করোনাকালে নববর্ষ
মাহমুদউল্লাহ
নববর্ষ নববর্ষ,
নেই আনন্দ, নেইকো হর্ষ।
চারদিকেতে আজ করোনা,
গা ছুঁয়ো না, হাত ধোরো না।
করতে মানা কোলাকুলি,
কথা বন্ধ খোলাখুলি।
সৈয়দ, রবার্ট, বড়ুয়া, ঘোষ—
দেখো সবাই পরে মুখোশ।
এমন যে ভিড় হাসপাতালে,
কেউ দেখেনি কোনো কালে।
নববর্ষ নববর্ষ,
মুখ সকলের কী বিমর্ষ!
আম পেয়ে নই আত্মহারা,
কী করে খাই ভাইকে ছাড়া।
লকডাউনের কবলে দেশ,
নেই তো উৎসব, নেই সমাবেশ।
যাক করোনা, সুদিন আসুক,
বিশ্ব আবার সুখে হাসুক।
তোমার সাথে মিলব মেলায়,
মাতব সবাই হাসি-খেলায়।
এসো হে বৈশাখ
রোমেন রায়হান
কবিগুরু যখন বলেন এসো হে বৈশাখ
উপেক্ষা কে করবে তখন কবিগুরুর ডাক?
আগুনরাঙা চোখেই হাজির তাই বৈশাখ মাস
দরদরিয়ে ঘাম গড়িয়ে উঠল নাভিশ্বাস।
তৃষ্ণা নিয়ে বুকের হাঁপর করল ওপর-নিচ
দুপুরবেলার প্রখর রোদে গলল পথের পিচ।
পিচের ভেতর আটকে গেল পুরোনো চপ্পল
নাক ভাসিয়ে গা ডোবাল ডোবায় মহিষদল।
চামড়াজ্বলা ঝিনঝিনে রোদ, আকাশে নেই মেঘ
সুযোগ পেয়েই ছুটল বাতাস, বাড়ল চলার বেগ।
অতর্কিতে হাজির হলো কালবোশেখি ঝড়
উপড়ে পড়ার ভয়ে কেঁপে উঠল কাঁচাঘর।
উড়ল ধুলো কাঁপল পাতা ঝরল আমের বোল
কবিগুরুর জন্মমাসে লাগল প্রাণে দোল।
জীর্ণ-জরা হাওয়ায় উড়ে ধুলোয় মিশে যাক
এমনি করেই যুগে যুগে এসো হে বৈশাখ!
আবার মাতি
ওয়াসিফ–এ–খোদা
গান–কবিতায় বর্ষবরণ
মেলায় পসরা নানান ধরন
মাটির পুতুল কাঠের ঘোড়া
নাগরদোলা হাওয়ায় ওড়া
মোয়া নাড়ু খই বাতাসা
শখের হাঁড়ি শিকেয় ঠাসা
পুতুলনাচে কী সার্কাসে
ভিড় জমে যায় আশেপাশে
যাত্রাপালা কবিগানে
রেশ কাটে না শুধুই টানে
রেশ কাটাতেই বছর ঘোরে
আবার মাতি হই হুল্লোড়ে।
মনটা উড়ুউড়ু
হুমায়ুন তালুকদার
বোশেখ নিয়ে এলো ডানায় ঝড়
আমের থোকা দোল খেয়ে সব পড়
কুড়িয়ে নেব দুহাত ভরে
পড়ালেখা থাক না পড়ে
এমন দিনে কে থাকে আজ ঘর!
শুনব না তো মায়ের নিষেধ—মানা
আম কুড়োনোর মজা সে তো জানা
সবার সাথে পাল্লা দিয়ে
ঝাকা ভরে আসব নিয়ে
যতই জোরে দিক না ঝড়ে হানা।
ঝোড়ো হাওয়া ভাঙছে গাছের ডাল
নেয় বুঝি বা উড়িয়ে ঘরের চাল
বইছে বাতাস প্রবল বেগে
বাইরে যেতেই মা যায় রেগে—
‘দেখিস না ঝড় করছে কেমন হাল!’
আকাশজুড়ে মেঘের গুড়ুগুড়ু
ঝড়ের সাথে বৃষ্টি হলো শুরু
বৃষ্টি–ঝড়ের চলে খেলা
সূর্য পালায় দুপুরবেলা
আম কুড়াতে মনটা উড়ুউড়ু।