৩ জুন প্রথম আলোর শুক্রবারের ক্রোড়পত্র ‘অন্য আলো’তে আত্ম–উন্নয়নমূলক বইয়ের ‘উন্নয়ন রহস্য’ নামে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। কে এম রাকিব রচিত ওই লেখা আমি পড়েছি প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে। এরপর ওই লেখা প্রসঙ্গে দু–চার কথা বলার জন্যই এই লেখার অবতারণা।
পুরো লেখায় কে এম রাকিব আসলে আত্ম–উন্নয়নমূলক বইয়ের প্রশংসা করছেন নাকি অভিশংসন—এটা বুঝতে হলে আগে আমাদের পুরো লেখাটি ভালোভাবে পড়তে হবে। এখানে পশ্চিমের যেসব উদাহরণ তিনি দিয়েছেন, তাতে পাঠকদের এই ধারার বই পড়া নিয়ে প্রচ্ছন্নভাবে লেখকের অপছন্দ প্রথমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কারণ, লেখার শুরুতেই তিনি যখন জর্জ কার্লিনের ‘এই জনরার (আত্ম–উন্নয়নমূলক বইয়ের) পাঠকদের গুলি করে মেরে ফেলা উচিত’—এই মন্তব্য উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহার করেন, তখনই এ ধারার প্রতি তাঁর বিরাগ আর গোপন থাকে না। পরে দেশের আত্ম–উন্নয়নমূলক লেখকদের প্রতিও তাঁর বিরক্তি প্রকাশ পেয়েছে লেখার একদম শেষ দিকে।
দেশে নাকি কোনো মানসম্মত আত্ম–উন্নয়নমূলক বই লেখা হয়নি! এমনকি যেসব বই এখানে লেখা হয়, তা নাকি অনেকটা অনুবাদনির্ভর!
দেখুন, যে ছেলে বাংলাদেশের কোনো গ্রামে বড় হয়েছে, ভালোভাবে ইংরেজি পড়তে বা বলতে জানেন না, তাঁর কাছে ত্রিশ দিনে স্পোকেন ইংলিশ নামের বইটি সবচেয়ে প্রার্থিত। তিনি যদি ওই বই পড়ে উপকৃত হন, দশ শতাংশ ইংরেজি দক্ষতাও যদি তাঁর বৃদ্ধি পায়, তবে এটিকেই তাঁর ‘সেলফ ডেভেলপমেন্ট’ হিসেবে ধরে নিতে হবে। হ্যাঁ, এটিই তাঁর আত্ন–উন্নয়ন।
আমাদের এখানে এখনো করপোরেটের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব সংকট বা ‘লিডারশিপ ক্রাইসিস’ আছে। এখন ছেলেমেয়েরা যদি কোনো করপোরেট নেতার লেখা বই পড়ে করপোরেট নেতৃত্ব সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পান, তাতে তো লাভের পাল্লাই ভারী হয়, নাকি! কাজেই অঙ্ক, পদার্থবিজ্ঞান, সহজ ইংরেজি শিক্ষা, ক্যারিয়ার উন্নয়ন, নেতৃত্ব শিক্ষা প্রভৃতি বই যদি দেদার বিক্রি হয়, তাতে ক্ষতির কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে আত্ম–উন্নয়নমূলক বইয়ের প্রতি আমাদের নাক সিঁটকানো ভাবটি বন্ধ করতে হবে।
জনাব রাকিব তাঁর লেখায় আরেকটি গুরুতর অভিযোগ করেছেন যে আমাদের দেশে সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি বা অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারদের বই ‘যতটা না বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, তার চেয়ে অনেক বেশি রচয়িতাকেন্দ্রিক’।
এটা সত্য যে অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সাররা এখন বই লিখছেন। তবে প্রশ্ন হলো, তাঁদের বইয়ের বিষয়বস্তু যদি ‘ভালো’ না হতো, তাহলে কি ধারাবাহিকভাবে তাঁদের পাঠক থাকত? ধরে নিলাম, তারকাখ্যাতির জন্য কোনো পাঠক একজন সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি বা অনলাইন ইনফ্লুয়েন্সারের একটি বই কিনলেন।
পরে বই ভালো লাগার কারণেই তো তাঁরা এসব তারকার একাধিক বই কিনছেন, তা–ই না? বাংলাদেশে মুনির হাসান, চমক হাসান, ঝংকার মাহমুদ, মুনজারিন রশীদ, আয়মান সাদিকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রিটি লেখকেরা মৌলিক বিষয়বস্তু নিয়েই বই লিখছেন। আর সে কারণেই প্রতিবছর তাঁদের নতুন নতুন বই বের হচ্ছে এবং পুরোনো বইগুলোর নতুন মুদ্রণ প্রকাশ পাচ্ছে। এই বাস্তবতার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
তানভীর শাহরিয়ার রিমন
চট্টগ্রাম