পাশাপাশি দুটি আমের আঁটি পড়ে ছিল। দিন যায় রাত যায়। একদিন একটা আঁটি ফুঁড়ে বেরোল এক আমের চারা। বেরিয়েই রোদ মাখবে বলে পাতা ছড়িয়ে দিল। আর রোদে বানানো খাবার খেয়ে লিকলিক করে বাড়তে লাগল। তারপর ওর চোখ পড়ল আরেকটা আঁটির ওপর। ও মা, বোনটা যে এখনো ঘুমিয়েই আছে!
একা একা চারাগাছটার মোটেও ভালো লাগছে না। বোনটা পাশে থাকলে কত গল্প হতো! এই ভেবে সে অন্য আঁটির কাছে মুখ নিয়ে গেল। চেঁচিয়ে বলল, ‘কত ঘুমাস রে? আমি যে আঁটি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি! জলদি করে ওঠ তো। গল্প করব!’
আঁটি থেকে কোনো শব্দ বেরোল না। এত ঘুমায় কেউ? কী আলসে রে বোনটা! আমের চারা আবার ডাকল, ‘আমি তোর আগে ঘুম থেকে উঠেছি। পাতায় রোদ মেখেছি। আর কেমন তরতর করে বড় হয়ে গেছি, দেখ! আর তুই এখনো আঁটির ভেতরেই পড়ে আছিস!’
তারপরও কোনো উত্তর নেই। তাই আবার ডাক শুরু করল চারাগাছ, ‘হ্যাঁ রে, ওঠ ওঠ! ওঠ না!’
অনেক ডাকাডাকির পর শেষমেশ চোখ মেলে চাইল ছোট বোন। ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল আঁটির বাইরে। কিন্তু রোদ মাখবে বলে মুখ তুলল না। পাতাও ছড়াল না, মুড়িয়ে রাখল আগের মতোই।
বড় বোন বলল, ‘আরে, করিস কী! রোদে পাতা ছড়িয়ে দে। রোদে বানানো খাবার না খেলে বড় হবি কী করে। এমনিতেও আমার চেয়ে তুই ছোট!’
‘নাই-বা হলাম বড়! এই খড়খড়ে রোদ আমার ভালো লাগে না,’ ঠোঁট উল্টে বলল ছোট বোন।
‘কী বোকার মতো কথা! রোদ ভালো লাগে না তো কী ভালো লাগে?’
‘আমার শুধু ঘুমাতে ভালো লাগে,’ একটা বিশাল হাই তুলে বলল ছোট চারাগাছ। তারপর ঘুমিয়ে গেল!
বড় আমগাছের মুকুল একসময় সবুজ আমের গুটির রূপ পেল। গুটি থেকে হলো গোলগাল বড় বড় আম। একসময় আম পেকে হলো সিঁদুরে লাল। কী টসটসে! সুবাসে ম-ম চারপাশ।
ছোট আমগাছ রোদে পাতা মেলে না। বড় আমগাছের ছায়ায় গুটিসুটি পড়ে থাকে। তাই খাবারও ঠিকমতো পায় না। শরীরে জোর পায় না। সে শুধু পড়ে পড়ে ঘুমায়। আর গল্পও করে না।
ওদিকে রোদ পেয়ে পেয়ে দশাসই হয়ে ওঠে বড় চারাগাছ। কিন্তু ছোট চারাগাছ ছোট আর রোগাই থেকে গেল। এমনি করে মাস গেল, বছর গেল।
একদিন বড় চারাগাছের শাখায় শাখায় দেখা দিল মুকুল। কাঁচা হলুদ রঙের মুকুল। তাতে কত যে মৌমাছি এল। প্রজাপতিরা দল বেঁধে নাচল। মাকড়সা বুনল জাল। সব ওই বড় আমগাছটাকে ঘিরে। ছোট আমগাছ সব দেখে অবাক।
বড় আমগাছের মুকুল একসময় সবুজ আমের গুটির রূপ পেল। গুটি থেকে হলো গোলগাল বড় বড় আম। একসময় আম পেকে হলো সিঁদুরে লাল। কী টসটসে! সুবাসে ম-ম চারপাশ।
ছোট আমগাছের মন আরও খারাপ। ওর মুকুল হলো না, গুটি এল না, আমও হলো না। একটাবারের জন্য মৌমাছিও এল না ওর শাখায়। বড় আমগাছের সব হলো। ওর হলো না কেন?
পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে বলে?
গায়ে রোদ মাখেনি বলে?
তা নয়তো কী!
বড় আমগাছ তখন বলল, ‘কী ভাবছিস অত? সব হবে! আমার ছায়া থেকে আগে সরে দাঁড়া তো! তারপর ডালপালা মেলে, গায়ে রোদ মাখ ভালো করে!’