্বনি তুলছে।
যখন প্রদীপের আলো নিভে আসতে থাকে
আর দিনের আলোর মধ্যে স্বপ্ন হয়ে ফুটে উঠতে শুরু করে
তুমিও দেখছি সেই মুহূর্তটাকে অনেক ভালোবাসো।
তুমি জানো, এ হলো তোমার হৃদয়ের ক্ষত সারিয়ে তোলা অন্ধকার,
নৌকো তীরে পৌঁছে যাচ্ছে আর তা ডুবেও যায়।
তুষার
পথ নয়, আরও অনেক দূর থেকে সে এসেছে,
ছুঁয়ে এসেছে তৃণভূমি, ফুলের গায়ে লেগে থাকা গিরিমাটি,
যে হাত ধোঁয়ায় লিখে চলে, সেই হাত দিয়ে এসব করেছে সে,
নৈঃশব্দ্য দিয়ে পরাস্ত করেছে সময়।
এই সন্ধ্যায় কত যে আলো
কারণ ওই তুষার।
তুমি ভাবতে পারতে দরজার সামনের পাতাগুলো জ্বলছে,
যে কাঠগুলো আমরা এনেছি তার ভেতরে আছে জল।
ইভো বঁফোয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে খ্যাতিমান ফরাসি কবি ইভো বঁফোয়া। প্রথম কবিতার বই প্রকাশের পর থেকে ফরাসি কাব্যভুবনে দারুণ আলোচিত তিনি। প্যারিসের পরাবাস্তববাদী কাব্য-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এ কবি মনে করতেন কবিতা হচ্ছে অভিজ্ঞতার উৎসারণ। দর্শনশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা অর্জন করলেও ছিলেন শিল্পকলা ও তুলনামূলক কবিতার অধ্যাপক। ১৯২৩ সালে জন্ম নেওয়া বঁফোয়া মারা যান এ বছরের ১ জুলাই। এখানে অনূদিত কবিতাগুলো মডার্ন ইউরোপিয়ান পোয়েট্রি, দ্য ভিনটেজ বুক অব কনটেমপোরারি ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি ও দ্য ইয়েল অ্যান্থলজি অব টোয়েনটিথ ফ্রেন্স পোয়েট্রি সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য ( ১ )
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে