খেলার মাঠ দখলের পাঁয়তারা

রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত মফস্বল শহর পর্যন্ত খেলার মাঠগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে মাঠগুলোকে জড়িয়ে থাকা উচ্ছল শৈশব ও তারুণ্যের উদ্যম।

একদিকে ডিজিটাল যুগে স্ক্রিনমুখী হয়ে ওঠা শিশু–কিশোর ও তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই, অন্যদিকে চোখের সামনে একের পর এক মাঠগুলো নানাভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে। বরগুনা শহরে ৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি খেলার মাঠ নিয়ে এমন উদ্বেগ দেখা গেল। মহামারিতে লকডাউনের আড়ালে মাঠ নষ্ট করে করা হচ্ছে বৃক্ষরোপণ। বনায়নের জন্য বিকল্প জায়গা থাকলেও মাঠটির ওপরই চোখ পড়েছে বিবেচনাহীন কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে পরিবেশসচেতন ও ক্রীড়ামোদী স্থানীয় মহলের মধ্যে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সংলগ্ন কলোনির বড় খেলার মাঠটিতে বনায়নের কাজ শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার ফটক বন্ধ করে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি খোঁড়া শুরু করে পাউবো। রীতিমতো গোপনে মাঠটি ধ্বংসের কাজে নামে তারা, তা–ও গাছ লাগানোর নামে। অথচ এ মাঠে একসময় জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হতো। শহরের কয়েকটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে পাউবোর মাঠটি ঘিরে।

স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠক ও পরিবেশবাদীরা খেলার মাঠে বনায়নকে ‘আত্মঘাতী’ বলে উল্লেখ করেছেন। তঁাদের মতে, পাউবোর এমন কর্মকাণ্ড খেলাধুলার চর্চাকে সংকুচিত করার শামিল। মাঠটিতেই যে গাছ লাগাতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। বনায়নের জন্য চাইলে জেলায় পাউবোর ৯০০ কিলোমিটার বাঁধকে কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু সেটি না করে পাউবো কেন খেলার মাঠটিকে ক্ষতবিক্ষত করছে, তা বুঝে আসছে না। স্থানীয় ব্যক্তিরা মনে করছেন, এমন জনবিরোধী কর্মকাণ্ডে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। যদিও বখাটে ও মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য কমাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদের দাবি। আমাদের কথা হচ্ছে, কলোনির নিরাপত্তার সমাধান কি অন্য কোনোভাবে করা যায় না?

২০১৪ সালে হাইকোর্টের এক শুনানিতে দেশের সব খাল, খেলার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। বরগুনায় খেলার মাঠটিতে পাউবোর এমন উদ্যোগে আদালতের নির্দেশনাকেই কি উপেক্ষা করা হচ্ছে না? মাঠ রক্ষায় স্থানীয়রা সচেতন হলে বনায়ন কাজ আপাতত বন্ধ রেখেছে পাউবো। এদিকে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেছেন, মাঠ কাটা বন্ধের জন্য পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। তঁার মতে, খেলার মাঠ কিছুতেই নষ্ট করা যাবে না। এখন তিনি কী পদক্ষেপ নেন, সেটাই দেখার বিষয়।