আমরা কেন কোনো ‘কেজরিওয়াল’ পাই না

অরবিন্দ কেজরিওয়াল

অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বড় সরকারি চাকরি ছেড়ে একসময় দুর্নীতিবিরোধী ও সামাজিক আন্দোলনে যোগ দেন। ২০১২ সালে নিজের রাজনৈতিক দল ‘আম আদমি পার্টি’ (আপ) গঠন করেন। পরের বছরেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়ে হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। নানা জটিলতায় পাঁচ বছরের পূর্ণ মেয়াদের আগেই ২০১৫-এ আবার নির্বাচনে আরও বড় জয় ছিনিয়ে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন তিনি। তার ঠিক পাঁচ বছর পরে ২০২০ সালের নির্বাচনে ফের জয়লাভ করে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে হ্যাট্রিকই করে বসেন।

এত দিন ধরে তিনি দিল্লিভিত্তিক আঞ্চলিক নেতা হিসাবেই বিবেচিত হয়ে আসছিলেন। যেমনটা পশ্চিমবঙ্গের তুখোড় শক্তিশালী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেজরিওয়ালেরই মতো যিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রিত্বের হ্যাট্রিক করেছেন গত বছরের বিধানসভা নির্বাচনে। এখানে কেজরিওয়ালের একক মাহাত্ম্য এক জায়গায়; আর কেজরিওয়াল ও মমতার যুগপৎ মাহাত্ম্য আবার আরেক জায়গায়; যে জায়গাটি আমাদের বাংলাদেশে তৈরি হলে সাধারণ জনগণ রাজনীতিতে এক ভিন্ন ধারা দেখতে পেত। দেশে যে ভিন্ন ধারার প্রচলন খুব জরুরিও। ধারাটি আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুষ্ট রাজনৈতিক ধারার ঠিক বিরোধী ধারা। যেখানে লুটপাট নয়, জনসেবাই হবে মুখ্য—ঠিক কেজরিওয়াল দিল্লিতে যা করতে পেরেছেন সাফল্যের সাথে।

কেজরিওয়াল তাঁর রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সরকারি পরিষেবা খাতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। তাঁর দিল্লিতে আজকে ইংলিশ মিডিয়ামের চেয়ে সরকারি বিদ্যালয় অভিমুখে শিক্ষার্থীদের লাইন দীর্ঘ। পড়াশোনার মানগুণে সেখানকার সরকারি স্কুলগুলো ইংলিশ মিডিয়ামগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্যসেবায় জনগণ শুধু প্রাথমিক স্তরেই নয়, বড় ও জটিল রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছে সরকারি খরচায়। এসব সাফল্যে সদ্যই তিনি ভারতের প্রথম কোনো আঞ্চলিক দল হিসাবে দ্বিতীয় কোনো রাজ্য জয় করলেন। এবার তাঁর তালুবন্দি হলো পাক-ভারত সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব রাজ্য। যে রাজ্যের ক্ষমতাসীন শতাব্দীপ্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেসকে আঁছড়ে মাটিতে ফেলেছে কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। ৭০ আসনের বিধানসভায় কংগ্রেস একরকম নিশ্চিহ্নই হয়ে গেছে ‘পুঁচকে’ আপের কাছে। এমনই অনেক কর্মসূচির সাফল্য দিয়ে আমাদের নিকটতম ভারতীয় প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে রাজত্ব করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

সবশেষে, কেজরিওয়াল একটা জায়গায় এককভাবে উঠে আসছেন হয়তো ভারতের রাজনীতিতে। সেটা হচ্ছে, কে জানে, ভারতের প্রচলিত দুই রাজনৈতিক পরাশক্তি কংগ্রেস ও বিজেপির লড়াইটা এবার বিজেপি-আপ-এ রূপ নেয় কি না! কেননা, কেজরিওয়াল ইতিমধ্যেই আঞ্চলিকতার তকমা ঝেরে ভারতের জাতীয় নেতা হয়ে উঠছেন। সে ক্ষেত্রে আসছে ভারতের ২০২৪ সালের সাধারণ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে—হোক সেটা এককভাবে কিংবা জোটগতভাবে—যদি আপ জিতে যায়, তবে প্রধানমন্ত্রী হবেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল! কয়েক বছর আগেও যিনি ছিলেন কেবলই একজন সরকারি চাকুরে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় এটা ভাবা যায়? যেখানে মানুষ বুঝে না-বুঝে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দ্বারা শাসিত হতে পছন্দ করে। নাগরিক নয়, বেঁচে থাকতে পছন্দ করে প্রজা হয়ে!

আব্দুল্লাহ্ আল হাদী

ব্যাংক কলোনি, সাভার