সিংহপুরীতে করাত মাছের আক্রমণ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। এই দ্বীপরাষ্ট্র ঘিরে বহু সংস্কৃতির মিলনমেলা। আর সিঙ্গাপুরের লোকসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য গল্পগাথা। শত শত বছর ধরে এই দ্বীপবাসীর মুখে মুখে রটে যাওয়া তেমনই চারটি জনপ্রিয় গল্প নিয়ে সিঙ্গাপুর ডাক বিভাগ ২০১৪ ও ২০১৬ সালে প্রকাশ করে ১৬টি স্মারক ডাকটিকিট। বর্ণিল এই ডাকটিকিটগুলোর নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের অলংকরণশিল্পী লিম আন–লিং। আজ সেই ডাকটিকিটগুলোর মধ্যে প্রথম ৮টির (২০১৪ সালের) গল্প পড়ো এখানে। ইংরেজি থেকে গল্প অনুবাদ ও ডাকটিকিট সংগ্রহ করেছেন নিজাম বিশ্বাস

সিংহপুরী

অনেক বছর আগের কথা, পালেম্বারের রাজকুমার নিলা উতামা দলবল নিয়ে শিকার করতে বেরিয়েছে। একটা হরিণকে লক্ষ্য করে কুমার তির ছুড়ল। কিন্তু চতুর হরিণটি পালিয়ে গেল জঙ্গলের ভেতর। হরিণের পিছু ছুটতে ছুটতে নিলা উতামা দলবল নিয়ে একসময় পাহাড়ের ওপরে এসে থামল।

আহা, পাহাড়ের ওপর থেকে একটু দূরে কী অপূর্ব এক দ্বীপ দেখা যাচ্ছে! রোদে চিকচিক করছে তার বালুতট। সুন্দর এই দ্বীপ উতামা আগে কখনোই দেখেনি। নতুন দ্বীপের সৌন্দর্যে সে অভিভূত হয়ে গেল!

কুমারের বিশ্বস্ত এক সহচর পরামর্শ দিল, এই নতুন দেশে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তাই দ্বীপের উদ্দেশে জাহাজ ছাড়ার জন্য রাজকুমার তার সঙ্গীদের নির্দেশ দিল। উত্তাল ঢেউ আর ঝোড়ো বাতাস অতিক্রম করে অবশেষে জাহাজ এসে ভিড়ল নতুন দ্বীপে।

নতুন দ্বীপে পা ফেলার পর রাজকুমারের চোখে পড়ল আশ্চর্য রকমের একটা প্রাণী। দীর্ঘ কালো কেশযুক্ত বিশাল মাথা, সাদা বুক আর তার পুরো শরীরটা লাল রঙের পশমে ঢাকা। এমন প্রাণী সে আগে কখনোই দেখেনি। নতুন এই প্রাণী সম্পর্কে রাজকুমার তার সঙ্গীদের কাছে জানতে চাইল। রাজকুমারের সঙ্গীরাও এ রকম প্রাণী জীবনে প্রথম দেখল। তবে তাদের মধ্যে একজন ছিল যে এই প্রাণীর কথা কার কাছে যেন শুনেছে। এ রকম কালো কেশওয়ালা বিশাল মাথা, সাদা বুক আর লাল শরীরের প্রাণীকে বলে সিংহ। তারপর পালেম্বারের রাজকুমার নিলা উতামা নতুন এই দ্বীপদেশের নাম রাখলেন সিংহপুরী; যা এখন সিঙ্গাপুর নামে পরিচিত।

করাত মাছের আক্রমণ

অনেক দিন আগে সিঙ্গাপুরে হঠাৎ করে করাত মাছের উৎপাত শুরু হলো। নাবিকেরা জাহাজ নিয়ে সাগরে গেলে করাত মাছ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত, সাগরতীরে কেউ নাইতে এলে মাছ সুচালো মুখ দিয়ে তাদের ক্ষতবিক্ষত করে ফেলত।

মাছের আক্রমণের কথা শুনে রাজা নিজের চোখে দেখতে এলেন। সাগরের পাড় তখন রক্তে লাল হয়ে আছে, মাছের আক্রমণে প্রাণ হারানো মানুষের স্বজনেরা আহাজারি করছে। রাজা সৈন্যদের হুকুম করলেন, জনগণকে রক্ষার জন্য তারা যেন ঢাল–তলোয়ার নিয়ে সাগরতীরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু করাত মাছের হাত থেকে সৈন্যরাও রেহাই পেল না।

তখন এক বালক বুদ্ধি দিল, সাগরতীরে সারিবদ্ধভাবে কলাগাছ পুঁতে রাখার জন্য, যাতে করাত মাছের মুখের সরু ফলা সেই কলাগাছে গেঁথে যায়। তারপর দুষ্টু মাছগুলোকে ইচ্ছেমতো শায়েস্তা করা যাবে। বালকের বুদ্ধিতে রাজা তো মুগ্ধ। তারপর রাজার আদেশে সাগরতীরে সারিবদ্ধভাবে কলাগাছ পুঁতে রাখা হলো। এরপর মাছগুলো মানুষকে আক্রমণ করতে এলে তাদের সুচালো মুখ আটকে গেল কলাগাছে। ওমনি তাদের বেদম পিটুনি দেওয়া হলো। অবশেষে সিঙ্গাপুরের লোকজন করাত মাছের হাত থেকে রক্ষা পেল।

তবে বালকের বুদ্ধি দেখে রাজা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। এত বুদ্ধিমান লোক ভবিষ্যতে তার জন্য হুমকি হতে পারে! তাই রাজা ছেলেটিকে হত্যার নির্দেশ দিলেন।

এক রাতে রাজার পাঠানো ঘাতক হাতে ছুরি নিয়ে চলে এল পাহাড়ের টিলার ওপর ছেলেটির ছোট্ট ঘরে। তারপর ঘুমন্ত বালকের বুকে বসিয়ে দিল ছুরির তীক্ষ্ণ ফলা।

মুহূর্তের মধ্যেই টিলার চারপাশ রক্তে লাল হয়ে গেল, সেই পাহাড় এখনো অবিকল লাল হয়ে আছে।