ভাবমূর্তির দিনগুলোতে যেভাবে লিখবেন

অলংকরণ: আরাফাত করিম

‘ভাবমূর্তি’ শব্দটি ছোট হতে পারে, তবে এর শক্তি কম নয়। দিন দিন এর আকার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতটাই যে যার বা যাদের ‘ভাব’ নিয়ে ‘মূর্তি’ তৈরির নকশা হচ্ছে, তাদের চেয়েও বৃহৎ আকার নিচ্ছে ‘ভাবমূর্তি’। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড় হওয়ার এ কালে তাই সাবধানে একটু রয়েসয়ে থাকতেই হবে।

আসলে আমরা এখন ভাবমূর্তির প্রবল প্রতাপের এই দিনগুলোতে কলম বা কি–বোর্ড হাতে নিয়েও কীভাবে নির্ঝঞ্ঝাটে দিনাতিপাত করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা করব। শুরুতে নিজের চারপাশ নিয়ে চিন্তা করুন, ভাবুন, দেখুন খুঁটিয়ে। যদি খালি চোখে অস্পষ্ট দেখেন, তবে ঠুলি পরুন। তাতে যদি আরও অস্পষ্ট দেখতে পান, বুঝবেন আপনি প্রাথমিকভাবে নিরাপদ অবস্থানে আছেন। আপনার আর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আবছা আবছা যা দেখতে পাচ্ছেন, তা নিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে লেখার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, এমনভাবে লিখবেন, যাতে নদীর দুই কূলে যেকোনো সময় ভিড়তে পারেন।

তবে ঠুলি ছাড়া যদি স্পষ্ট দেখেন এবং ঠুলি পরার পরও তাতে ব্যত্যয় না ঘটে, তবে আপনাকে চা-কফি খেয়ে ভাবতে হবে। বুঝতে হবে পরিস্থিতি কিছুটা জটিল। আপনাকে বিভিন্ন রঙের রোদচশমা পরা শুরু করতে হবে। মূল কথা, পাল্টাতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি। যেটা সাদা, সেটাকে কালো বা সবুজ রঙে দেখা শুরু করতে হবে। যদি কোনোভাবে দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে নিতে পারেন, তবে সবচেয়ে ভালো হয়। দেখুন, এ নিয়ে কিন্তু কিন্তু করার সুযোগ নেই। জীবনানন্দ দাশ তো কবেই বলে গেছেন, ‘…যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;...’। সুতরাং, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার অর্থই হলো আপনি উন্নতির পথে দৌড়ানো শুরু করে দিয়েছেন।

এবার মনকে বাগে আনার পন্থা নিয়ে ভাবা যেতে পারে। বিভিন্ন সময় নানা মনীষী জীবন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। সেসব থেকে নিজের সুবিধামতো উক্তি বাছাই করে তা অন্তরে ধারণ করার চেষ্টা করতে হবে। বোঝার সুবিধার্থে একটা উদাহরণ দিচ্ছি। উইলিয়াম শেক্​সপিয়ার বলেছেন, পৃথিবী একটা রঙ্গমঞ্চ আর আমরা সবাই সেই মঞ্চের অভিনেতা। বর্তমান সময়ে শেক্​সপিয়ারের এই বাণী যদি কাজে লাগাতে পারেন, তবে কেল্লা ফতে! কেউ আপনার পরিবর্তিত ভূমিকা নিয়ে অনুযোগ-অভিযোগ করলেই বলে দেবেন, ‘আমি এখন অভিনয় করছি, দয়া করে বিরক্ত করবেন না।’ এতেও না মানলে বলে দেবেন, আপনি পাগলের ভূমিকায় অভিনয় করছেন!

আবার এভাবেও ভাবতে পারেন যে জীবন একটা লম্বা রেসের মতো। এ দীর্ঘ যাত্রায় কাকে কখন প্রয়োজন হয়, বলা তো যায় না। এটাই কিন্তু জীবনের বাস্তবতা। আর বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া জীবনের অংশ। এভাবে দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিন। এতে যেকোনো সময় যে কারও পাশে দাঁড়াতে ও বসতে পারবেন। এরপর কাউকে না চটিয়ে, কারও ভাবমূর্তিতে কণামাত্র কলমের কালি না ছিটিয়ে লিখতে থাকুন অবিরত। আপনাকে আটকাবে কে?

এবার আসা যাক কলম, হাত ও আঙুলের বিষয়ে। ও হ্যাঁ হ্যাঁ, কি–বোর্ডের বিষয়টাও আলোচনায় আসা দরকার। কলমকে তো রাজ্যছাড়া করছে এই কি–বোর্ড। একে পাত্তা না দিলে চলে?

হাত নিয়ে দুশ্চিন্তার বেশি কিছু নেই। এ অনেকটা ‘অক্সিলারি ভার্ব’–এর মতো। মাথাকে যদি ‘সঠিক’ পথে নামাতে পারেন, তবে হাত এমনিতেই অনুগামী হবে। আর যদি দেখেন অযাচিতভাবে হাত ও আঙুল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, তবে দ্রুত হাসপাতালে যান এবং কনুই থেকে আঙুল পর্যন্ত প্লাস্টার করে ফেলুন। আখেরে আপনারই লাভ হবে। মাস কয়েক এভাবে হাত-আঙুল জোর করে সোজা রাখতে পারলে একসময় দেখবেন সেগুলো সত্যি সত্যি ‘সোজা’ হয়ে গেছে। আর জোরজবরদস্তি করতে হবে না।

কলম ও কি–বোর্ডের ক্ষেত্রে পদ্ধতি আরও সহজ। প্রয়োজনে কালিবিহীন কলমে লেখার অভ্যাস করুন। কাগজে লিখছেন ঠিকই, কিন্তু তা ফুটে উঠল না। এতে লেখার পরিশ্রমও হলো, আবার তাতে ক্ষতিও হলো না। দারুণ না? একইভাবে কি–বোর্ডের ক্ষেত্রে কম্পিউটারে সংযুক্ত করারই প্রয়োজন নেই, স্রেফ টাইপ করে যান।

অনেক পরামর্শ হলো। বিনা মূল্যে এর বেশি আর দেওয়া সম্ভব না। মোদ্দা কথা হলো, অভিযোজন সম্পর্কে বিশদভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বাংলা সিনেমার নায়িকা গৃহবধূদের মতো মানিয়ে নেওয়া শিখতে হবে, হতে হবে সহনশীল।

সুখ আপনার জীবনে আসবেই।