মৃৎশিল্পের মনোহর জগৎ

‘দম্পত্তি’, শিল্পী: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
‘দম্পত্তি’, শিল্পী: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান

ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী হলে ১৫ থেকে ২৬ জুলাই হয়ে গেল মৃৎশিল্পের একটি বিশেষ প্রদর্শনী। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের যৌথ আয়োজনে দুই ভাগে বিভক্ত এই প্রদর্শনীর একদিকে স্থান পেয়েছে জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা মৃৎশিল্পের প্রাচীন নিদর্শনসহ নানা মৃৎপাত্র, অন্যদিকে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নকশাসমৃদ্ধ কাজ।
প্রদর্শনীতে বাংলার মৃৎশিল্পের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা দেখেছেন দর্শক। সভ্যতার পথে মানুষ যাত্রা শুরু করেছিল পাথরে পাথর ঘঁষে আগুন জ্বালিয়ে। কাদামাটিতে আঁক কষে সে আঁকতে, লিখতে শিখেছে। তার পরম্পরায় পরে শিখেছে গড়তে। এই গড়া দিয়েই মৃৎশিল্পের গোড়াপত্তন। প্রাচীন সভ্যতাসমূহের প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে পাওয়া নিদর্শন থেকে জানা যায়, খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত মৃৎশিল্পের সন্ধান পাওয়া গেছে।
দৈনন্দিন ব্যবহার্য পাত্র ও অন্যান্য সামগ্রী নির্মাণে আবহমানকাল থেকে বংশপরম্পরায় মাটির ব্যবহার করে আসছেন মৃৎশিল্পীরা। সেই ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটেছে জাদুঘরের সংগ্রহকৃত মৃৎসামগ্রীতে। এ ক্ষেত্রে দর্শকের সঙ্গে মৃৎশিল্পীর প্রত্যক্ষ সংযোগের দারুণ এক ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। প্রদর্শনী হলের ভেতরে ঢাকার রায়ের বাজারের প্রবীণ মৃৎশিল্পী কুমার বিপদহরি পাল চাকা ঘুরিয়ে তৈরি করছেন মৃৎপাত্র। অন্যদিকে আধুনিক শিক্ষায় শিল্পজ্ঞানের চর্চায় হাত পাকানো মৃৎশিল্পীরাও পায়ে চালিত চাকা দিয়ে কাজ করেছেন গ্যালারিতে, দর্শকদের সামনে।
অজস্র বছর আগের অজানা-অচেনা গোষ্ঠীবদ্ধ মৃৎশিল্পীদের আদি সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে এখানে প্রদর্শিত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মৃৎশিল্প বিষয়ের ৩৪ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আধুনিক ধারার কাজ।
গ্যালারিতে মাটির তৈরি ও পোড়ানো বিশাল আকৃতির ধান, ভুট্টা, কলার মোচা, লাউ, মিষ্টিকুমড়া প্রভৃতি কৃষিপণ্য উপস্থাপন করা হয়েছে অভিনব কায়দায়। এ ছাড়া গর্ভবতী নারীর উদর, দম্পতি, পরিবার, শিকারি, বাঘ, ঘোড়া, খোল, জগ, বই, স্টুডিও পটারি, মিনিয়েচার পটারি ইত্যাদির দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনাও ছিল। প্রদর্শনী থেকে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের ইতিহাস ও বিবর্তন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন দর্শক।
এখানে অংশ নিয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নূরুল আমীন, রুহুল কুদ্দুস, চন্দন সরকার, আসমাউল হোসেন, দুলাল হোসাইন শাহ্। তরিকুল ইসলাম, বায়েজিদ জোয়ারদার, মাহমুদ হাসান, রাশেদ আহমেদ, তালেবুন নবী, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, ওয়াসিক আল করিম, পপি আকতার, দিলরুবা ইসলাম, হাসান আলী, ইমরান আলী, পার্থ হাজরা, কুমুদ রায়, কামরুল ইসলাম, সঙ্গীতা বিশ্বাস, উত্তম রায়, শহিদুল ইসলাম, উপমা আলম প্রমুখ।