ছাতাদের এখন দারুণ সুসময়। প্রায় এক বছর ঘরের কোণে থেকে তাদের প্রাণ হাঁপিয়ে উঠেছিল। বাড়ির হাজারটা জিনিসপত্রের ভিড়ে বেচারাদের এক কোণে বসে থাকতে হতো। এখন ওরা প্রতিদিন মানুষের সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যায়। বৃষ্টির জলে প্রাণভরে স্নান করে। ঝড়ের সময় আকাশে উড়ে যেতে প্রচণ্ড ইচ্ছা করে ওদের। নেহাত মানুষগুলো শক্ত করে ছাতার হাতল ধরে থাকে, নইলে ছাতারা মেঘের দেশে গিয়ে লুকোচুরি খেলতে পারত।
তবে ছাতাদের ওপর বৃষ্টির দল বেজায় খ্যাপা। বৃষ্টিরা সব মানুষকে আপাদমস্তক ভিজিয়ে দিয়ে ভারি আনন্দ পায়। ছাতার উপদ্রবে মানুষের কাছে ঠিকঠাক পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। ছাতার কারণে যেসব বৃষ্টি মানুষকে ভেজাতে পারে না, তাদের বর্ষাসমাজ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। একদিন বর্ষাসমাজের সবাই মিলে ঠিক করল, এই হতভাগা ছাতাদের ধরে নিয়ে আসবে তাদের দেশে। পৃথিবীতে আর ফেরত পাঠাবে না।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। একদিন সকালে পৃথিবী থেকে সমস্ত ছাতা উধাও হয়ে গেল। ঘোর বর্ষার দিনে ছাতা বাদে মানুষ বড় নাজেহাল হয়ে পড়ল। পণ্ড হলো সব কাজ। ক্রমে দেখা গেল, এখন আর কেউ শখ করে বৃষ্টিতে ভেজে না। বৃষ্টির জলে বাচ্চারা রংবেরঙের নৌকা ভাসায় না। বৃষ্টি নিয়ে মানুষের এত কালের এত ভালোবাসা কেমন উবে গেল! বর্ষার গান আর গাওয়া হয় না দেশে দেশে। কবিরা ঢুলুঢুলু চোখে বৃষ্টি দেখা বন্ধ করলেন। বৃষ্টিরা বেকুব বনে গেল। ছাতাকে বাদ দিয়ে মানুষের সঙ্গে ভাব জমানোর বুদ্ধিটা কাজে লাগল না। সবাইকে আচ্ছামতো বৃষ্টিতে ভেজানো গেল বটে, তবে কাজের কাজ কিছুই হলো না। উপায় না দেখে ছাতাদের আবার মানুষের মধ্যে ফিরিয়ে দিল তারা। পৃথিবী আবার বর্ষার পদ্যে ভরে উঠল।