এত মৃত্যুর মিছিলের পর কতটুকু স্বাস্থ্যসচেতন আমরা

কথায় বলে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। বৈশ্বিক করোনা মহামারি যেন আমাদের আবারও বুঝিয়ে দিল, পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। এ মহামারিতে নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্য হাজারো মানুষের আর্তনাদ আমরা দেখেছি। কিন্তু স্বাস্থ্য বলতে আমরা কি শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যকেই বুঝি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ১৯৪৮ সালে ঘোষিত সংজ্ঞা অনুসারে, স্বাস্থ্য বলতে সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক মঙ্গল বা কল্যাণবোধকে বোঝায়। শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিকে স্বাস্থ্য বলে না। স্বাস্থ্য হচ্ছে শারীরিক, মানসিক ও সুস্থতার যোগফল, যেখানে রোগ ও অসুস্থতা অনুপস্থিত।

মানবসমাজে ব্যক্তির টিকে থাকা তাঁর স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। একটি সুস্থ–সবল দেহের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অতিজরুরি। সম্প্রতি গবেষকেরা স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায় একটি নতুনত্ব যোগ করেছেন। তাঁদের ভাষ্যমতে, স্বাস্থ্য হচ্ছে নতুন নতুন বাধা ও দুর্বলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে সুস্থভাবে জীবন যাপন করা।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অত্যধিক উন্নয়নের কারণে এখন শুধু নীরোগ থাকাকেই স্বাস্থ্য বলে না। সব প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সুন্দরভাবে শরীর ও মন পরিচালনা করাকে স্বাস্থ্য বলে। অতএব, স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যকেই বোঝায়। এ দুই ধরনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অতিজরুরি।
শারীরিক স্বাস্থ্য বলতে মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে পায়ের পাতা পর্যন্ত, অর্থাৎ শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নিজস্ব নিয়মে কাজ করাকে বোঝায়। প্রতিটি কাজ সুস্থভাবে সম্পন্ন করার জন্য শারীরিকভাবে সবল ও কর্মক্ষম থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন করে তাঁর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। কারণ, এটা শুধু তাঁর নীরোগ থাকা নয়, বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত ঘুম, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও শারীরিক ব্যায়ামের যোগফল। এ ছাড়া পরিবেশগত, জৈবিক, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক উপাদানগুলোও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত অনুশীলন ও স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারে এবং রোগপ্রতিরোধে জয়ী হতে পারে। শারীরিক সুস্থতার ওপর মানুষের দৈহিক গঠন নির্ভর করে। শারীরিকভাবে সুস্থ ব্যক্তির বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানসিক সুস্থতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে একটি ভালোর অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি তাঁর নিজস্ব দক্ষতা উপলব্ধি করে, জীবনের স্বাভাবিক চাপকে মোকাবিলা করতে পারে, উৎপাদনশীল ও ফলদায়কভাবে কাজ করতে পারে।

একজন ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য তাঁর শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতা শারীরিক স্বাস্থ্যের অসুস্থতার মতোই বাস্তব। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণেই তরুণ সমাজ আত্মহননের মতো পথ বেছে নেয়। অকালে ঝরে যায় অসংখ্য তাজা প্রাণ। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম, ইতিবাচক মনোভাব তৈরি, নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, কানেকটিভিটি বাড়ানোর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা যায়। মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। সব সময় হাসিখুশি থাকা এবং নিজের অবস্থানে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।

আমাদের জীবন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্য। এই স্বাস্থ্যবিষয়ক জনসচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছর ৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। যার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করার মাধ্যমে যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী করে তোলা। অনেক তো মৃত্যুর মিছিল দেখলাম এই মহামারিতে, আসুন আমরা এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, সচেতন হই। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করাই। অন্যথায় পৃথিবীতে এমন দিন আসতে খুব বেশি দেরি নেই, যে দিন ডাইনোসরের মতো মানুষের অস্তিত্বও সংকটের মুখে পড়বে।

রাজিয়া আক্তার রিমু
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়