তিনি ‘নির্জনতম কবি’। তাই অন্তর্মুখী, রাশভারী ও বেরসিক হিসেবে জীবনানন্দ দাশের একটা চিত্র আমাদের মনে গেঁথে আছে। তবে আদতে তিনি ছিলেন অন্য রকম মানুষ। সময়-সুযোগে নিজেকে মেলে ধরতেন, রসে টইম্বুরও ছিলেন বেশ। কিন্তু সবাই তাঁর সূক্ষ্ম ঠাট্টা-মশকরা ধরতে পারত না। জীবনানন্দের ভাই অশোকানন্দের লেখা থেকে তাঁর দাদার কৌতুকপ্রিয়তার সন্ধান মেলে।
জীবনানন্দ তখন দিল্লিতে গিয়েছিলেন অশোকানন্দের কাছে। সে সময় বাড়িতে কী এক অনুষ্ঠান চলছিল। অনেক লোকের সমাগম, বন্ধু-পরিজনসহ বাড়িভরা লোক। এ সময় বাথরুম নিয়ে তৈরি হলো সংকট। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে সকালবেলা সবাই এদিক-ওদিক করছে। এমন সময় নিজের ঘর থেকে চিৎকার করে ডাকলেন ভাই অশোকানন্দ, ‘তোমার বাথরুম খালি আছে কি?’ জীবনানন্দও কম যান না, বেশ মজা করে উত্তর দিলেন, ‘তা কী করে খালি হবে? দিল্লির মসনদ কি কখনো খালি হয়?’ এটা শুনে অশোকানন্দ হাসতে হাসতে কাহিল।
রসিক জীবনানন্দের আরেকটি মজার ঘটনা ঘটে হাওড়া গার্লস কলেজে অধ্যাপনা করার সময়। একদিন এক অধ্যাপকের বাড়িতে সবার সঙ্গে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছেন তিনি। তো সেই অধ্যাপক ছিলেন খুব রাশভারী, সবাইকে কড়া কড়া কথা শোনাতেন। মুখে হাসি ফুটতই না। তিনি অতিথিদের সবার জন্য চা-নাশতা নিয়ে এলেন। এরপর জীবনানন্দ যা করলেন, তাতে সবাই তো বটেই, রাশভারী ওই অধ্যাপকের মুখেও হাসির রেখা দেখা গেল। জীবনবাবু চায়ে চুমুক দিয়ে অধ্যাপককে বললেন, ‘চা-টা যদি আপনার কথার মতো কড়া হতো, তাহলেও উপভোগ্য হতো।’
এভাবেই মাঝেমধ্যে হাস্যরসের ফোয়ারা ছোটাতেন রূপসী বংলার কবি। এমনকি নিজের মাথায় চুল কম ছিল বলে নিজেকে ‘টাকমাথা’ বলতেও কসুর করেননি।
সূত্র: দেবকুমার বসু সম্পাদিত জীবনানন্দ স্মৃতি।
গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন