সদ্য নোবেলজয়ী লুইস গ্লুকের কবিতা

কোলাজ: মনিরুল ইসলাম
নোবেলজয়ী কবি লুইট গ্লুক সম্পর্কে কিছু তথ্য ও তাঁর দুটি কবিতার অনুবাদ দিয়ে সাজানো হয়েছে এই লেখা।

লুইস গ্লুক সম্পর্কে একটুকরো

আজকে কিছুক্ষণ আগেই সুইডিশ একাডেমি ঘোষণা করল সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম। ২০২০ সালে নোবেল জয় করলেন মার্কিন কবি লুইস গ্লুক। এই কবি তাঁর কবিতার সাবলীল আর ব্যতিক্রমী ভাষাশৈলী দিয়ে নিজেকে এমনভাবে প্রকাশ করেন, যা একাধারে হয়ে ওঠে স্থানিক ও বৈশ্বিক।

১৭৮৬ সালে একটি স্বাধীন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্য সুইডিশ একাডেমির সৃষ্টি হয়েছিল। এই একাডেমি ১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ১১২ বার এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। বিজয়ী হয়েছেন ১১৬ জন কবি ও সাহিত্যিক।

আজ ৮ অক্টোবরে আয়োজিত হলো ১১৩তম সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠান। অক্টোবর মাস কাছে এগিয়ে এলে প্রতিবছরই এ পুরস্কার নিয়ে সারা পৃথিবীর সাহিত্যামোদীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলতে থাকে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটে, এমন একটি নামের ঘোষণায় যে খানিকটা অবাকই হতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। কে পাচ্ছেন এবারের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার, এই প্রশ্নে যে সাহিত্যিকদের নাম এবার বিভিন্নভাবে আলোচনায় এসেছে অথবা যাঁদের নামে বাজি ধরা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে লুইস গ্লুকের নামটি ছিল না।

১৯৪৩ সালের ২২ এপ্রিল নিউইয়র্কে লুইস গ্লুকের জন্ম। বেড়ে উঠেছেন লং আইল্যান্ডে। বাবা ড্যানিয়েল গ্লুক আর মা বিয়েট্রেস গ্লুকের দুই মেয়ের মধ্যে তিনি বড়। শৈশবে অ্যানারেক্সিয়া নার্ভালসা রোগে ভুগেছিলেন অনেক দিন। এ জন্য বছর সাতেক থেরাপি নিতে হয়েছে তাঁকে। গর্ডার্ড কলেজে কিছুদিন কবিতা বিষয়ে শিক্ষকতা করার পর গ্লুক বর্তমানে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

লুইস গ্লুক তাঁর রচনায় যন্ত্রণা, আকাঙ্ক্ষা আর প্রকৃতি নিয়ে লিখেছেন। বিশেষ করে বিষণ্নতা আর একাকিত্ব নিয়ে প্রচুর কবিতা লিখেছেন তিনি। নাইন-ইলেভেনের মর্মান্তিক ঘটনা গ্লুককে খুবই প্রভাবিত করেছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনা তাঁকে জীবন গুটিয়ে ফেলার পরিবর্তে জীবনকে উদ্‌যাপন করতেই বেশি উৎসাহী করেছে। তাঁর রচনা ও ভাবনায় অনেক সময় পৌরাণিক ঘটনা আর ইতিহাসের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

লুইস গ্লুকের প্রাপ্তির ঝুলিতে আছে ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল, পুলিৎজার পুরস্কার, ন্যাশনাল বুক পুরস্কার। ২০০৩-০৪ সালে গ্লুক ছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রীয় কবি। এখানে থাকল অন্তর্জাল থেকে পাওয়া তাঁর দুটি কবিতার অনুবাদ।

‘প্রেসিডেন্টস ডে’

রোদ্দুরের এমন ঝিলিক
বরফগুলোও হিরের মতো জ্বলছে,
জীবন আলো-হাসি হাসছে আর
উষ্ণতায় ভরে আছে আমার সর্বস্ব।
কার ইঙ্গিতে এত আলো, এত হাসি
কে এই আনন্দের কারিগর!
কাঁধের ওপর দিয়ে বরফ ছুড়ে দিলাম
এরা সব আমারই থাকুক।
তবু মেঘ জমেছে কার্বনের মতো
ফিরে আসছে ভয়ংকর কালো
কোথায় হারাল আনন্দ আর আলো!
সূর্যের কাছে হাত পেতেছিলাম, শান্তির কাছেও
এই তো ছিল; এই নেই।
আনন্দ শব্দটা ধুলোজমা শব্দের মতো অতীতে হারাল...
অনেক দিন তাকে খুঁজে পাই না।

সুখ

দুজন শুয়ে আছে রাত্রির কোলে
সাদা বিছানার চাদরে শুয়ে আছে দুজন মানুষ।
ভোর খুব কাছে,
এইবার ওদের ঘুম ভাঙবে
মাথার কাছে লিলি জাগছে ফুলদানিতে
সূর্যের আলো ওদের পানপাত্রে তৈরি—
এখনই চুমুক দেবে।
পুরুষটি পাশ ফিরল, কোমল স্বরে ডাকল সঙ্গীকে
পর্দাটা দুলে উঠল, গেয়ে উঠল পাখিদল
নারীটি এবার পাশ ফিরল, আর তার সর্বাঙ্গ
তপ্ত হলো সঙ্গীর নিশ্বাসে।
চোখ খুললাম আমি...
সূর্যেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরময়
আমি তোমার মুখের দিকে তাকালাম,
আয়নায় দেখতে পেলাম আমাকেই।
আমরা স্থির; শুধু সূর্যটা আমাদের
যেতে থাকল পেরিয়ে, আলো ছড়াতে ছড়াতে।

অন্যআলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]